পরামর্শ
নোট তৈরিতে ভাষাদক্ষতা দরকার
জুলহাস প্রামাণিক
🕐 ৭:৩৫ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০২০
পাঠ অনুশীলন এবং পাঠ আয়ত্তের জন্য নিজেই তৈরি করো সব প্রয়োজনীয় হ্যান্ডনোট। ধৈর্য ও মনোযোগ দিয়ে মানসম্পন্ন নোট তৈরি করতে পারলে তা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানার্জনে সত্যিকারের সহায়ক হবে, আর পরীক্ষার ফলাফলে অর্জিত হতে পারে ঈর্ষণীয় সাফল্য
পরীক্ষার ফলাফলে সাফল্য অর্জন করতে চায় প্রতিটি শিক্ষার্থীই। কিন্তু সে সাফল্য সবার পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয় না। এজন্য প্রয়োজন পাঠ আয়ত্ত করার নানামুখী প্রচেষ্টা আর অনুশীলন কৌশলের। এমনই একটি কার্যকর কৌশল হচ্ছে পাঠ অনুশীলনের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সযতেœ নিজের ভাষায় লিখে ব্যতিক্রমী এবং উঁচুমানের পাঠমালা তৈরি করা- যা শিক্ষার্থীদের কাছে নোট বা হ্যান্ডনোট নামে পরিচিত।
নোটটি তৈরি করার আগে তাকে বিষয়টি সম্পর্কে নানা উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয় এবং তা পাঠও করতে হয়। এতে আগেভাগেই বিষয়টির ওপর অনেকটা দখল চলে আসে। দ্বিতীয়ত, একটি ভাল এবং ব্যতিক্রমী নোটের সহায়তায় পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের সম্ভাবনা নিশ্চিত হয়।
নোট তৈরির পূর্ব প্রস্তুতি : ভাল হ্যান্ডনোট তৈরির জন্য একটি পূর্ব প্রস্তুতি দরকার। এর মধ্যে রয়েছে অধ্যায় ও বিষয় নির্বাচন এবং নির্বাচিত বিষয়ের তথ্য নানা উৎস থেকে সংগ্রহ করা, সংগৃহীত অংশগুলো বারবার পড়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল অংশগুলো হ্যান্ডনোটে লেখার জন্য চিহ্নিত করা। নোট তৈরির জন্য তথ্য সংগ্রহের উৎসগুলোকে পাঁচটি শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে-১. টেক্সট বই, ২. পুরনো নোট, ৩. ক্লাসনোট, ৪. লাইব্রেরি এবং ৫. ওয়েবসাইট।
সবার পক্ষে হয়তো উল্লেখিত সব উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব তথ্য আহরণ করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রগুলো যত সমৃদ্ধ হবে, নোটের মানও সে অনুযায়ী ভাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
শিক্ষার্থীরা সাধারণত দুই ধরনের হ্যান্ডনোট তৈরি করে থাকে। দুই ধরনের হ্যান্ডনোটে মূল পার্থক্য হচ্ছে এর উপস্থাপন কৌশল। এর একটি হচ্ছে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক, যা নোট বই বা গাইড বইয়ের মতো প্রশ্ন ও উত্তরের সমন¦য়ে তৈরি করা হয়। অন্যটি হচ্ছে কোন বিষয়ের বিষয়ভিত্তিক সাধারণ আলোচনা। সামগ্রিক বিচারে বিষয়ভিত্তিক সাধারণ নোটই পাঠ অনুশীলনের জন্য সেরা। এতে বিষয়গুলোকে প্রশ্নোত্তরভিত্তিতে উপস্থাপন না করে টেক্সট বইয়ের মতো সাধারণভাবে আলোচনা করা হয়। যেসব শিক্ষার্থীর ভাষাজ্ঞান ভাল এবং সাবলীলভাবে লেখার ক্ষমতা বেশি, তাদের জন্য এ ধরনের হ্যান্ডনোটই উত্তম। তবে যারা নির্ধারিত প্রশ্নকাঠামোর বাইরে উত্তর লিখতে অনভ্যস্ত, তারা সাধারণত প্রশ্নোত্তরভিত্তিক নোটকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কিন্তু পরীক্ষায় প্রশ্নের ধরন ভিন্নতর হলে তারা উত্তর দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে।
হ্যান্ডনোট তৈরির ক্ষেত্রে সহজবোধ্য ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপনা জরুরি। আর এজন্য দরকার পর্যাপ্ত ভাষাজ্ঞান ও পাঠচর্চা। বিভিন্ন উৎস থেকে পাঠের সময় কোন শব্দের অর্থ জানা না থাকলে কিংবা সন্দিহান থাকলে ওই শব্দটির যথাযথ ভাষাগত ব্যবহার সম্ভব নয়। তাই এসব ক্ষেত্রে শব্দের অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে জেনে নিতে হবে, জানতে হবে এর ভাষাগত ব্যবহারও। এভাবে দীর্ঘ চর্চায় ভাষার ওপর দখল প্রতিষ্ঠা হয়। ভাল প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি একটি হ্যান্ডনোটকে চূড়ান্তভাবে লেখার সময় অবশ্যই সুন্দরভাবে লিখতে হবে এবং এর মধ্যে যুক্ত করতে হবে প্রয়োজনীয় চিত্র, মানচিত্র, গ্রাফ বা লেখচিত্র কিংবা তথ্যসারণি। এগুলোর ব্যবহার, মার্জিন লাইন, আন্ডারলাইন, একাধিক রঙের কালি কিংবা মার্কার বা রঙের ব্যবহারে অলঙ্কৃত হ্যান্ডনোটটি পড়ার সময় অবশ্যই মনোযোগ আকর্ষণ করবে।
নোটের নবায়ন : পুরনো ভাল নোট নতুন হ্যান্ডনোট তৈরির সহায়ক হতে পারে। ভাল একটি পুরনো নোটকে সযতেœ নতুন করে লেখা হলে তা পর্যায়ক্রমে উন্নততর হতে পারে। তবে নতুন করে লেখা বা নবায়নের সময় অবশ্যই লিখতে হবে সর্বশেষ তথ্য ও পরিসংখ্যান যোগ করে। তাহলেই তা হয়ে উঠবে সমৃদ্ধ নতুন নোট।
পাঠ অনুশীলন এবং পাঠ আয়ত্তের জন্য নিজেই তৈরি করো সব প্রয়োজনীয় হ্যান্ডনোট। ধৈর্য ও মনোযোগ দিয়ে মানসম্পন্ন নোট তৈরি করতে পারলে তা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানার্জনে সত্যিকারের সহায়ক হবে, আর পরীক্ষার ফলাফলে অর্জিত হতে পারে ঈর্ষণীয় সাফল্য।
জুলহাস প্রামাণিক
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228