ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভাসমান মানুষের পাশে সৈকত

আলী ইউনুস হৃদয়
🕐 ১২:৪৭ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২০

‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ গানের এ কথাগুলোকে যেন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। করোনাকালের অবরুদ্ধ সময়ে যখন সারাদেশে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে ঠিক তখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ভাসমান অসহায় মানুষের জন্য দুই বেলার খাবার সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন সৈকত।

গত ২৩ মার্চ থেকে সৈকত ও তার সহযোগীরা প্রায় এক হাজার মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার কাজটি নিরলসভাবে করে যাচ্ছে। সহযোগীদের মধ্যে রয়েছেন মাইদুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, ইতমাম ইসলাম, সাদ হোসেন, সাইফুল ইসলাম ও আমির উদ্দিনসহ আরও অনেকে। সৈকত শুরুতে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে উদ্যোগটি শুরু করলেও এখন মানুষের প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকে কাজটি করে যাচ্ছেন। সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনগুলোতেও কাজটি চালিয়ে যেতে চান বলে আশা প্রকাশ করেন। 

সৈকত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগে পড়াশোনা করছেন। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য। এছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্যও ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে ও ফেসবুকে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনের রাস্তায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সারিবদ্ধ হয়ে শত-শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সৈকত নিজেকে সুরক্ষিত রেখে হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে মানুষগুলোর খোঁজ নিচ্ছেন ও খাবার সরবরাহের বিষয়ে জানাচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহারের বিষয়েও অনুরোধ করছেন। আর টিএসসিতে হাজার মানুষের জন্য খাবার তৈরি করা হচ্ছে। পরে রান্না করা খাবারগুলো প্যাকেটজাত করে বিতরণ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় যারা বিভিন্ন খাবারের দোকানী ছিলেন তারা রান্নার কাজ করছেন। খাবার নেওয়া একাধিক মানুষ বলছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৈকত ভাইসহ কয়েকজন আমাদেরকে খাওয়াচ্ছেন। দোয়া করি আল্লাহ তাদের ভালো ও সুস্থ রাখুক।’

কথা হয় সৈকতের সঙ্গে। কথায় কথায় এই ছাত্রনেতা বললেন, মানুষের জন্য এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে আমাদের মাঝে মানসিক প্রতিবন্ধকতা বড় হয়ে দেখা দেয়। মানুষের জন্য প্রতিদিন খাবারের ব্যবস্থা করা ও অর্থের জোগান নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয় তো ভাবতে হয়। এছাড়া এসব কাজ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ রয়েছে। তাই এমনই সব ভাবনা আমাকে ঘিরে ধরেছিলো। তারপরও নিজের অর্থায়নে কাজটি শুরু করি। অনেকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আমার সহযোগী হয়ে কাজ করছেন। এছাড়া আর্থিক সহযোগিতার জন্য এগিয়েও এসেছেন। আসলে এখন মনে হচ্ছে, শুধু দায়িত্বের জায়গা থেকে এই কাজটি করতে পারতাম না। নৈতিক দায়িত্ব হয়তো ছিল কিন্তু মানুষগুলোর প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকে কাজটি করছি। আর যে মানুষগুলো জীবনে নিয়ম কী জানতো না তারাও এখন নিয়ম মেনে খাবার সংগ্রহ করে। সত্যি বলতে দিনে দিনে মানুষগুলোকে নিয়ে একটি পরিবারের মতো হয়ে গেছি।

সার্বিক বিষয়ে তানভীর হাসান সৈকত খোলা কাগজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর ও লকডাউন পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া ভাসমান মানুষগুলো বেশি বিপাকে পড়ে। তখন ভাবি কী করতে পারি, সে জায়গা থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। প্রথমদিকে ব্যক্তি উদ্যোগেই তিন-চারজন বন্ধুকে নিয়ে খাওয়ানো শুরু করলেও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাবেক ছাত্ররা অর্থ্যাৎ বড়ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধবী এবং বড়ভাই সাংবাদিক ও পুলিশ সহযোগিতা করায় কাজটি চালিয়ে যেতে পারছি। আগে দুপুর ও রাতে দুই বেলায় প্রায় এক হাজার মানুষকে রান্না করে খাওয়ানো হতো। রোজার মাসে ইফতার ও সেহেরীর সময় এবং অন্য ধর্মের মানুষের জন্য দুপুুরের সময় সব মিলিয়ে দেড় হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সৈকত অনেকের সহায়তা পেয়েছেন আবার অনেকের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতাও পাননি। তারপরও অসহায় মানুষের জন্য এগিয়ে আসা এই তরুণ শিক্ষার্থী থেমে যাননি। যেহেতু করোনাকালের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত। তাই সমাজের সব শ্রেণি-পেশার সামর্থ্যবান মানুষের কাছে ভাসমান অসহায় মানুষগুলোর জন্য সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে এই ০১৬৮৪-০২৩৪১১ নম্বরে সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।

 

 
Electronic Paper