ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সামাজিকতা ফেরাতে অসামাজিক হোন

শফিকুল ইসলাম নিয়ামত
🕐 ৮:২১ অপরাহ্ণ, মে ২১, ২০২০

`সামাজিকতা’ বহুল প্রচলিত শব্দ। পথে-প্রান্তরে, হাটে-বাজারে, স্কুল-কলেজে এবং উচ্চ শিক্ষার স্থান বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বত্র এই শব্দের রাজত্ব। বিয়ে-শাদি থেকে শুরু করে চাকরি এমনকি কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেও ব্যক্তির অন্যান্য পরীক্ষা বাদ থাকলেও সামাজিক আচরণ পরীক্ষা না করে ছাড় দেওয়া হয় না। সামাজিক আচরণ বলতে সমাজে ব্যক্তির অন্যান্য মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা, হাঁটা-চলা, ব্যবসা-বাণিজ্য আচার-ব্যবহার ইত্যাদি সুষ্ঠু উপায়ে পরিচালনাকে বোঝায়। পৃথিবীব্যাপী শব্দটিকে হঠাৎ করে বর্জন করা হয়েছে।

দুজন ব্যক্তির মধ্যে হাত মেলানো, খুব কাছাকাছি হয়ে আলোচনা করা, সব বন্ধ করা হয়েছে। মানুষের জীবন থেকেও প্রিয় সব রকমের ধর্মানুষ্ঠান এবং ধর্মীয় উপাসনালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাবার মৃত্যুতে ছেলে মনঃকষ্টে কাতর হলেও স্পর্শ করতে পারছে না, ছেলের মৃত্যুতে বাবা কাছে আসছে না। মা-ছেলেকে দেখে দূর থেকেই চোখের পানি ফেলছে, কাছে আসার উপায় নেই।

সব ধরনের সামাজিকতা আজ বন্ধ। কত প্রেমিক-প্রেমিকা একজনের জন্য অন্যজন জীবন দান করবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল আজ একজনের জন্য অন্যজন আর মায়া কান্না দেখাচ্ছে না। যখন সামাজিকতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়, বাংলাদেশকে র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে পাওয়া যায়। অথচ এই দেশেও আজ সামাজিকতা শব্দটি প্রত্যাখ্যাত। কেউ আর সামাজিকতা রক্ষা করছে না। সবাই কেমন অসামাজিক আচরণ করছে। কেউ হাত বাড়িয়ে দিলে আর অন্যজন হাত বাড়িয়ে দুজনের সামাজিকতা বিনিময় করছে না।

সবার মাঝে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। জানাজায় লোক সমাগম হচ্ছে না। শ্মশানঘাটে শবদাহ করার সময় মানুষের উপস্থিতি নেই। হাসপাতালে রোগী রেখে ডাক্তার পলায়ন করছে, আবার রোগীও হাসপাতাল থেকে ভয়ে পলায়ন করছে যদি তার সঙ্গে সামাজিক আচরণ না করা হয়। বিদেশ থেকে বছর পরে আপনজন এলেও তাকে ঘরের বাইরে রাখা হচ্ছে অথচ কিছুদিন পূর্বেও তার সাক্ষাৎ পাওয়ার আশায় পরিবারের সবাই ব্যতিব্যস্ত ছিল? স্ত্রী তার স্বামীকে রেখে চলে গিয়েছে, কয়েকদিন আগেই পত্রিকার বরাতে সবাই এই খবর জানতে পেরেছে।

বন্ধুবান্ধব যারা একবেলা দেখা না করলে দিনই পার করতে পারত না তারা আর এখন দেখা করে না। খেলার মাঠ ফাঁকা পড়ে আছে, কেউ আর খেলতে আসে না। বাজারে চায়ের দোকানে আর চুলা জ্বলে না। হঠাৎ করে সবাই কেমন অসামাজিক হয়ে গেছে। আসলেই আমরা অসামাজিক হয়ে গেছি নাকি আমাদের অসামাজিক হতে বাধ্য করা হয়েছে? হ্যাঁ, আমাদের অসামাজিক হতে বাধ্য করা হয়েছে। কারণ ভবিষ্যতে যেন আমরা আরো শক্তি নিয়ে ফিরতে পারি এবং আরো সামাজিক হতে পারি এজন্য স্বল্প সময়ের জন্য অসামাজিক হতে হবে।

মহামারি থেকে বাঁচতে এবং এর বিস্তার রোধে অসামাজিক হতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ আমরা যদি প্রথম থেকেই খুব কঠোরভাবে পালন করতাম তাহলে হয়ত প্রায় সব জেলায় করোনা পৌঁছাতে পারত না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার প্রতিজ্ঞা করি। বাইরে যাওয়ার আগে মাস্ক ব্যবহার করি, বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দ্বারা হাত পরিষ্কার করি। চারপাশে যারা আছে তাদের সবাইকে নিজ দায়িত্বে দূরত্ব বজায় রেখে যতটুকু পারি সতর্ক করি। আবেগবর্জিত হয়ে বিবেক দিয়ে চিন্তা করে সংকট কিভাবে দ্রুত কাটিয়ে উঠা যায় সেই চেষ্টা করি। সরকার নির্দেশিত নীতিগুলো মেনে চলি। আর একজনও যেন নতুন করে আক্রান্ত না হয় সেই কামনাই করি। নতুন করে যেন আমরা আবার সামাজিকতায় অগ্রগামী হতে পারি। নিজে সচেতন থাকি, অপরকেও সচেতন করি। ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন।

শফিকুল ইসলাম নিয়ামত : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

 
Electronic Paper