শিক্ষা মন্ত্রণালয়-প্রশাসন ক্যাডারে ঠাণ্ডা লড়াই
তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ০৪, ২০২০
মাদ্রাসা শিক্ষক নিয়োগ প্রতিনিধি হিসেবে কে থাকবেন- এটা নিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নেমেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন ক্যাডার। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগে মাদ্রাসা অধিদফতরের (অতিরিক্ত সচিব, পোস্টাল ক্যাডার) মহাপরিচালককে বদলি করা হলেও দুই মাসেও রিলিজ দেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয়, নতুন ডিজি যোগদানের জন্য আবেদন করছেন, সেটি গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঠা-া লড়াই চলছে।
এরই মধ্যে শিক্ষক নিয়োগ, এমপিওভুক্তি এবং কেনাকাটায় মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) সফিউদ্দিনসহ তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে শত কোটি দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে গত ২১ মে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিবকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে চাকরি শেষ সময়ে এসে নিজের দুর্নীতি ঢাকতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের তদবির করে স্বপদে বহাল আছেন মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালক। সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে জনপ্রশাসনের চিঠিতে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত মাদ্রাসা অধিদফতরের ডিজি সফিউদ্দিন, উপ-পরিচালক উপ-পরিচালক (অর্থ) মো. শাসছুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক আব্দুল মুকিতের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ, এমপিওকরণসহ নানাবিধ অনিয়মের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ আসে। সেটি আমলে নিয়ে জনপ্রশাসনের শৃঙ্খলা শাখা থেকে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. নূরুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা অফিদফতরের ডিজির ছত্রছায়ায় উপ-পরিচালক (অর্থ) ও সহকারী পরিচালক আব্দুল মুকিতের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ, এমপিওকরণসহ নানাবিধ অনিয়মের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মোহাম্মদ ফয়জুল ইসলাম।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিসহ মাদ্রাসা অধিদফতরের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটিতে কাকে রাখা হয়েছে তা জানা যায়নি। তদন্তের বিষয়ে জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসা অধিদফতরের ডিজি সফিউদ্দিন বলেন, শুধু আমাকে না, মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে মন্ত্রীকে প্রচুর টাকা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী আসামি হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ ধরণের অভিযোগের বিরুদ্ধে সচিবকে তদন্ত করার নির্দেশ দিতে পারে না। কারণ, মন্ত্রী ইনভলব আছে। মন্ত্রী জানলে তো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। এটি একটি সাজানো অভিযোগ। তিনি দাবি করেন, আমার অফিসে একটা দুর্নীতি নেই।
জানা গেছে, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ডিজি’র প্রতিনিধি রাখা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাদ্রাসা অধিদফতরের সঙ্গে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে প্রশাসন ক্যাডারের। মাদ্রাসায় নিয়োগ কমিটিতে অধিদফতরের প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে ডিসি-ইউএনও প্রতিনিধিরা থাকবেন এমন অর্ডার হওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা বাতিল করে। এরপর প্রায় ৪০ জন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) নানা যুক্তি তুলে ধরে তা পূর্নবহাল করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দেয়। এরপর থেকে দুই ক্যাডারের মধ্যে এক ধরনের ঠা-া লড়াই চলছে।
জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ মোহাম্মদ ফয়জুল ইসলাম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, বিসিএস পোস্টাল ক্যাডারের কর্মকর্তা সফিউদ্দিন মাদ্রাসা অধিদফতরের ডিজির দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে। তার সহযোগী হিসেবে আছে উপ-পরিচালক শামছুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক আব্দুল মুকিত।
অভিযোগে বলা হয়েছে, পাঁচ বছর আগে অধিদফতরে প্রেষণে পোস্টিং বাগিয়ে নেন উপ-পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ শামছুজ্জামান। সহকারী পরিচালক হিসেবে পদায়ন নেন আব্দুল মুকিত। তারা দু’জনই ছাত্রজীবনে বর্তমান বিরোধী দলের একটি ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন। তারা অধিদফতরে যোগদানের পর থেকেই শিক্ষক নিয়োগ, এমপিওকরণসহ নানাবিধ অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। তারা একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।