ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি শিল্পে ধস

সেখ সাকির হোসেন, বাগেরহাট
🕐 ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ০৩, ২০২০

সাদাসোনা খ্যাত বাগেরহাটসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে চিংড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক লাখ চাষী, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। চিংড়ি শিল্প অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব।

চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি বছরে চিংড়ি উৎপাদনের মৌসুম শুরুর তিন মাস আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে আবহাওয়াজনিত কারণে এক রাতেই প্রায় ৫০ কোটি টাকার গলদা চিংড়ি মারা যায়। এর কয়েক দিন পরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানে চিংড়ি শিল্পে। এরই রেশ কাটতে না কাটতেই বছরের শুরুতে করোনা ভাইরাসে উৎপাদিত চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপক লোকসানে পড়ে চাষি ও ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে নতুন করে ঘেরে চিংড়ির পোনা ছাড়তে না পারায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন চাষীরা। ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। করোনার কারণে সব সেক্টরের সঙ্গে চিংড়ি সেক্টরও হুমকির মুখে পড়েছে। 

মৎস্য চাষী ফখরুল ইসলাম বলেন, চিংড়ি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু এ বছর যখন চিংড়ি মাছ বিক্রির সময় তখনই করোনার প্রভাবে মাছ ক্রয় বন্ধ রয়েছে। আবার ঘেরে পোনা ছাড়ারও সময় এসেছে। এখন পানিও নেই। ঘেরের বিক্রি উপযুক্ত মাছের দাম নেই, পোনার দাম আকাশচুম্বী। কি যে হবে আমাদের।

চিংড়ি ব্যবসায়ী লিটন পরামানিক বলেন, করোনার প্রভাবে বিদেশে মাছ রপ্তানি বন্ধ। দেশের বাজারেও মাছের তেমন ক্রেতা নেই। কারণ বাগেরহাট থেকে অন্য কোথাও মাছ পাঠানোর সুব্যবস্থা নেই বর্তমানে। আমরা এক ধরনের বেকার অবস্থায় রয়েছি।

অতিদ্রুত দেশ ও বিদেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমাদের না খেয়েই মরতে হবে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের চিংড়ি চাষী মো. মহিবুল্লাহ মিন্টু বলেন, আমার ১২শ বিঘা জমির ৩টি ঘেরে গেল বছর প্রায় ৯০ লাখ বাগদার পোনা ছেড়েছিলাম। এ বছর মাত্র ১৫ লাখ পোনা ছাড়া হয়েছে। এবার পোনা সংকটের কারণে গত বছরের তুলনায় হাজার প্রতি ৬শ টাকা বেশি দিয়ে পোনা কিনতে হচ্ছে। যার ফলে চাহিদা অনুযায়ী পোনা ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে কম মূল্যে বাগদা চিংড়ি বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, গেল দুই-তিন বছর বৈরি আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জেলায় মোট চিংড়ির উৎপাদন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে। বর্তমানে কোভিড-১৯ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মত দেখা দিয়েছে চাষীদের কাছে। এরই মধ্যে আম্পান ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় প্রায় আড়াই থেকে তিনশ কোটি বাগদার পোনা ও দেড় থেকে দুই কোটি গলদা চিংড়ি পোনার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এবছর নানা কারণে তিন ভাগের একভাগ পোনাও পাওয়া যাচ্ছে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে খুলনা বিভাগের ছয়টি জেলার ১৯৭টি ইউনিয়নের শুধু মৎস্য খাতেই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৪ কোটি টাকার মাছ, ১৮৮ কোটি টাকার চিংড়ি, ৩ কোটি টাকার মাছের পোনা, ১৬ কোটি টাকার চিংড়ি পোনা (পিএল), প্রায় ২ কোটি টাকার কুঁচিয়া ও কাঁকড়া এবং ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট ক্ষতি ২৮৪ কোটি টাকার মধ্যে খুলনায় ৯৭ কোটি টাকা, বাগেরহাটে ৬ কোটি, সাতক্ষীরায় ১৭৬ কোটি, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গায় আড়াই কোটি টাকা করে এবং মাগুরায় ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে ৪ হাজার ৬৩৫টি মাছের ঘের। এর আগে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে চিংড়ি শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। তবে চিংড়ি চাষিদের সনাতন পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আধুনিক চিংড়ি চাষে যুক্ত হতে হবে। এছাড় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। চাষিদের সহজ শর্তে লোনের ব্যবস্থা পাশাপাশি বীমার আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলাকে চিংড়ি শিল্পের জন্য সরকারের বিশেষ সুবিধার আওতায় আনতে হবে। আমরা আশা করছি করোনা-পরবর্তী সময়ে মৎস্য সেক্টর একটি বড় সম্ভাবনার খাতে পরিণত হবে

 
Electronic Paper