ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পোড়াকপাল

মুহসীন মোসাদ্দেক
🕐 ৭:২৯ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২০

একবার একটা কাজে আমাকে ঢাকায় যেতে হল। এর আগে আরও কয়েকবার গেলেও এক রাতের ট্রেনে গিয়ে পরের রাতের ট্রেনে ফিরে এসেছি। ফলে থাকার প্রয়োজন পড়েনি। কিন্তু সেবার সাতদিনের জন্য থাকার প্রয়োজন পড়ল! অথচ ঢাকা শহরে বলার মত কোনো থাকার জায়গা আমার নেই! কতিপয় পরিচিত লোক অবশ্য আছে, কিন্তু তাদের কাছে সাতদিন থাকার বায়না করতে ইতস্তত বোধ করছিলাম।

এমনিতেই নাকি ঢাকা শহরে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো মাস চালাতে হিমশিম খায়। তার মধ্যে সাতদিনের জন্য একজন অতিথি তাদের বুকে এক পাহাড় চাপের মত! মফস্বলে ছোট একটা চাকরি করি, হোটেল বা বোর্ডিংয়ে থাকার মত আর্থিক অবস্থাও নেই!

টুকটাক লেখালেখির সুবাদে ঢাকার কজন কবির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। অনেক দিক চিন্তা করে চল্লিশোর্ধ্ব এক কবির বাসায় থাকার বায়না করলাম। কবি না করলেন না, শুধু বললেন, ‘আমি একা থাকি, নিজেই রান্না করে খাই! আপনার কিন্তু কষ্ট হবে!’

আমি আশ্বস্ত করলাম, এগুলো আমার কাছে কোনো কষ্টের বিষয় না! আমার শুধু ঠাঁই দরকার।

উঠে পড়লাম সেখানে। এক রুমে শুধু একটা তোষক, আলনা, চুলা, কিছু বাসনপত্র আর চারদিকে ছড়িয়ে থাকা বইÑ আর কিছু নেই! তবুও মনে হলো তিনি সমৃদ্ধ।

একটা পত্রিকায় চাকরি করেন কবি। বিয়ে করেননি এখনো! দুপুর দুইটায় তার অফিস। সুতরাং তিনি সকালে ওঠেন না, অনেক বেলা করে ওঠেন। দুপুরে বাইরে খান। তবে রাতের জন্য তরকারি রান্না করে রেখে অফিসে যান। ফিরতে ফিরতে রাত নয়টা। এসে রাতের জন্য ভাত রান্না করে নেন শুধু।

আমিও এমন একটা কাজে এসেছি যেখানে ভোরে বের হয়ে সারাদিন শেষে ফিরতে ফিরতে রাত দশটা-এগারটা! সুতরাং কবির সঙ্গে আমার কথা এবং একসঙ্গে ভোজন শুধু রাতেই সীমাবদ্ধ!

তো, প্রথমদিন রাতে খেতে বসে তিনি বেশ কাচুমাচু করছিলেন, ‘কিছু মনে করবেন না, ভাত তুলে দিয়ে একটা বই নিয়ে বসেছিলাম! ফলশ্রুতিতে ভাত একটু পুড়ে গিয়েছে!’

‘আরে ভাই, ব্যাপার না!’ আমি সহজ করি তাকে।

হাঁড়ি খুলে অবশ্য দেখা গেল, একটু না অনেকটাই পুড়েছে!

পরের দিনও দেখা গেল, কবি ভাত পুড়িয়েছেন, কবিতা লিখতে মনোযোগী ছিলেন কিনা!

উনি লজ্জাবোধ করছেন দেখে বললাম, ‘আসলে এমন একটা কাজে এসেছি, আপনাকে সময় দিতে পারছি না! আর শহরের রাস্তার যে অবস্থা, বুঝতেই পারছেন তাড়াতাড়ি আসতে চাইলেও দেরি হয়ে যাচ্ছে! আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলছি!’

‘আরে! না, না! কষ্টের কিছু না! আমি তো আমার জন্য রান্না করিই প্রতিদিন, আপনি যোগ হওয়াটা এমন কিছু বাড়তি না! আপনাকেই বরং কষ্ট করে পোড়া ভাত খেতে হচ্ছে প্রতিদিন!’

এরপর তিনি কথা দিলেন, আগামীকাল আর ভাত পুড়বে না!

তিনি অবশ্য কথা রেখেছিলেন, পরের দিন আর ভাত পোড়েনি!

কিন্তু তরকারি পুড়েছিল! পটল দিয়ে মাছের তরকারিটা অনেকটা কয়লা-বর্ণ ধারণ করেছিল!

এরপর যে কয়টা দিন সেখানে ছিলাম, কিছু না কিছু পুড়েছিল!

বিদায়বেলায় কবি বলেছিলেন, ‘পোড়াকপাল নিয়ে যাচ্ছেন! ভালো থাকবেন! আবার আসবেন!’

ফেরার পথে পুরোটাই আমি কেবল ভাবছিলাম, পোড়াকপাল কার, আমার নাকি কবির!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper