ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হ্যাপিল্যান্ডের বাঁশিওয়ালা

শিমুল শাহিন
🕐 ৭:২২ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২০

২০২০ সাল।
হ্যাপিল্যান্ড নামের ছোট্ট একটা দেশ ছিল। আকারে ছোট্ট কিন্তু এতটাই সুন্দর যেন প্রকৃতি নিজ হাতে সাজিয়েছে দেশটিকে। নাম হ্যাপিল্যান্ড হলেও দেশের মানুষরা সুখী ছিল না। সুখে না থাকার প্রধান কারণ হল দেশটির প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই দুর্নীতিগ্রস্ত। দেশের সমুদয় অর্থ-সম্পদই ছিল তাদের কুক্ষিগত। সেই দুঃখের সঙ্গে তাদের জীবনে নতুন আরেকটি বিপদ এসে যোগ হল করোনাভাইরাস!

বাসে করোনা, ঘাসে করোনা, গীর্জায় করোনা, বাসায় করোনাÑ বাইরে বেরোবার কোনো উপায় নেই। দেশজুড়ে লকডাউন করে রাখা হয়েছে। কেউই বের হয় না বাসা থেকে। দেশের প্রধান পড়লেন ভারি বিপদে। তার চোখে ঘুম নেই। একটার পর একটা নেতৃস্থানীয় লোকদের নিয়ে তিনি সভা করছেন। কিন্তু করোনা থেকে পরিত্রাণের উপায় কেউই বলে দিতে পারছেন না! ঘরবন্দি মানুষজন চেয়ে আছেন দেশপ্রধানের দিকে। কিন্তু তিনি অসহায়ত্ব বরণ করেছেন এরই মধ্যে।

হঠাৎ দেশে উদয় হল এক অদ্ভুত মানুষ। পরনে বিভিন্ন রঙের কাপড়ে জুড়ে দেওয়া লম্বা আলখেল্লা। মাথায় বড়সড় একটা চুঙ্গির মত টুপি। ঘাড়ে বড় একটা ঝোলা। সে ঝোলায় নানান আকৃতির বাঁশি। লোকটাকে দেখে সার্কাসের সঙয়ের মতো লাগছে অনেকটা।

লোকটা ঝোলা হতে একটি বাঁশি বের করে বাজাতে লাগল। বাঁশি থেকে অদ্ভুত সুর বের হল, সে সুর ধীরে ধীরে পৌঁছে গেল সকল বাড়িতে, অফিসে। ব্যালকনিতে, বারান্দায়, জানালা-দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে ছেলে-বুড়ো, মহিলারা শুনতে লাগল সেই সুমধুর বাঁশির সুর। সকলে বিমোহিত।

দেশরক্ষীরা রাস্তায় এমন অদ্ভুত মানুষ দেখতে পেয়ে তাকে তীক্ষèভাবে পর্যবেক্ষণ করল। তারপর তাকে নিয়ে গেল দেশপ্রধানের অফিসে। দেশপ্রধান সে সময় সভা করছিলেন তার নেতৃস্থানীয় সভাসদস্যের সঙ্গে। রক্ষীরা কলিংবেল বাজাতেই দেশপ্রধান দ্বাররক্ষীকে বললেন দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল দেশ রক্ষীরা, সঙ্গে সেই অদ্ভুত লোকটি। দেশপ্রধানের দিকে তাকিয়ে রক্ষীরা বলল, ‘হুজুর, রাস্তায় এ অদ্ভুত লোকটিকে দেখা গিয়েছে। গতিবিধি সন্দেহজনক। আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে নিশ্চয়ই।’

দেশপ্রধানের করোনা সমস্যা মোকাবেলায় এমনিতেই দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। তার ওপর এসব উটকো ঝামেলা দেখে তিনি বেশ বিরক্তই হলেন। বাঁশিওয়ালার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কে হে তুমি বাপু? কী চাও?’

বাঁশিওয়ালা বলল, ‘হুজুর, আমি জেনেছি এ দেশে করোনা উৎপাত চলছে। জনজীবন বিপর্যস্ত, আমি দেশের জনগণকে এ থেকে উদ্ধার করতে এসেছি।’ বাঁশিওয়ালার কথা শুনে সভার লোকজন হো হো করে হেসে উঠল। একজন তো বলেই বসল, ‘হাতি ঘোড়া গেল তল, পিঁপড়ে বলে কত জল!’ সভার লোকজনের কোনো কথায় কান না দিয়ে দেশপ্রধানের দিকে তাকিয়ে বাঁশিওয়ালা বলল, ‘হুজুর, আপনি বললে এ সমস্যার সমাধান আমি করে দিতে পারি। নয়ত আমায় যেতে অনুমতি দিন!’ দেশপ্রধান করোনা থেকে উদ্ধারে কোনো আশানুরূপ আশা বা ভরসা পাচ্ছেন না কারো কাছ থেকে। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বাঁশিওয়ালার কথাতেই সায় দিলেন। তারপর ভ্রƒ কুঁচকে বললেন, ‘বিনিময়ে কী চাও তুমি?’

কোনো ভাবান্তর না দেখিয়ে বাঁশিওয়ালা বলল, ‘এর বিনিময়ে আপনার দুর্নীতিগ্রস্ত সভাসদগুলোরে চাই!’

হেসে উঠলেন দেশপ্রধান। উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘বলো কী হে! ওটাও তো আমার দেশের আরেক সমস্যা। তুমি নিয়ে যেও যে কয়েকজন পারো। ভালোই হয়, এক ঢিলেই দুই পাখি মরবে!’

দেশপ্রধানের কথা শুনে সভায় মৃদু গুঞ্জন শুরু হল। বাঁশিওয়ালা দেশপ্রধানের অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে এল। ঝোলা থেকে বের করল অদ্ভুত এক বাঁশি। ফু দেওয়া মাত্রই চমকিত হল সবাই। বাঁশি বাজছে, আনাচেকানাচে থেকে একেক আকৃতি ধারণ করে ছুটে আসছে করোনাভাইরাস। তারপর বাঁশিওয়ালা হেঁটে গেলেন নদীর দিকে, পেছনে সব ভাইরাস এগিয়ে চলল। নদীর কূলে গিয়ে বাঁশিতে অদ্ভুত সুর তুলল বংশীবাদক, সব ভাইরাস ছুটে গেলো নদীতে। ঢেউয়ে মিলিয়ে গেল চোখের পলকে।

বাঁশিওয়ালার এমন দক্ষতায় সবাই তাকে বাহবা দিল। বাঁশিওয়ালা পা বাড়াল দেশপ্রধানের অফিসের দিকে। দেশপ্রধান এরই মধ্যে খবর পেয়েছেন বাঁশিওয়ালা তার কাজে সফল হয়েছে। তিনি এদিকে ব্যস্ত দুর্নীতিগ্রস্ত সভাসদদের তালিকা বানাতে। বাঁশিওয়ালাকে দেওয়া ওয়াদা মোতাবেক তার হাতে তুলে দিতে হবে সকল দুর্নীতিগ্রস্তকে। তালিকা বানাতে গিয়েই তিনি ভিমড়ি খেলেন। তিনি দেখলেন তার সভাসদদের প্রত্যেকেই দুর্নীতিগ্রস্ত।

আজ বুঝতে পারলেন হ্যাপিল্যান্ডের উন্নতি কেন থমকে আছে, লোকজন সুখী নয় কেন। বাঁশিওয়ালা অফিসে এসেই দেশপ্রধানকে বলল, ‘হুজুর, আপনার ওয়াদা পূরণ করুন। আমার হাতে দুর্নীতিগ্রস্তদের তুলে দিন!’

দেশপ্রধান পড়লেন মহাবিপাকে। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। এ যে ঠগ বাছতে গা উজাড়। ওয়াদা মোতাবেক তার সব সভাসদকেই তুলে দিতে হবে এখন। বাধ্য হয়েই তিনি গোঁ ধরলেন। বললেন, ‘শোনো হে ছোকরা, তুমি খুব বেশি পরিশ্রমের কাজ করনি। তোমাকে সর্বোচ্চ দুটো দুর্নীতিবাজ সভাসদ দিতে পারব! ওই বৃদ্ধ দুজনকে নিয়ে যাও!’

রেগে উঠল বাঁশিওয়ালা। বলল, ‘হুজুর, আপনি কিন্তু ওয়াদা রাখলেন না!’

বাঁশিওয়ালার মুখের ওপর কথা বলা দেখে রেগে উঠলেন দেশপ্রধান, ‘মুখের ওপর কথা বোলো না। নিলে নাও, নয়ত বিদেয় হও!’

বাঁশিওয়ালা অপমানিত হয়ে বের হয়ে এল অফিস থেকে। রাগে চোখ দুটো তার জ্বলছে, মনে হচ্ছে ঠিকরে আগুন বের হচ্ছে। অফিসের জানালা দিয়ে বাঁশিওয়ালার দিকে তাকিয়ে আছেন দেশপ্রধান। বাঁশিওয়ালাও সে দিকে তাকাল, চোখে চোখ পড়ল। একটা ক্রুর হাসি ফুটে উঠল বাঁশিওয়ালার ঠোঁটে। সে হাত বাড়াল পিঠের ঝোলার দিকে, বের করল আরেকটি বাঁশি!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper