ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিচলিত সুজনে ছিল চমকিত করা

ক্রিয়া ডেস্ক
🕐 ৪:৪৩ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২০

বাংলাদেশ দলের সাবেক ক্রিকেটার ছিলেন। ছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়কও। এরপর পর্যায়ক্রমে কোচ, ধারাভাষ্যকার এবং সবশেষ বিসিবি পরিচালকের খাতায় নাম তোলেন। বাংলাদেশের প্রথম বিশ^কাপেও খেলেছিলেন সুনামে। যার একটি ছদ্ম নাম রয়েছে, চাচা। পুরো নাম খালেদ মাহমুদ সুজন। বিচলিত সুজন সবসময় নতুনত্ব খোঁজার চেষ্টা করতেন। নতুন প্রতিভা খুঁজতেন। সহায়তার হাত বাড়াতেন। তাইতো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতির আস্থাভাজনদের নাকি একজনও তিনি। ক্রিকেটে তার লম্বা ইতিহাসে ঘটে যাওয়া কিছু স্মৃতিরোমন্থন খোলা কাগজের পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো-

ছোটুকে খুঁজছিলেন ওয়াসিম আকরাম
এশিয়াকাপে ছোটুকে খুঁজছেন ওয়াসিম আকরাম। উইকেটরক্ষক পাইলটকে বলছেন তোমাদের ছোটু কই। ভাগ্যিস ততক্ষণ সুজন আউট হয়ে প্যাভেলিয়নে। জেরটা সেই বিশ^কাপ ক্রিকেটে পাকিস্তানের পরাজয় শুধু না, ছোটু সেদিন চোখে চোখ রেখে ওয়াসিমকে বিব্রত করেছিলেন। তাতে সাফল্যও ধরা দেয়, বাংলাদেশ জিতেছে ৩ উইকেটে।
সুজন বলেন, ওয়াসিম আকরাম আমাকে একটা চারও মেরেছিল। তখন ওর চোখে চোখ রেখে বল করেছিলাম। এটার কারণও ছিল। কোচ বলেছিলেন চোখে চোখে রেখে কথা বলো। আমি ম্যাচের দিন তাই করলাম। ‘তখন সে গালি দিয়ে বলে, আমার দিকে তাকাস ছোটু! সে আকরামের (খান) কাছেও বিচার দেয়, তোর ছোটু আমার দিকে তাকিয়ে আছে!’

চোখেই দেখেনি প্রথম বল
২০০৩ সাল। সুজনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর। পাকিস্তান দলে ছিলেন শোয়েব আকতার। যিনি ওই সিরিজের সেরা সফল বোলার। যদিও মুলতান টেস্টে খেলেননি। তার আগের দুই টেস্টের মধ্যে, পেশাওয়ার টেস্টে আগুন ঝরা বোলিংয়ে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। পেশাওয়ার টেস্টে পেলেন ৬ উইকেট। তার বোলিংয়ের সামনে পড়ে সুজন অভিজ্ঞতা বর্ণনাÑ ‘আমি অনেককেই বিশ্বাস করাতে পারি না, শোয়েবের প্রথম বল আসলে আমি চোখেই দেখিনি। পেশাওয়ার টেস্টে তাও কিছুটা রানের দেখা পাই, সর্বোচ্চ ২৫ রান।’

মুলতান টেস্টের স্মৃতি রোমন্থন
সুজনের নেতৃত্বে মূলতান টেস্ট এখনো নাড়া দেয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে। জিততে জিততে হেরে যাওয়া ম্যাচ নিয়ে কথা উঠতেই সুজন বলেন, ‘পুরো সিরিজের তিনটি ম্যাচই আমরা হেরেছিলাম কিন্তু ভালো খেলেছিলাম। করাচি টেস্টে ভালো খেলে ম্যাচ চার দিনে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয় টেস্টে পেশোয়ারে ভালো খেলেও পরে আট উইকেটে হেরে যাই। তৃতীয় ম্যাচে বাজে আম্পায়ারিংয়ের কারণে হেরেছি।
এছাড়া মুলাতানে আমি উইকেট দেখে মাশরাফিকে বলেছিলাম যে, এটা ফ্ল্যাট উইকেট ব্যাটিং করার জন্য তো তুই মুলতান টেস্টটা খেল। কিন্তু মাশরাফি বলেছিল যে, আমি এটা খেলি ভালো করলে তো আর বাদ দিতে পারবে না।

ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া
নিউজিল্যান্ডে অনুশীলনে তামিমকে বল করতে গিয়ে সহকারী কোচ প্রায় মরতেই বসছিলেন। সুজন বলেন, ‘তামিম আমাকে বলল, সুজন ভাই আপনি আমাকে ২২ গজ না ১৮ গজ দূর থেকে বোলিং করেন। যাতে বল স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত ব্যাটে আসে। আমিও বোলিং করছিলাম। হঠাৎ তামিমের একটি খানিক উঁচু করে খেলা স্ট্রেইট ড্রাইভ, বুলেটের গতিতে আমার শরীর ছুঁয়ে চলে গেল। সেই শটে মনে হয় বিদ্যুতের গতি ছিল। এত দ্রুত যে, আমি বোলিং শেষ করে ফলো থ্রু’তে মাটিতে পা রাখার আগেই বল আমার পিঠ ছুঁয়ে চলে গেল। আমি পিঠ ধরে দেখি লাল মোটা দাগ হয়ে গেছে। ভাবলাম মাথায় লাগলে আর রক্ষে ছিল না।’

নেট বোলার থেকে বিপিএল!
খেলোয়াড়দের মেরিড বুঝতেন ভালো। এছাড়াও মাঠে নিজের চিন্তাকে মূল্যায়ন করতেন। তাইতো নেট বোলারকে দিয়ে সরাসরি বিপিএল ম্যাচ খেলানোর সাহস। সুজন বলেন, ‘তাসকিনকে আমি যখন প্রথম খেলাই, তখন সবাই বলছিল আমি কি পাগল হয়ে গেছি? এমনকি আমাদের অ্যানালিস্ট (নাসির আহমেদ) নাসু ভাইও বলছিলেন, কী করছিস সুজন? নেট বোলারকে সরাসরি বিপিএলের মতো বড় আসরে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে চান্স দিতে চাস?’ কি অবাক ওই ম্যাচে নেট বোলারই ম্যাচ জিতিয়েছে সুজনের দলকে। এমনকি ম্যাচ সেরাও হন তাসকিন।

অভিভাবকের ভূমিকা
ক্রিকেটারদের খেয়াল রাখা কিংবা টেইক কেয়ার করা ছিল সুজনে ভিন্ন একটি কাজ। যা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে রাখছে এখনো। আবার একদম নবীনদের বেলায় অভিভাবক হিসেবে কাজ করেন। প্রতি বছর প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে অন্তত ২০-২৫ জন ক্রিকেটারের পাশে থাকেন সুজন।

 
Electronic Paper