ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এমন প্রলয় দেখেননি যশোরের প্রবীণরা

বি এম ফারুক, যশোর
🕐 ৮:১১ পূর্বাহ্ণ, মে ৩১, ২০২০

‘প্রলয়ে’ যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১২ জনের প্রাণহানির ঘটেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন মণিরামপুরে পাঁচ ও শার্শায় চার, চৌগাছায় দুই, বাঘারপাড়ায় একজন। গাছপালা উপড়ে গেছে হাজার হাজার। ফসলের ক্ষতি হয়েছে অপূরণীয়।

সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’ সাগর ছেড়ে স্থলভাগে উঠে আসার পরপরই যশোরে শুরু হয় ঝড়োহাওয়া। এরপর সময় যত গড়িয়েছে বাতাসের দাপট তত বেড়েছে। মধ্যরাত নাগাদ বাতাসের গতি বেড়ে দেড়শ’ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। জীবদ্দশাতে এমন ঝড় দেখেননি এখানকার প্রবীণরাও।

সুন্দরবন ঘেঁষে সাতক্ষীরা ও যশোর হয়ে ক্রমে উত্তরের দিকে যেতে শুরু করে আম্পান। এর আগে আম্পানের প্রভাবে সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ যশোরে বৃষ্টি শুরু হয়। সময় যতো বাড়তে থাকে বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসের তীব্রতাও বাড়তে থাকে। সঙ্গে চলতে থাকে বৃষ্টি। রাত দশটার দিকে ঝড়ের তীব্রতা বাড়ে অনেকটাই।

যশোর বিমানঘাঁটিতে অবস্থিত আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানা যায়, রাত ১০টায় যশোরে ঝড়ের গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১০৪ কিলোমিটার। রাত ১২টায় তা বেড়ে ১৩৫ কিলোমিটারে পৌঁছায়। রাত পৌনে ২টায় নাগাদ বাতাসের গতিবেগ স্তিমিত হতে থাকে। কিন্তু রেশ থেকে যায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত।

আবহাওয়া অফিস বলছে, বুধবার বিকেল ৫টায় সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে আম্পান। এরপর সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা হয়ে নড়াইল, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ পাড়ি দিয়ে জামালপুর হয়ে দুর্বল আম্পান পাড়ি জমায় ভারতভূমে। এতো দীর্ঘস্থায়ী ঝড় এর আগে দেখেননি যশোরের মানুষ। দশ ঘণ্টাব্যাপী বয়ে যাওয়া ঝড়ের কারণে কার্যত ল-ভ- হয়ে যায় গোটা জেলা।

হাজার হাজার গাছপালা ভেঙে পড়েছে। গাছ চাপা পড়ে ১২ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের বিশেষ শাখার হিসেব অনুযায়ী নিহতরা হলেন, মণিরামপুর উপজেলার পারখাজুরা গ্রামের খোকন দাস (৭০), তার স্ত্রী বিজন দাস (৬০), ওয়াজেদ আলী (৫০), তার ছেলে ইসা (১৫) ও আছিয়া বেগম (৭০), শার্শা উপজেলার গোগা গ্রামের ময়না বেগম, সামটা জামতলার মুক্তার আলী (৬৫), মহিপুড়া গ্রামের মিজানুর রহমান (৬০) ও মালোপাড়ার গোপালচন্দ্র বিশ্বাস, চৌগাছার চাঁদপুর গ্রামের ক্ষ্যান্ত বেগম (৪৫), তার মেয়ে রাবেয়া খাতুন (১৩) এবং বাঘারপাড়ার বোধপুর গ্রামের ডলি বেগম (৪৮)। ঘর বা গাছ চাপা পড়ে আহত হয়েছেন বহু মানুষ। ডিস্ট্রিক্ট ইন্টেলিজেন্স অফিসার (ডিআইও-১) এম মসিউর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. আকতারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘস্থায়ী ঝড়ের কারণে যশোরে ফসলের ক্ষতি বেশি হয়েছে। ক্ষতি হওয়া ফসলের মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ৭৮৩ হেক্টর জমির পাট, ১১ হাজার ৭৪৮ হেক্টর জমির সবজি। যা মোট আবাদের ৮০ শতাংশ। এছাড়া ৭৫০ হেক্টর জমির পেঁপে, দেড় হাজার হেক্টর জমির কলা, ৬৭৫ হেক্টর জমির মরিচ, এক হাজার ৪৫ হেক্টর জমির মুলা, তিন হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমির আম, ৬০০ হেক্টর জমির লিচু এবং এক হাজার হেক্টর জমির পানের বরজ ক্ষতির মুখে পড়েছে। মাঠে থাকা ফসল ও ফলের ৭০ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ঝড়ের সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে যশোরের কেশবপুর, মণিরামপুরের নিম্নাঞ্চলের কিছু ঘের ও পুকুর ভেসে ক্ষতি হয়েছে। তবে অন্যান্য এলাকায় মাছের তেমন ক্ষতি হয়নি।

জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, ‘ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। কাজ চলছে। তবে মানুষ মারা গেছেন। ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাঠে থাকা ফসল নষ্ট হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে।

 
Electronic Paper