ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রকৃতি ও পরিবেশ

সুমাইয়া রাত্রী রিয়া
🕐 ৮:০০ অপরাহ্ণ, জুন ০৭, ২০২০

মানবসভ্যতার একাত্মতা হচ্ছে এই ধরার প্রকৃতি। প্রকৃতি ও০ মানুষ উভয়ই উভয়ের পরিপূরক। প্রকৃতি ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না তেমনি মানুষ ছাড়াও প্রকৃতি বাঁচে না। পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে প্রকৃতি ও মানুষের একাত্মতা। প্রকৃতিকে যখন মানুষ আপন করে নেয় তখনই মানুষ প্রকৃতির অত্যন্ত নিকট আত্মীয় হয়ে যায়। 

তবে প্রকৃতি যতটা শান্ত নিবিড় ও নিঃস্বার্থ মানুষ তার এক টুকরোও না। যখনি মানুষ প্রকৃতির ধ্বংসলীলায় মাতে, বৃক্ষনাশ করে, নদী-সমুদ্রকে দূষণ করে তখন সে সরে যায় প্রকৃতি থেকে অনেক দূরে। মানুষ নিজেই মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে, সঙ্গে পৃথিবীরও। প্রকৃতিকে ভালোবাসার অর্থ নিজেকেও ভালোবাসা।

ক্ষেত, নদী, বন, পাহাড় প্রভৃতি মানুষের কল্যাণে। প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ যেমন পাহাড়ের ঝর্ণাধারা, সমুদ্রের ঢেউ, বনরাজির সবুজ, মানুষের জীবনে অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। বিভিন্ন ঋতুকালীন গাছগাছালি থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন প্রকারের ফল ফুল মানুষ পায়।

দৃষ্টিনন্দন ফুল যার সুরভিতে মানুষের প্রাণ ভরে যায়। প্রকৃতির এরকম বিভিন্ন রূপ নিয়ে কবি-লেখকের কত কল্পনা। অনেক কবি-লেখকের লেখায় ধ্বনিত হয়েছে সেই প্রকৃতির রূপরেখা। প্রকৃতির আকাশ বাতাস জলে আনন্দে কত সুন্দর পক্ষীকুল ভেসে বেড়ায়, চরে বেড়ায় নিজস্ব তরঙ্গে। আমাদের বাংলা নদীমাতৃক দেশ। জীবিকার জন্য অনেক মানুষ বেছে নেন নৌকাজীবন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পদ্মানদীর বোটে বসেই লিখেছিলেন ‘সোনার তরী’।

সুন্দরবনকে পৃথিবীর বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ বলা হয়। এখানকার প্রকৃতির দান নানা বৃক্ষ ও উদ্ভিদে ভরা। রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমাদের অহংকার। গাঙ্গেয় মোহনার দ্বীপাঞ্চলের বনভূমি হচ্ছে এই সুন্দরবন। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে প্রতি বছরই অসংখ্য পর্যটক যান সেখানে। দিগন্ত-বিস্তৃত পাহাড়, সমুদ্রের অফুরন্ত জলরাশি প্রকৃতির অপরূপ দান। কখনও কখনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভারসাম্য হারায়।

প্রাকৃতিক তা-বলীলা ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, হ্যারিকেন, বন্যা, ভূমিকম্প, উপকূলীয় ভাঙন ইত্যাদির মাধ্যমে প্রাকৃতিক-বিপর্যয় যেমন মনুষ্য-জীবনহানি, পশুপাখির প্রাণনাশ, ঘর-বাড়ি ধ্বংস, ফসল ও সম্পত্তি নষ্ট ইত্যাদি মানবজাতির সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের গতি স্তব্ধ করে দেয়। তেমনই প্রকৃতিও বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। আবার মনুষ্যসৃষ্ট বা সামাজিকভাবে সৃষ্ট যুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধ কিংবা পারমাণবিক যুদ্ধ ইত্যাদি এবং বিভিন্ন প্রাণী থেকে মনুষ্যদেহে সংক্রমিত ভাইরাসজনিত রোগের বিপর্যয়ে মানবজাতির জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

এতে প্রকৃতিও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পূর্ণভাবে প্রতিহত করা সম্ভব নয়। মানুষকে এধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতেই হবে এবং যথাসম্ভব প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত প্রতিটি মানুষের জীবন, প্রাণী ও পক্ষীকুলের জীবন। প্রকৃতিকে ভালোবাসার অর্থ নিজেকেই ভালোবাসা। প্রকৃতি না থাকলে মনুষ্য-জীবন, পশুপাখির জীবন সংকটে পড়বে। প্রকৃতির সবকিছু আহরণ করেই পৃথিবীর জীবকুলের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলতে হয়। তাই আমাদের উচিত প্রকৃতির প্রতি যত্নবান হওয়া, তাকে বাঁচিয়ে রাখা। প্রকৃতি ভালোভাবে বাঁচলে আমরা তার স্বাদ নিতে পারব, বেঁচে থাকতে পারব পরিপূর্ণভাবে।

সুমাইয়া রাত্রী রিয়া : শিক্ষার্থী, শিবগঞ্জ, বগুড়া

 
Electronic Paper