ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভেবেছি অধিনায়ক হওয়ার এটাই সেরা সময়

ক্রিয়া ডেস্ক
🕐 ১২:৪৫ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২০

প্রবল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তামিম ইকবালের ফেসবুক লাইভ আড্ডা। প্রতিটি অনুষ্ঠানে ভিউয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শুধু সাধরণ দর্শক নন, লাইভ প্রোগ্রামটি দেখছেন দেশ-বিদেশের অনেক খ্যাতিম্যান ক্রীড়াবিদও। স্যোসাল মিডিয়ার এই আড্ডায় ভিউয়ার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। যে আড্ডায় ক্রিকেটারদের জীবনের অজানা অনেক গল্প বেরিয়ে আসছে। মুশফিক, মাশরাফি, ফাফ ডু প্লেসি, রোহিত শর্মারা এসেছিলেন। শনিবার রাতে ক্রিকেট জীবনের নানা রস গল্প নিয়ে এবার বাংলাদেশের চার তারকা ক্রিকেটার তাইজুল, মুমিনুল, সৌম্য সরকার ও লিটন কুমারকে নিয়ে মেতেছিলেন তামিম। যা দৈনিক খোলা কাগজের পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো-

তামিম ইকবালের ফেসবুক লাইভ

আপনাকেই শুধু ঝাড়ি মারি
তামিমের অভিযোগ, ‘তুই যেভাবে নিজের নেতৃত্ব দেখাচ্ছিস, মাঝে মাঝে এক-দুইটা ঝাড়ি আমাদেরও দিয়ে ফেলিস। নেতৃত্ব উপভোগ করছিস, ভালো, উপভোগ কর। কিন্তু ঝাড়ি টারি কম দিস ভাই, বয়সে তো আমি তোর বড়।’ মুমিনুলও মজা করে বলেন, ‘একমাত্র ঝাড়ি কিন্তু আপনাকেই মারি। এটা নির্ভর করে, যখন কোনো বাজে শট খেলেন, তখন মারি।’

নেতৃত্বে মুমিনুল
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব মুমিনুলের কাছে। যা ক্রিকেটে সবচেয়ে সম্মানের খেলা। আর সেই খেলায় ফলাফল ভালো না হলেও কীভাবে দলকে উজ্জীবিত রাখেন, তা মুমিনুল-
আমি যখন অধিনায়ক হওয়ার প্রস্তাব পাই, আমার মনে হয়েছিল অধিনায়কত্ব করার এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। কারণ, আমার কাছে তখন চার জন খেলোয়াড় ছিল, যারা প্রায় ১০ বছর ধরে খেলছে।
তারপর তিন-চার জন জুনিয়র খেলোয়াড় বর্তমানে খুব ভালো অবস্থায় আছে। পেসার আছে, ভালো ভালো স্পিনার আছে।
আমি চিন্তা করলাম, আমার জন্য এটা চ্যালেঞ্জ নয়, এটা ভালো সুযোগ হবে। টেস্টে দলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এটা ভালো একটা সুযোগ এটা।’

বোরিং সময় ঘরবন্দি
সবাই ঘরে থেকে নিজের মতো করেই ফিটনেস রাখছেন। কিন্তু সেটা যে আর মাঠের ফিটনেসের মতো নয় সে উপলব্ধি সবার। সৌম্য আছে ট্রেডমিল আর দৌড়াদৌড়ির ওপর। তা শুনে তামিম বললেন, আমি তো দৌড়াই দৌড়াইতে চট্টগ্রামে চলে গেছি।’ সুযোগটা নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘প্রতিদিন ৫-৭ কি.মি. করে দৌড়াচ্ছেন। এমনে কয়দিন পর ভারত চলে যাবেন নিশ্চিত।’
লিটন বলেন, ‘প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠলে একটা জিনিস খুব বিরক্ত লাগে। রানিং তো আমরা করিই প্র্যাকটিসে। এছাড়া ফুটবল খেলি, একটা মজার ভেতরে থাকি, ওখানেও ফিটনেসটা হয়। কিন্তু ট্রেডমিল একটা বোরিং জায়গা। সামনে কিছু দেখতেছি না, খালি দৌড়াও...ভাগো, ভাগো।’
তামিমও একমত, ‘আমার খুব বিরক্ত লাগে। এখন খুবই কষ্ট হচ্ছে ট্রেডমিলে দৌড়াইতে। রাস্তায় দৌড়াইলে যেমন নতুন নতুন জিনিস দেখা যায়। ভালো লাগে। কিন্তু এখন একদমই বোরিং।’

লিটনের ফর্মে ফেরা গল্প
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে লম্বা সময় খারাপ সময় গেছে লিটনের। সেখান থেকে উত্তরণের গল্পটা শোনালেন লিটনÑ ‘মাশরাফি ভাইয়ের ব্যাকআপ আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমাকে অনেক আগলেও রেখেছেন তিনি। না হয় টানা খারাপ করার পরও ১৪-১৫টা ম্যাচ খেলা সম্ভব হতো না। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি হাফ সেঞ্চুুরি, সেঞ্চুুরি করেছি। কোথাও না কোথাও বিগ ইনিংস ছিল। কিন্তু ঐ একটি জায়গা ছিল ওয়ানডে যেখানে ২০টির মত ম্যাচে আমার কোনো রেজাল্ট ছিল না। আমি নিজের খেলাটা খেলতে পারছিলাম না। প্রতিদিন ভাবতাম আমি মাঠে গিয়ে নিজের ন্যাচারাল খেলাটা খেলব। কিন্তু পারতাম না। ভুল করে আউটও হতাম। আসলে আমি মেলাতে পারিনি যে ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইনিংস সাজানোর প্রক্রিয়া ভিন্ন। আমি ভাবতাম ঘরোয়াতে যেমন শুরুতে মেরে খেলে রান করতে পারি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অমন ঝুঁকিপূর্ণ শটস খেলে ইনিংস গড়তে পারব। পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিছু বিষয় নিজেকে মোকাবেলা করতে হয়।

লিটনকে তামিমের পরামর্শ
এবার লিটনকে আত্মতৃপ্তি থেকে উত্তরণের পথটা দেখালেন তামিমÑ ‘দেখ, ঐ বিষয়টা শুধরে নিতে আমারও ৭-৮ বছর লেগেছে। তখন আমারও অনুভূতি হতো তোর মত। বার বার ভেতরে মনে হতো, আমি তো আগের ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছি। পরের ম্যাচে অত প্ল্যানও করতাম না। খেলতে নেমে পড়তাম, ব্যাটিং করার চেষ্টা করতাম। তখনই ভুলটা করতাম। আর ছোট্ট একটা ভুলেই কিন্তু আউট হয়ে যায় ব্যাটসম্যান। আমার যখন খারাপ সময়টা ছিল ২০১৫ সালে, তখন আমি বুঝেছি রানের মূল্য। একটা ১০০ রানের ইনিংস আমার খারাপ সময় কভার করবে না। আমাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আমাকে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলতে হবে, রান করতে হবে। আমি যখন রান করবো, তখন তা ভুলে গিয়ে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।’

সৌম্যে উপলব্ধি
আমি আমার মনের মতোই খেলতাম। সারাজীবন দেখে এসেছি তামিম ভাই অনেক মেরে খেলেন। স্ট্রাইকরেট অনেক হাই থাকে। আমার চেষ্টা ছিল ওইরকম কিছু করার। আমি দুটি বল ডট দিলে সমস্যা নেই। তামিম ভাই তো আছেন। যখন দেখলাম আমার কোন শট দেখে তামিম ভাই এসে বলতেন, একটা বল দেখ। চার মারছিস। একটা বল দেখ। তখন আমি বুঝতাম যে না খেলার শুরুটা আসলে কীভাবে করতে হবে। তারপর এসে পাকিস্তান, ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সময়টা ভালোই কেটেছিল। কিন্তু এরপর টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে মিলে কোনোটায়ই ভালো করিনি। ৩০-৪০ করে আউট হয়ে গেছি। সেটা তখন খুব বড় কিছু মনে হতো না।’ তখন আপনার কথা মনে পড়ত। আপনি বলতেন ৩০-৪০ করে আউট হয়ে গেছিস। ৭০-৮০ গুলো যদি ১০০ + করতে পারতাম, ৩০-৪০ গুলো যদি পঞ্চাশ হতো, তাহলে দেখতেও ভালো লাগত। ’

তামিম বলেন, ‘ঠিক উপলব্ধি করেছিস। আসলে ৩০-৪০ যত সুন্দর আর আকর্ষণীয়ই হোক না কেন, মানুষ ভুলে যায়। ৫০ ক্যারিয়ারের সঙ্গে যোগ হয়। সবাই মনে রাখে।

নিউজিল্যান্ডে বেঁচে যাওয়ার গল্প
জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে আর এক মিনিট আগে আসলেই মহাবিপদে পড়ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মসজিতে সন্ত্রাসীর গুলিতে হয়ত সেদিন ক্রিকেট দলের প্রায় সবাইকে প্রাণ হারাতে হতো। আল্লাহ সেখান থেকে রক্ষা করেছেন। অনুশীলনে মুশফিক আর তাইজুলে ফুটবল লড়াইয়ে। জয়-পরাজয়ে দু’জনে চলে কাইণ্ঠামি। আর তাতেই সময় কেটে যায় ৩-৪ মিনিট। জমে ওঠা এই আড্ডায় চার জনেই শোনালেন দুর্বিষহ সেই গল্প-

তামিম বলেন, ‘তাইজুল যদি নিউজিল্যান্ডে না থাকত আর ঐ কাইন্ঠামিগুলা না করতো, তাইলে আমরা এখানের কেউ বেঁচে থাকতাম না। লিটন শুধু বেঁচে থাকত, ও হোটেলে চলে গেছিল। ক্রাইস্টচার্চে যে হামলাটা হয়েছিল, আমরা যদি ১-২ মিনিটও আগে পৌঁছতাম তাহলে হয়তো আমরাও সেই অ্যাটাকের মধ্যে পড়ে যেতাম। তুই যদি না খেলতি তাইজুল, তাহলে আমরা কেউ বেঁচে থাকতাম না। শুধরে দেন মুমিনুল।
বলেন, ‘না না ভাই! অয় (তাইজুল) যদি তখন কাইন্ঠামিটা না করতো...কাইন্ঠামি করার কারণেই ফুটবল ম্যাচটা বড় হইছে।’ তাইজুল বলেন, ‘সবার আগে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আমরা ঐদিন বেঁচে ফিরছি। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ বাঁচাইছে। আর আপনারা তো জানেনই, কাইন্ঠামি তো আমার রক্তেই আছে ভাই। যেমনেই হোক জিততে হবে।’

 
Electronic Paper