স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে দুইশত বছর ধরে লিচু চাষ হয়ে আসছে। টকটকে লাল রং, বড় আকৃতি ও ছোট বীচি সেই সাথে মিষ্টি স্বাদ- এই হচ্ছে মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর বৈশিষ্ট্য। এ সমস্ত গুণের কারণেই এখানকার লিচু ইতিমধ্যে দেশে সুনাম কুড়িয়েছে। লিচুর ভরা মৌসুমকে সামনে রেখে ধীরে ধীরে পাকতে শুরু করেছে এখানকার লিচু। বাড়ি-ঘরের আঙিনা এবং রাস্তার দু’পাশে অবস্থিত গাছগুলো ছেয়ে গেছে লাল বর্ণের লিচুতে। চারিদিকে রাঙ্গা লালের সমারোহ মুগ্ধ করছে যে কোন মানুষকে।
সারা দেশের এখানকার লিচুর চাহিদার কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু ক্রয়ের জন্য আগত একজন ব্যবসায়ী তৌহিদ মিয়া বলেন, আমি একজন লিচু ব্যবসায়ী। এখান থেকে লিচু কিনে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিক্রি করি। এখানকার লিচুর সারা দেশেই খুব চাহিদা। মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর উন্নত গুণাগুণ বর্ণনা করে স্থানীয় গ্রামবাসী মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের গ্রামের প্রত্যেক ঘরে লিচুর বাগান আছে। এগুলো আকৃতিতেও বড় এবং খেতেও সুস্বাদু। সারা বাংলাদেশে এই লিচু সরবরাহ হয়।
লিচু বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হওয়ার কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের বিশিষ্ট লিচু চাষী মোখলেছুর রহমান দাদা ভাই বলেন, আমার বাগানে ৩০/৩২টি লিচু গাছ আছে। এই লিচু বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছি। আমাকে দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে লিচু চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হয়েছেন।
পাকুন্দিয়ার হোসেন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান হামদু বলেন, মঙ্গলবাড়িয়ায় লিচু চাষের ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কোন উদ্যোগ নেই। যদি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সঠিকভাবে চাষীদের পরামর্শ ও তদারকি করতেন এবং লিচু চাষীদের ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে এ লিচুর ফলন আরো ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধি পেত।
পাকুন্দিয়া মঙ্গলবাড়ীয়া লিচুর উৎপত্তিস্থল বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতীয় কোন এলাকা থেকে এর জাত এখানে এসেছে। স্থানীয় লোকজন বলেছেন দীর্ঘদিন আগে মঙ্গলবাড়ীয়া গ্রামে হাসিম মুন্সী নামে এক ব্যক্তি পাহাড়ী এলাকা থেকে একটি লিচুর চারা এনে বাড়ীর আঙ্গিনায় রোপন করেন। সেখান থেকে বাছির উদ্দিন নামে অন্য আরেক গ্রামবাসী কলম করে তার বাড়ির আঙ্গিনায় রোপন করেন। এভাবেই মঙ্গলবাড়ীয়া লিচুর প্রসার ঘটে।
মঙ্গলবাড়ীয়া ছাড়াও পাকুন্দিয়ার প্রায় সবকটি ইউনিয়নে রয়েছে হাজার হাজার লিচু গাছ। হোসেন্দী ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশি। তবে পাকুন্দিয়া উপজেলা যেখানেই লিচু হউক না কেন এর নাম অবশ্যই মঙ্গলবাড়ীয়া লিচু।
প্রয়োজনীয় সরকারী ও বেসরকারী সহায়তা প্রদান করা হলে একদিকে যেমন এখানকার উৎপাদিত লিচুর আবাদ আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব সেই সাথে বিপণনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে পাল্টে যেতে পারে স্থানীয় অর্থনীতির চিত্র।