স্ত্রীর কথায়, সাবেরের জিদ চাপে মাথায়। বলে বকের মত, মাথা উঁচিয়ে কথা কত। ‘আমি যাব, আম কুড়াব। দেখি আমারে কে উড়াতে পারে, আম নিয়ে তবেই ফিরব ঘরে।
কই রে তোরা আমার ছেলেরা।’ সাবেরের কথা শুনে, ছেলেরা সাজে নানা বরণে। এরপর একসঙ্গে হয়ে আনতে যায় আম কুড়ায়ে। চলল সবাই বাতাসের বেগে- কে আম কুড়াতে পারে আগে। বাগানে অনেকেই এসেছে। আম কুড়াচ্ছে। হঠাৎ ঝড়ের ঝাপটা। সাবেরের মনে লাগে খটকা।
আসল বুঝিবা বিপদ। মুখে আল্লাহ-নবির সিফত। লুঙ্গির কোঁচাটাও হলো ঢিলা। এ যে বাতাসের লীলা-খেলা। বৃষ্টি এল। ঝড়ও বেগ পেল। বেশ কটা আম হাতে। পারে না তাই লুঙ্গিটা ঠিক করতে। ছেলেরাও আশপাশে কেউ নেই যে। গেছে অন্য গাছের খোঁজে। সাবের পড়ল পিছলে। লুঙ্গিটা গেল খুলে। বাজ পড়ল কোথাও।
সাবের ভাবল এটাও, লুঙ্গি কেড়ে নিলে তো আবার ছবিও তুলে রাখলে। লুঙ্গি যেখানে যাবে যাক। প্রাণটা বেঁচে থাক। সাবের তাই কিছু একটা হাতড়ায়। পেল এক গাছের ডাল। সাবেরের এ কী হাল। ঝাপটে ধরল তা। ছেলেরা গেছে কোথা। ডালটাও যায় উড়ে, সাবের এবার কী করে। ছেলেরা পালিয়েছে। বড় গাছের গোড়ায় বসে আছে। নিজে বাঁচলে বাপের নাম।
গ্রামের সুনাম। ঝড়ের তাণ্ডব। সবকিছু লণ্ডভণ্ড। আঁধার যায় বেড়ে। সাবের, দুহাত দিয়ে ইজ্জত ঢাকিয়ে বাড়ি আসে লুকিয়ে। স্ত্রী বলে, মুখে আঁচল তুলে, ‘এ কী! তোমার লুঙ্গি কই? যেও না বললাম করে পইপই। এখন দেখো। কিছু শেখো। ছেলেদের আনলে না? আম লাগবে না।’ স্ত্রীর কথার জবাব দিল না সাবের। ঝড়ের সময়ে আম কুড়ানো কি কম আনন্দের!