ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্বপ্ন ভেঙ্গেছে মৃৎ শিল্পীদের

মাসুদ রানা, পত্নীতলা (নওগাঁ)
🕐 ৩:৫০ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২০

গ্রাম বাংলার আবহমান কালের ঐতিহ্য মৃৎশিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্লাস্টিকের পণ্যে বাজার সয়লাব, অনেকেই বাপ-দাদার এ পেশা বদল করে অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর যেটুকু আছে করোনার কারণে তাদের কপাল পুড়েছে, ভেঙ্গেছে স্বপ্ন।

চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে গ্রামে-গঞ্জে বসে জমজমাট মেলা। চৈত্র সংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখে হয় সবচেয়ে বড় আয়োজন। এ সময় জমে ওঠে মৃৎশিল্পীদের ব্যবসা। মাটির তৈরি খেলনা ও তৈজসপত্র বিক্রি বেড়ে যায়। মূলত এই দুই-তিন মাসে যা আয় হয়, তা দিয়েই বছরের বাকি সময় চলেন কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। অন্য বছরের মতো এবারও মেলার প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন নওগাঁ পত্নীতলা উপজেলার ৫০ জন মৃৎশিল্পী।

পত্নীতলা নজিপুর পৌরসভার ২নং ওর্য়াড পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পী অখিল চন্দ্র পাল (৪৫) বলেন, ‘বছরে প্রায় ১০ মাস কোনো ব্যবসা হয় না।

আমরা চৈত্র ও বৈশাখ মাসের অপেক্ষা করি। এই দুই মাসে গ্রামে মেলা বসে। এসব মেলায় বিক্রি হয় মাটির তৈরি জিনিসপত্র, খেলনা।’ ‘আমরা তিন-চার মাস আগে মাটির জিনিসপত্র ও খেলনা তৈরি করে মেলার প্রস্তুতি নিই। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর কোথাও মেলা বসছে না। মাটির জিনিসপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছি আমরা’।

মৃৎ শিল্পী পারুল পাল বলেন ‘প্রতিবছর চৈত্র ও বৈশাখ মাসে ১০ থেকে ১৫টি গ্রাম্য মেলায় অংশ নিই আমরা। এতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ব্যবসা হয়। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে এক লাখ টাকার বেশি লাভ থাকে। সেই টাকায় আমরা সারা বছরের সংসারের খরচ চালাই।’

আরও বলেন, ‘আমরা পুঁজি লাগিয়ে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে ঘরে ফেলে রেখেছি। কোথাও কোনো মেলা নেই। এই ক্ষতির ঘানি আমাদের অনেক বছর টানতে হবে।’ উপজেলার ঠুকনিপাড়ার সনজিৎ কুমার পাল পাল (৪০) বলেন , এ উপজেলায় ২৫টির বেশি কুমার পরিবার আছে। অধিকাংশ পরিবারই পৈতৃক এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছে। এখন আমরা অল্প কিছু মৃৎশিল্পী পুরনো পেশা ধরে রেখেছি।’

মালতি পাল ( ৩০) বলেন, ‘চৈত্র ও বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের আয়ের ওপর অনেকের বাড়ি-ঘর মেরামত, মেয়ের বিয়ে দেওয়াসহ নানা রকম কাজ নির্ভর করে। অথচ এ বছর আমাদের পুঁজি হারাতে হচ্ছে’, বলেন তিনি। তারা সকলেই বলেন করোনার কারণে আমরা আরও বেশি দরিদ্র হয়ে গেলাম। আমাদেও স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেল ।

 

 
Electronic Paper