বদলির কারণে তীরে এসে তরী ডোবার শংকা
হেলাল উদ্দিন, বরিশাল
🕐 ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ০২, ২০২০
বরিশালে তৈরি হচ্ছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ডিভাইস। গবেষণার কাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গবেষণা করছেন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. এইচ এম মাসুম বিল্লাহ।
গবেষণা কাজের শেষ পর্যায়ে এসে হোঁচট খেয়েছেন তিনি। ১৭ মে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের অনুকূলে ৫০ হাজার টাকা গবেষণা ফি পরিশোধ করার পরের দিনই ভোলা জেনারেল হাসপাতালে বদলি করা হয় তাকে। কিন্তু গবেষণা কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো সুযোগ-সুবিধা (ল্যাব) ও অনুকূল পরিবেশ ওই হাসপাতালে না থাকায় তীরে এসে তরী ডোবার অবস্থা তৈরি হয়েছে তার।
এই বদলির খবরে বিস্মিত হয়েছেন বরিশালের চিকিৎসক ও সুশীল সমাজ। অবশ্য বদলি পরবর্তী বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে আসার পর বদলি আদেশ প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. হাবিবুর রহমান খান। তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ডা. এইচ এম মাসুম বিল্লাহকে গত ১৭ মে জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) পদে চলতি দায়িত্ব দিয়ে ভোলা জেলা হাসপাতালে বদলি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১৯ মে পূর্বাহ্নের মধ্যে তাকে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই তার গবেষণার বিষয়টি সামনে চলে আসে। কারণ, ভোলায় গবেষণার সুযোগ না থাকায় কাজটি থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়। পুরো বিষয়টি তিনি স্বাস্থ্য সচিবকে অবহিত করেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, ভোলা জেলা হাসপাতালে কোন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ না থাকায় তাকে স্বাভাবিক নিয়মে বদলি করা হয়। এর পরই গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তার গবেষণার বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। যেহেতু ওই চিকিৎসক করোনা প্রতিরোধী বিষয় নিয়ে কাজ করছেন, মন্ত্রণালয় তাকে অবশ্যই সুযোগ দেবে। আমরা তার বিকল্প খুঁজছি। কাউকে পেলেই তার বদলি আদেশ প্রত্যাহার করে পূর্বের স্থানেই বহাল করা হবে। খুব দ্রুত সেটা হয়ে যাবে বলে আশা করি।
বদলি আদেশ প্রত্যাহার হবে- এমন খবর শুনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ডা. এইচ এম মাসুম বিল্লাহ। তিনি বলেন, বদলি আদেশ প্রত্যাহার করে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিলে আমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস শুরুর পর থেকেই রোস্টারের ভিত্তিতে তাকে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি একটি ডিভাইস তেরির গবেষণা করতে শুরু করেন। তার গবেষণা অনুযায়ী এ ডিভাইস ব্যবহারে করোনা আক্রান্ত রোগীর নিঃশ্বাসে নির্গত করোনা ভাইরাস ও জীবাণু ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে করোনা রোগী থেকে অন্যের আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ তার প্রোটকল রিসিভ করে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেছে। গত ১৪ মে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ থেকে ইথিক্যাল অ্যাপ্রোভালের অনুমোদনসহ অর্থ পাঠানোর চিঠি পেয়ে তার কাজের গতি আরও বেড়ে যায়। সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের অনুকূলে নিয়ম মাফিক ১৭ মে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা প্রেরণ করেন তিনি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, মাসুমের বদলির খবর আমাদের সবাইকে হতবাক করেছে। আশা করছি মন্ত্রণালয় তার গবেষনা কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিবে।
বরিশাল জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. ইসতিয়াক হোসেন বলেন, তার গবেষণা কাজ অবশ্যই প্রশংসা ও প্রত্যাশার দাবি রাখে। এ কাজে তিনি সফল হলে শুধু বরিশাল নয়, সারা দেশ উপকৃত হবে। তার বদলির খবর আমাদের হতবাক করেছে। মন্ত্রণালয়সহ সবার উচিত তাকে এ কাজে সব ধরনের সহযোগিতা করা।