সীমিত সময়ের ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের উপচেপড়া ভিড়
জাফর আহমদ
🕐 ১১:২১ পূর্বাহ্ণ, মে ১৯, ২০২০
ঈদ সামনে রেখে লেনদেনের চাপ সামাল দিতে পারছে না সীমিত আকারে খোলা রাখা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ফলে ব্যাংকের সামনে দীর্ঘ লাইন হচ্ছে। ভেঙে পড়ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা। বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সামনে এমন চিত্র মিলেছে।
মিরপুরের-১০ উপস্থিত ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের সামনে গতকাল সরেজমিন দেখা যায় ব্যাংকে লম্বা লাইন। ব্যাংকের ভেতরে মানুষের সংকুলান না হওয়ার বাইরে রাস্তায় লাইন চলে গেছে। অথচ মিরপুর হলো দেশের সব চেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। প্রতিদিন দেড়শ’ থেকে দুইশ’ মানুষ করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছে। ব্যাংকে এসে ঠাসাঠাসি করে লেনদেন করার ক্ষতির বিষয়ে সবাই সতর্ক থাকলেও ভিড় এড়াতে পারছে না। সবাই দ্রুত কাজ করতে চায়, ফলে ভিড় লেগেই থাকছে। ব্যাংক থেকে নানা রকম নির্দেশনা দিলেও তা কাজে আসছে না। ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মীরা বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। একই অবস্থা দেখা যায় মতিঝিলে খোলা থাকা সবগুলোর বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাগুলোতে।
গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত টাকা তুলতে ব্যাংকে ভিড় করছেন তারা। ঈদকে কেন্দ্র করে ঈদবাজার, ব্যবসায়িক খরচ, বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে নগদ টাকা তোলার প্রবণতা বেড়েছে। গ্রাহকরা ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকে যাচ্ছেন। আর লেনদেনের সময় কমিয়ে আনার কারণে গ্রাহকের চাপ বাড়ছে। কথা হয় মতিঝিলে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের একজন গ্রাহকের সঙ্গে। তিনি একটি তৈরি পোশাক কারখানার হিসাব রক্ষক। ব্যাংকে এসেছেন শ্রমিক-কর্মচারীদের ঈদ বোনাসের টাকা তোলার জন্য। ব্যাংক সীমিত আকারে খোলা থাকার কারণে একদিনে টাকা তুলতে যদি না পারেন- এ জন্য একদিন আগে এসেছিলেন টাকা তুলতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি। অবশেষে গতকাল টাকা তুলেছেন। তারপরও ব্যাংকের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গেছে।
কারওয়ানবাজারের একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক শাখার একজন ব্যবস্থাপক ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, সামনে ঈদ আর এ কারণে ফলে টাকা তোলার চাপ বেড়েছে ব্যাপকহ। তাই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও লেনদেনের জন্য ব্যাংকগুলোতে ভিড় করছে মানুষ।
লেনদেনের সময় সীমিত হওয়ার জন্য একসঙ্গে অনেক গ্রাহকের ভিড় সামাল দিতে হচ্ছে। দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার কারণে একদিকে গ্রাহক যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন, অন্যদিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের পাশাপাশি ব্যাংককর্মীরাও ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছেন। স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় সবার স্বার্থে সীমিত সময়ের জন্য নয়, পূর্ণ ও স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখা উচিত।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারা দেশ এখন সাধারণ ছুটিতে। রপ্তানি আদেশ ধরে রাখার জন্য তৈরি পোশাক কারখানা সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হয়েছে। ঈদের বাজার করার জন্য সীমিত আকারে ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও সীমিত আকারে খুলছে। আগে থেকেই সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখাগুলো। এসব প্রতিষ্ঠান নতুন করে খুলে দেওয়া ও ঈদ সামনে রেখে কেনাকাটা করার জন্য মানুষের চাহিদা বাড়লেও টাকার প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংকের কার্যক্রমের পরিধি সেভাবে বাড়েনি। ফলে বাড়তি গ্রাহক সামাল দিতে হচ্ছে সীমিত সময় ও কমসংখ্যক কর্মী দিয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে রোস্টার করে কর্মকর্তারা দিন ভাগ করে কাজ করছেন। একদিন যারা শাখাতে কাজ করছেন পরের দিন বিশ্রামে থাকছেন। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে এমন ব্যবস্থা নিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ঈদ সন্নিকটে হওয়ার কারণে ব্যাংকে মানুষের প্রয়োজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে। এর ফলে ব্যাংক শাখাগুলোতে ভিড় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাচ্ছে।