ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঘরে চালু মনিপুরি তাঁত

হৃদয় ইসলাম, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার
🕐 ৩:২৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৮, ২০২০

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে আদমপুর মণিপুরি কমপ্লেক্সে গত ২৪ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে তাঁতবস্ত্র বুনন। তবে তাঁতীরা নিজ বাড়িতে তাঁতবস্ত্র তৈরি করছেন। কিন্তু তারা তৈরি বস্ত্র বাজারে সরবরাহ করতে পারছেন না। এতে এলাকার প্রায় দেড় হাজার তাঁতী দুর্ভোগে পড়েছেন।

সম্প্রতি আদমপুর মণিপুরি কমপ্লেক্সে গেলে সেখানকার মণিপুরি তাঁতবস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান প্রশিক্ষক সৌদামনি সিন্হা বলেন, এখানে নিচতলায় ৭টি তাঁত ফ্রেম রয়েছে। এখানে বেশ উন্নত মানের তাঁতের শাড়ি, ওড়না ও ইনাফি তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে তাঁতের ৫টি ফ্রেম। দ্বিতীয় তলার ফ্রেম তাঁতে সিল্কের ও ভারতীয় সুতা দিয়ে উন্নতমানের ওড়না ও ইনাফি তৈরি হয়। এ কমপ্লেক্সে ১৬ জন তাঁতী কাজ করেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনায় ২৪ মার্চ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক এই তাঁত কারখানা বন্ধ রয়েছে।

মৈতৈ, বিষ্ণুপ্রিয়া ও পাঙাল (মণিপুরি মুসলিম) এই তিন সম্প্রদায়ের কমপক্ষে এক হাজার তাঁতী নিজ নিজ বাড়িতে কোমর ও ফ্রেম তাঁতে কাজ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক কারখানায় কাজ বন্ধ থাকলেও তারা বাড়ির তাঁতে কাজ করছেন। বাজার বন্ধ থাকায় চাহিদা মতো সুতা পাওয়া যাচ্ছে না। তার ওপর তৈরি তাঁতবস্ত্র বাজারজাতও করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে তারা মহাজনের কাছে আটকা রয়েছেন। 

সৌদামনি সিনহা আরোও বলেন, যে শাড়ির দাম আগে ১৪০০ টাকা ছিল এখন তা মহাজনের কাছে ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তাও আবার সময় মত টাকা পাচ্ছেন না তারা।

আদমপুরের তেতইগাঁও গ্রামে মণিপুরি তাঁতী জয়ন্তি দেবী ও আশা রানী দেবীকে দেখা যায় তারা দুইজনই নিজ বাড়িতে ফ্রেম তাঁতে ওড়না তৈরিতে ব্যস্ত আছেন। তারাও জানান, এখন বাজার বন্ধ থাকায় মহাজনের ইচ্ছেমত দামে ও অনেক কম দামে বস্ত্র বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজার খোলা থাকলে বস্ত্র হাতে রেখে যাচাই করে বিক্রি করা যেত। করোনো পরিস্থিতিতে এখন মণিপুরি তাঁতীরা দুর্ভোগের শিকার।

আদমপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের বাঙালী তাঁতী নুর নাহার ও বন্ধেরগাঁও গ্রামের বাঙালী তাঁতী শারমিন আক্তার বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে তারাও মনিপুরি তাঁতবস্ত্র তৈরি করেন। আদমপুর ও ইসলামপুর ইউনিয়নে কমপক্ষে ৫০০ বাঙালি তাঁতী রয়েছেন বলে তারা জানান। তারা বর্তমানে বাড়িতে তাঁতবস্ত্র বুনলেও বস্ত্র বাজারজাত করতে পারছেন না। এখন তারা মহাজনের দয়ার উপর নির্ভরশীল। সুতার দাম তেমন না বাড়লেও তৈরি বস্ত্র বাজারে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে মহাজনের দেওয়া দামে বস্ত্র বিক্রি করতে হচ্ছে।

তবে আদমপুরের সূতা ব্যবসায়ী ও তাঁতবস্ত্র ক্রয়কারি মহাজন মজর আলী বলেন, সূতার দাম বাড়েনি। বাজার বন্ধ থাকায় তাঁতীরা তৈরি বস্ত্র বিক্রি করতে পারছেন না। তিনিও তৈরি বস্ত্র সামান্য মূল্য হাতে রেখে ক্রয় করছেন।

 
Electronic Paper