ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিড়ালের মা আলেপা

বিবিধ ডেস্ক
🕐 ৫:৫৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২০

কোথাও অসুস্থ কুকুর, বিড়াল, পাখি দেখলে তিনি সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলেন। পশুপাখির প্রতি তার অসামান্য মমতা। নিজে না খেয়ে ওদেরকে খাওয়ান। না ঘুমিয়ে ওদের ঘুমাতে দেন। তিন যুগেরও বেশি সময়। প্রায় ৫০টি বিড়াল লালনপালন করছেন আলেপা খাতুন।

তখন তিনি স্কুলে পড়েন। পথের ধারে একটি বিড়াল পড়ে থাকতে দেখলেন। সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। অসুস্থ বিড়ালটি তার সেবা যতেœ এক সময় সুস্থ হয়। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে তিনি বিড়াল পুষছেন। এর আগে কুকুর, শিয়াল, ভেড়া, বেজি, মেছো বাঘও পুষেছেন। শিশুকালে মা তাকে ভাত খেতে দিলে তিনি তা বিড়ালকে খাওয়াতেন। এ জন্য মায়ের হাতে মারও খেয়েছেন অনেক। 

আলেপা খাতুন এলাকার মানুষের কাছে বিড়ালের মা বলেই পরিচিত। কাউন্সিলর হিসাবে নিজে সামান্য সম্মানী পান। সব টাকা তিনি বিড়ারের জন্য খরচ করেন। নিজে না খেয়ে বিড়ালকে খাওয়ান। যতক্ষণ অবধি বিড়ালের খাওয়া শেষ না হয় তিনি মুখে খাবার নেন না। বর্তমানে তার সংগ্রহে ৪২টি বড় বিড়াল রয়েছে। ছোট বাচ্চা রয়েছে আরো ১০টির মতো। সন্তানের মত তাদের লালনপালন করেন। পাবনার চাটমোহর পোৗরসভার ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনে পরপর দুবার নির্বাচিত কাউন্সিলর তিনি। টিনের দোচালা দুটো ঘর। একটিতে তিনি থাকেন। অন্যটিতে তার একমাত্র ছেলে মহরম থাকে। দুটো ঘরই ভাঙাচোরা। বৃষ্টির সময় হাঁটুপানি উঠে যায়।

২৫ বছর আগে তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। তখন ছেলের বয়স মাত্র এক মাস। সংসার করতে পারেননি। সন্তান আর বিড়াল তার সে দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে। নাম ধরে ডাক দিলেই বিড়াল চলে আসে। তার সঙ্গে খুঁনসুটি করে। মাঝে মাঝে বিড়ালের সঙ্গে তাকে বলও খেলতে হয়। বিড়াল যেন তার কথা বুঝতে পারে। ‘বাবা কোথায় গিয়েছিলে, বাবা ভাই কোথায় । খাও বাবা খাও।’ খাবার দিয়ে এমনি করে তিনি বিড়ালের সঙ্গে কথা বলেন। নিজের বিছানায় তিনি বিড়ালকে জায়গা দিয়েছেন। কোনো কোনো রাতে খাবার খাওয়াতে বারোটা একটা বেজে যায়।

বিড়াল বাচ্চা দিলে ঘর নোংরা হয়। অনেকের অপছন্দ বিড়াল। তারা বিড়াল আলেপার বাড়ির সামনে ফেলে যায়। আর আলেপা তা পরম মমতায় কোলে তুলে নেন। ছোট বিছানা। একজন মানুষই ভালোমত ঘুমানো মুশকিল। সেখানে আলেপা বিড়াল নিয়ে থাকেন। মশারি টানিয়ে দেন। যেন ওরা আরামে ঘুমাতে পারে। নিজের ঠিকমত ঘুমানো হয় না। কয়েকবার বিছানা থেকে পড়েও গেছেন। তবু বিড়ালের যেন কষ্ট না হয়। সেদিকেই তার খেয়াল। মারামারি করলে শাসনও করেন। রাগ করলে ওরা বুঝতে পারে। এমনকি গালি দিলেও বোঝে!

প্রতিদিন সাড়ে তিন কেজি চাল, তিন কেজি মাছ লাগে বিড়ালের জন্য। অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে হয়। এলার্জি হলে একশ টাকার ওষুধ লাাগে। হিমশিম খেতে হয়। ছেলের কাছে হাত পাততে হয়। লজ্জা লাগে। ওষুধ দিলে বিড়াল বুঝতে পারে এটা ওষুধ। সময়মত খেয়ে যায় জানালেন আলেপা। অন্যের বাড়িতে আলেপার বিড়াল কিছু খায় না।

লুকিয়ে কিংবা খেতে দিলেও। শুধু আলেপার হাতেই তারা খাবার গ্রহণ করে। জানা গেল আলেপার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জন এসেছেন। আলেপার প্রাণী প্রেমের প্রশংসা করেছেন। সাহায্য করার কথা বলেছেন জোর গলায়। ব্যস এটুকুই। প্রত্যাশিত সাহায্য আর তিনি পাননি। থানা নির্বাহী অফিসার অসীম কুমার ৩টা কম্বল আর ৫ কেজি চাল দিয়েছিলেন। সাহায্য বলতে এটুকুই। জানান আলেপা খাতুন।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper