অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
সুধীর বরণ মাঝি
🕐 ৫:১৮ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২০
উদ্দীপক : নিরু পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি মেয়ে। বাংলাদেশের বাইরে অরুনাচলেও তাদের জনগোষ্ঠীর লোকদের বসবাস রয়েছে। নিরু তার বান্ধবী শুভ্রার সাথে ময়মনসিংহে তার গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেল। সেখানে সে যে বিষয়টি দেখে অবাক হলো, তা হলো শুভ্রার পরিবারের সকল সদস্যরা শুভ্রার মায়ের মমতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এছাড়াও সে খুব কাছ থেকে শুভ্রাদের ধর্মীয় আচরণ ও জীবিকা নির্বাহ দেখার সুযোগ পেল।
ক) মারমাদের গ্রামের প্রধানকে কী বলা হয়? খ) বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে কীভাবে সুষম যোগাযোগ স্থাপিত হয়? গ) নিরুদের সাংস্কৃতি জীবন ব্যাখ্যা কর। ঘ) ’নিরু ও শুভ্রাদের সামাজিক জীবনের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে’উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। ক. উত্তর : মারমাদের গ্রামের প্রধানকে ‘রোয়াজা’ বলা হয়।
খ. উত্তর : প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসেছে এবং সেই সকল সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান গ্রহণ করেছে।এক সংস্কৃতির সাথে অন্য সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানের বিনিময়ের ফলে তৈরি হয় সংস্কৃতির সংমিশ্রণ, যা মানুষে-মানুষে সাংস্কৃতিক আন্তঃসম্পর্কের ভীত রচনা করে। এই আন্তঃসম্পর্ক যতটা ঘনিষ্ঠ এবং স্থায়ী হবে ততই বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সুষম যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
গ. উত্তর : উদ্দীপক অনুযায়ী বলা যায়। নিরু চাকমা নৃগোষ্ঠীর একজন সদস্য। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতি জীবন অত্যন্ত বৈচিত্রময়। চাকমাদের সাংস্কৃতিক জীবনের বর্ণনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো তাদের পোশাক, খাদ্যাভ্যাস ও উৎসব।
এই তিনটি ক্ষেত্রেই চাকমরা তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছে।তারা স্বীয় ঐতিহ্যকে যতেœর সাথে লালন করে। অর্থাৎ তারা তাদের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। চাকমারা নিজেদের পোশাক নিজেরা তৈরি করে। চাকমা মেয়েদের পরনের কাপড়ের নাম ’পিনোন ও হাদি’। পূর্বে পুরুষরা ধুতি ও গামছা পরত এবং মাথায় গাগরি বাঁধত। ইদানিং তারা শার্ট,প্যান্ট ও লুঙ্গি পরিধান করে। চাকমা মহিলাদের তৈরি কাপড়,ফুলদানি ও নানা ধরনের ওড়না অত্যন্ত জনপ্রিয়।চাকমরা বেত ও বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি,পাখা,চিরুনি ও বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে। তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব হলো ’বিজু’। বাংলা বর্ষের শেষ দুই দিন এবং নববর্ষের প্রথম দিনে এই উৎসব উদযাপিত হয়।
ঘ. উত্তর : নিরু ও শুভ্রাদের সামাজিক জীবনের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে’। নিরু চাকমা এবং শূভ্র গারো নৃগোষ্ঠীর সদস্য। এই দুই নৃগোষ্ঠীর সামাজিক জীবনে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান।তাদের সামাজিক জীবনের ভিন্নতা তুলে ধরা হলো। গারো সমাজ মাতৃতান্ত্রিক। তাদের পরিবারের প্রধান হলেন মাতা। সন্তানরা মায়ের উপাধি ধারণ করে। পরিবারের সর্বকনিষ্ট কন্যা সমুদয় সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করে থাকে। গারো সমাজের মূলে রয়েছে মাহারি। বিয়ে,উত্তরাধিকার,সম্পত্তির ভোগদখল ইত্যাদিতে এই মাহারির গুরুত্ব অপরিসীম। গারো সমাজে একই মাহারির পুরুষ ও মহিলার মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ। গারো সমাজে বেশ কয়েকটি দল রয়েছে। এরকম প্রধান পাঁচটি দল হচ্ছে: সাংম, মারাক, মোমেন, শিরা ও আরেং। চাকমা সমাজের মূল অংশ পরিবার।
কয়েকটি চাকমা পরিবার নিয়ে গঠিত হয় ‘আদাম বা পাড়া’। পাড়ার প্রধানকে বলা হয় ’কার্বারি’। চাকমা সমাজে রাজার পদটি বংশানুক্রমিক। চাকমা সমাজ পিতৃতান্ত্রিক এবং পিতাই পরিবারের প্রধান। তার পরে মা ও জ্যৈষ্ঠপুত্রের স্থান। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, চাকমা ও গারোদের সামাজিক জীবনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
সুধীর বরণ মাঝি, শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় চাঁদপুর।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228