ঈদের আগে ফিতরা আদায় জরুরি
মাহমুদ আহমদ
🕐 ৯:০৮ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২০
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছায় আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করব। যদিও এবার বিশ্বময় মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সেভাবে হয়তো ঈদ উদযাপন করা সম্ভব হবে না যেভাবে মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর উদযাপন করে থাকেন। তবে ঈদুল ফিতর উদযাপনের আগে আমাদের যাদের জন্য ফিতরা দেওয়া আবশ্যক সবাইকে অবশ্যই ফিতরা আদায় করতে হবে।
আমাদের ফিতরা যদি এখনই আদায় করি তাহলে তা ঈদের আগেই সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের ক্ষেত্রে সহজতর হবে এবং গরিবদের ঈদ আনন্দে কাজে লাগবে। ফিতরা জনপ্রতি এক সা নির্ধারণ করা হয়। হাদিসে এসেছে হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জমানায় আমরা সাদকাতুল ফিতর দিতাম এক সা (তিন কেজি ৩০০ গ্রাম) খাদ্যবস্তু।
তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল- যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। বুখারি)। ঈদুল ফিতরের ফিতরা প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব এমনকি ঈদের দিন সূর্য উদয়ের আগে ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্যও ফিতরা আদায় করতে হয়। এ ফিতরা ঈদের নামাজের আগেই আদায় করা উচিত। কেননা, গরিব রোজাদার যেন ফিতরার অর্থ দিয়ে ঈদের খুশিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। ফিতরা দেওয়া কারো ওপর কোনো প্রকার অনুগ্রহ নয়। এটা আমাদের জন্য ইবাদতের অংশ।
এমনকি যে ব্যক্তিকে ফিতরার সাহায্য দেওয়া হয়, তার নিজের পক্ষ থেকেও ফিতরা দেওয়া কর্তব্য। সবার অংশগ্রহণের ফলে সাদকাতুল ফিতরের ফান্ডটি একটি সাধারণ ফান্ডে পরিণত হয়। যার ফলে এ থেকে যারা উপকৃত হয় তাদের মনে হীনমন্যতার ভাব সৃষ্টি হয় না। মূল বিষয় হলোÑ ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের গরিব ভাইদের দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারি এবং তাদেরকেও ঈদের আনন্দে অন্তর্ভুক্ত করি।
যাদের আল্লাহ তাআলা ধন-সম্পদ দিয়েছেন তারা আল্লাহর রাস্তায় এবং গরিব অসহায়দের প্রতি যতই দান করুক না কেন এতে কিন্তু তার ধন-সম্পদে কমতি দেখা দেবে না বরং বাড়তে থাকবে। আমরা সবাই জানি, ইসলামে দান-খয়রাত এবং গরিব অসহায়দের সাহায্যের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহর রাস্তায় দানের গুরুত্ব পবিত্র কুরআন পাঠেই বুঝা যায়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে দানের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় আল্লাহর পথে খরচ করে, যারা ক্রোধ দমন করে এবং মানুষকে মার্জনা করে। আর আল্লাহ সৎ কর্মপরায়ণদের ভালবাসেন। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৪)।
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন যে, শুধু সুখে থাকলেই যে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করব তা কিন্তু নয়, বরং সচ্ছল-অসচ্ছল সব অবস্থাতেই আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে হবে। সব অবস্থায় যদি আমরা খরচ করি তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ভালোবাসবেন। আল্লাহ তাআলা বারবার আমাদের আদেশ দিচ্ছেন, আমরা যেন তার পথে খরচ করি। কিন্তু দেখা যায় আমরা দুনিয়ার আজে-বাজে কাজে ঠিকই অর্থ সম্পদ ব্যয় করছি অথচ আল্লাহর রাস্তায় দেওয়ার ক্ষেত্রে যেন অনীহা প্রকাশ পায়। এর কারণ হলো শয়তান মানুষের মনে কুমন্ত্রণা জোগায় যে, তুমি যদি আল্লাহর রাস্তায় দান করো তাহলে তোমার ধন-সম্পদ ফুরিয়ে যাবে আর তুমি দরিদ্র হয়ে যাবে। অথচ পবিত্র কুরআন বলে যারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে তাদের এর তুলনায় অধিক বাড়িয়ে আল্লাহ তাআলা ফেরত দেন। আল্লাহ তাআলা বলেনÑ যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের দৃষ্টান্ত সেই শস্য-বীজের ন্যয়, যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করে এবং প্রত্যেকটি শীষে একশ’ শস্যদানা থাকে। আর আল্লাহ যার জন্য চান এর চেয়েও বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যদানকারী ও সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারাহ : আয়াত ২৬১)।
তাই এ কথা সুস্পষ্টভাবে বলা যায়, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে কেউ গরিব হবে না বরং আল্লাহ তাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে তা ফেরত দেবেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দান করলে সম্পদ কমে না। (মুসলিম)। আসুন, বর্তমান মহামারি করোনার কারণে খেটেখাওয়া দরিদ্র মানুষ এবং ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে অনেকেই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন, তাদের দিকে দানের হাত বাড়িয়ে দিই। আমাদের উচিত হবে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী গরিব-অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে যেতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারিতে আক্রান্ত অসহায়দের দান করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ফিতরা এবং জাকাত সঠিকভাবে আদায় করে গরিব ভাইদের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।