ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থীবান্ধব, কিন্তু...

মুহম্মদ সজীব প্রধান
🕐 ৬:২৭ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২০

কোভিড-১৯-এর ভয়াল থাবায় পৃথিবী নিস্তব্ধ। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তারপর লাফিয়ে লাফিয়ে শহর-উপশহর, গ্রাম-গঞ্জে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। ৩ কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থীর সুরক্ষার জন্য গত ১৮ মার্চ দেশের সকল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কিন্তু করোনার নিষ্ঠুর আক্রমণ থেকে গোটা পৃথিবী কবে মুক্তি পাবে এবং ক্লাস-পরীক্ষা পুনরায় কবে চালু হবে সে বিষয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। আর তাই শিক্ষক অধ্যাপক থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় উদ্বেগ। পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে সরকার সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কথা ভাবছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

সত্যি বলতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো হতদরিদ্র কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। যাদের কাঁধে থাকে পরিবারের হাল ধরার বিশাল দায়িত্ব। তাই একাডেমিক পড়া শেষ করে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়াই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তাই দীর্ঘদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার খবর তাদের জীবনাকাশে হতাশার ঘনঘটা কালো মেঘে রূপধারণ করেছে।

কেননা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সেমিস্টার পদ্ধতিতে সিলেবাস শেষ করার একটি নির্দিষ্ট সময় থাকায় সেখানে দীর্ঘদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলে পরবর্তীকালে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়েও কোর্স শেষ করা জটিল হয়ে যায়। এমনকি এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট সৃষ্টি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে আর সেশনজট বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এক অভিশাপের নাম যার ফলে ক্যারিয়ার গড়ায় অনেক শিক্ষার্থীকে বেগ পেতে হয় এবং চাকরির বাজারে হিমশিম পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয়।

এমন পরিস্থিতিতে গত ২৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে এবং গত ৩০ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনলাইন বৈঠকে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার জোরালো তাগিদ দেওয়া হয় যা একটি শিক্ষার্থীবান্ধব উদ্যোগ। কিন্তু এ উদ্যোগ সর্বস্তরের শিক্ষার্থীর জন্য সুফল বয়ে আনতে পারবে কিনা সে বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট।

কেননা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থীই গ্রামে অবস্থান করছে আর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ইন্টারনেটের বেহাল দশার কারণে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটবে। এছাড়াও বর্তমানে ইন্টারনেট প্যাকেজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল যা অনেক মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীর সামর্থ্যরে বাইরে। অন্যদিকে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা বাংলাদেশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন হওয়ায় এ পদ্ধতির সঙ্গে তাদের খাপ খাওয়ানো একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। শুধু তাই নয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে রয়েছে ফলে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করতে পারবে না।

 

মুহম্মদ সজীব প্রধান : শিক্ষার্থী আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

 
Electronic Paper