সারাদিন শুধু খেলা আর খেলা। আর কোনো কাজ নেই? এমন করলে বাবাকে চকলেট আনতে নিষেধ করে দেব। ছোট মামাকেও বলে দেব সূর্যমেলা থেকে যেন কিছু না নিয়ে আসে। আদরে আদরে মাথা খেয়ে ফেলেছ।
ও হ্যাঁ সূর্যমেলা হল টুনটুনির নানাবাড়ির ঐতিহ্যবাহী মেলা। যেটা গ্রামে বছরে একবার হয়। টুনটুনির জন্য মামা অনেক খেলনা নিয়ে আসে ওই মেলা থেকে। যা অন্যান্য মেলায় কমই পাওয়া যায়।
টুনটুনির একমাত্র সঙ্গী হল চাঁদ। মন খারাপ হলেই চাঁদের সঙ্গে গপ্পো করে। আজও টুনটুনি মন খারাপ করে বসে রইল জানালার পাশে। আজকের মন খারাপের বিষয় অবশ্য অন্যটা। চাঁদ মামা টুনটুনির মুখ আলোকিত করে সামনে দাঁড়াল।
আজ কী হল টুনটুনি? মুখ গোমড়া কেন! মা বকেছে?
না চাঁদ মামা!
তাহলে?
টুনটুনি গালে হাত দিয়ে বলল, বাড়ির সবাই কক্সবাজারে বেড়াতে যাবে।
হুম।
সমুদ্র দেখবে।
হুম।
সমুদ্রে ডুবে ডুবে গোসল করবে।
হুম।
টুনটুনি চাঁদ মামাকে ধমকের সুরে বলল, আরে বাবা হুম হুম করছ কেন, মুখে কী হয়েছে?
না না কিছু হয়নি। তোমার বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে আমি খুশি হলাম তাই।
কী বলছো তুমি? যাও আমার মন খারাপ। তোমার সঙ্গেও এক, দুই, তিন, চার আড়ি।
কেন বাপু? এটা ঠিক না। আর কেউ বেড়াতে গেলে মন খারাপ করে? এটা তো খুশির সংবাদ।
আমি যাব না।
চাঁদ মামা বলল, আবার একই কথা।
বুদ্ধু বোঝো না, বেড়াতে গেলে তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে না তাই।
চাঁদ মামা ফোকলা দাঁতে ফিক করে হেসে দিল। চাঁদকে হাসতে দেখে টুনটুনির মন আরও খারাপ হল। মুখ ভার করে পেছনে ফিরে গেল।
তখন চাঁদ মামা ছড়া কাটল, ‘ওই টুনটুনি বোকা, আমার দিকে তাকা, আমিও যাব তোমার সঙ্গে, কার কি আছে মানা।’
দেখো চাঁদ মামা, আমি কিন্তু কেঁদে দেব, ইয়ার্কি করো না।
আরে গাধা মেয়ে, তোমার সঙ্গে আমিও যাব।
টুনটুনি চোখ বড় করে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে, কীভাবে? আমাদের গাড়িতে করে? আব্বু আম্মু তো তোমাকে নেবে না। আমাকে বকবে।
টুনটুন সোনা, তুমি যাবে গাড়িতে, আমি যাব পক্সক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে আকাশ পাড়ি দিয়ে।
ও মা তাই বুঝি?
হুম। দেখবে তোমার আগে আমি হাজির হব।
পরদিন সন্ধ্যাবেলায় টুনটুনি কক্সবাজারে পৌঁছে গেল। চাঁদ মামা আগেই হাজির।
টুনটুনি বাবার সঙ্গে গোসল করতে সমুদ্রে নামল। মাথার ওপর চাঁদ মামাকে দেখে খুশিতে টুনটুনি খিলখিল করে হেসে দিল।