ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ব্যাংকে কাগজ চালাচালি প্রণোদনার টাকা নেই

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ০৬, ২০২০

করোনাভাইরাসের আঘাত মোকাবেলা করার জন্য সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। কিন্তু প্রজ্ঞাপনের জটিলতা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজস্ব কর্মপন্থা তৈরি না করার কারণে উদ্যোক্তারা প্রণোদনার টাকা নিতে পারছেন না। উদ্যোক্তারা বলছেন, ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কথাই বলতে চাচ্ছেন না। পেলেও প্রজ্ঞাপনের জটিলতার অজুহাত দেখাচ্ছেন, ঋণ নেওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকের তরফ থেকে বলা হচ্ছে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে কাগজপত্র জমা পড়ছে, টাকা প্রস্তুত আছে যাচাই-বাচাই করে টাকা দেওয়া হবে। 

বিশ্বজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। বাংলাদেশেও বন্ধ রাখতে হয়েছে আমদানি-রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে তুলে দাঁড় করাতে সরকার কৃষি, এসএমইসহ শিল্পের জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকার তিনটি প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা করেছে। গ্রাহক পর্যায়ে যার সুদ হার নির্ধারণ করা হয়েছে চার থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ। কিন্তু প্রজ্ঞাপনের মারপ্যাঁচ ও বাণিজ্যিক ব্যাংক পর্যায়ের প্রস্তুতির অভাবে এ সব প্রণোদনা বিতরণের উদ্যোগই নেওয়া যাচ্ছে না।

সরকার এসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য শিল্পের জন্য ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ রেখেছে। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রণোদনা বিতরণ করা হবে। এ ঋণ সহায়তার সুদ হার নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ। ঋণের বিপরীতে সরকার আরও সাড়ে চার শতাংশ করে দেবে বলে ঘোষণা করেছে। গ্রাহকরা বলছেন, ঋণ নেওয়ার যে সব শর্ত আছে সেসব শর্ত মেনে ঋণের আবেদন করা হলেও জন্য ব্যাংকগুলো নানা কারণ দেখিয়ে ঋণ কার্যক্রম শুরু করছে না। শাখা পর্যায়ে এ ব্যাপারে নির্দেশনাই আসেনি বলে জানান কোনো কোনো গ্রাহক। ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রজ্ঞাপনের শর্তে জটিলতা আছে, এটা ঠিক হলে ঋণ কার্যক্রম শুরু হবে।

উদ্যোক্তারা জানান, তাদের বড় একটি অংশ প্রণোদনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। যারা ব্যাংকে যাচ্ছেন টাকার জন্য তারা এ ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন।

জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকার করেন শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিআই)-এর সিনিয়র সভাপতি ও বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, সমস্যা সমাধানে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এর সভাপতিসহ শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের কথা হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি, প্রণোদনা বিতরণের ক্ষেত্রে তারা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সেটা তারা দেখুন। আর উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি তা আমরা দেখি। তারপর এক সঙ্গে বসে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে ব্যবসা-বাণিজ্যকে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য, ব্যবসা-বাণিজ্যকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। কোন জটিলতার কারণে সরকারের উদ্যোগ ব্যাহত হোকÑ এটা আমরা কেউই চাই না। খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করতে পারব বলে আশা করি।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আতাউর রহমান প্রধান খোলা কাগজকে বলেন, প্রণোদনা বিতরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনার যে অংশটি পাওয়ার কথা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমরা ইতোমধ্যে পেয়ে গেছি। উদ্যোক্তার যে আবেদন পাওয়া গেছে সেগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। বড় ঋণের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে আমরা এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছি।

প্রণোদনা বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর অতি সতর্কতা এই সমস্যা তৈরি করছে বলে জানান অন্য একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা। তিনি বলেন, সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেও এ ঋণ দেবে ব্যাংকগুলো। এ জন্য ব্যাংকগুলো নিজেদের সুবিধা-অসুবিধা দেখছে। অন্যদিকে এসএমই ঋণের ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এবারও কম আগ্রহ দেখাচ্ছে। প্রণোদনা কার্যকর করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এতদিন ব্যাংকগুলো আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করে মুনাফা করেছে। এখন দুর্দিনে তারা সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসুক।

প্রণোদনাসহ সব ধরনের ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সুদ স্থগিত সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ঘোষণার কারণে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে বলে জানান একটি বেসরকারি বাণিজ্যক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি খোলা কাগজকে বলেন, সরকার অর্থনীতিকে সহায়তা দেওয়ার জন্য সুদ স্থগিতের ঘোষণা করেছে। নিশ্চয়ই এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে কোনো সুবিধা দেবে। আমরা সেদিকে চেয়ে আছি।

রাজধানীকেন্দ্রিক বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানা গড়ে উঠলেও ছোট এবং মাঝারি ব্যবসা-বাণিজ্য দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এ সব প্রতিষ্ঠান খাদ্য নিরাপত্তাসহ কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। করোনাভাইরাসের আঘাতে এ সব প্রতিষ্ঠান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা উৎপাদন করেও বাজারজাত করতে পারছে না কিন্তু ঠিকই তাদের কাঁচামাল ও শ্রমিকের বেতন-ভাতা দিতে হচ্ছে। তারা ব্যাংকে গিয়ে কোনো সাড়া পাচ্ছে না। সপ্তাহের দুই-তিনদিনের বেশি ব্যাংক কর্মকর্তাদের পাওয়াও যাচ্ছে না। তাদের মতে, করোনা মোকাবেলায় প্রণোদনা ঘোষণা করা হলেও প্রণোদনা এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভীতির কোয়ারান্টিনে আছে।

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের রাজধানীর বাইরে কুষ্টিয়া জোনাল অফিসের প্রধানের সঙ্গে ফোনে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, কুষ্টিয়া অঞ্চলে মৎস্য খামার, পোলট্রি খামারসহ বিভিন্ন ধরন প্রতিষ্ঠান আছে, যা করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সব গ্রাহক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু প্রধান কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না থাকার কারণে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি। জোনাল-শাখা অফিসগুলোও সপ্তাহের সব কার্যদিবসে চালু না থাকাটা এর অন্যতম কারণ।

 
Electronic Paper