ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দীর্ঘদিন পর খুলল সব চরম আতঙ্ক জনমনে

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০২০

দেশে দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে করোনা পরিস্থিতি। এর মধ্যেই মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে খুলে দেওয়া হলো দেশের সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আগামীকাল রোববার থেকে চলাচল করবে গণপরিবহনও। স্বাস্থবিধি না মেনেই গ্রাম ছাড়ছেন ঢাকায় কাজ করা মানুষ। ফলে করোনাভাইরাসের চরম আতঙ্কের মধ্য দিয়েই সামনের দিনগুলো চলতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এক্ষেত্রে নিজ নিজ জায়গা থেকে সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিদিনই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুও বাড়ছে। এর মধ্যেই সব খুলে দেওয়া হলো। এখন কয়েকগুণ বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে।

গত কয়েক দিন ধরে কমবেশি ২০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার সংক্রমিত হন ২ হাজার ৫২৩ জন। একই সময়ে মারা গেছেন ২৩ জন। আগের দিনের তুলনায় করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। সংক্রমণের এমন পরিস্থিতিতে সরকার সাধারণ ছুটি আর না বাড়িয়ে সবকিছু সীমিত আকারে খুলে দিয়েছে। সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর আগামী ৩১ মে রোববার থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত চলাচল  সীমিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আরোপ করেছে বেশ কিছু বিধিনিষেধও।

গত বুধবার ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নিযেধাজ্ঞাকালে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। তবে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। আদেশে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে শর্তসাপেক্ষে দেশের সার্বিক কার্যাবলি এবং জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ/সীমিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। ৫, ৬, ১২ ও ১৩ জুনের সাপ্তাহিক ছুটি এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

অফিস আদেশে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে স্বল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। তবে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৩ মার্চ সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে দ্বিতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত, তৃতীয় দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ও চতৃর্থ দফায় ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বর্ধিত করা হয়। এরপরও পরিস্থিতির উন্নত না হওয়ায় পঞ্চম দফায় ১৬ মে এবং সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি বৃদ্ধি করে সরকার। ২৫ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জরুরি পরিষেবা প্রদানের সঙ্গে জড়িত সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং তাদের অধীনস্থ অফিসগুলো বর্ধিত সাধারণ ছুটির দিনে সীমিত আকারে খোলা থাকবে। সর্বশেষ গত ১৪ মে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ১৭ মে থেকে যে সাধারণ ছুটি, শবে কদরের ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি এবং ঈদের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, এখনো তা চলছে। সেই ছুটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩০ মে। করোনার সংক্রমণ রোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রেল, সড়ক, নৌ ও বিমান যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে সরকার।

এদিকে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সংক্রমণ পরিস্থিতির এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জরুরি প্রয়োজনীয় কাজের পরিসর আরও বাড়ানো যেত। কিন্তু সবকিছু উন্মুক্ত করে দেওয়ার ফলে বিপদের ঝুঁকি আরও বাড়বে। যেহেতু খুলেই দেওয়া হচ্ছে, সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে। এগুলো ঠিকমতো মানা হচ্ছে কিনা, তা অফিসের ভেতরে-বাইরে থেকে তদারক করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের করা ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণের (প্রজেকশন বা পূর্বাভাস) তথ্য বলছে, ৩১ মে পর্যন্ত ৪৮ থেকে ৫০ হাজার মানুষ সংক্রমিত হতে পারেন। মারা যেতে পারেন ৮০০ থেকে এক হাজার মানুষ। এ পর্যন্ত এ পূর্বাভাসের কাছাকাছি দেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি।

 
Electronic Paper