মানুষের পাশে দাঁড়ান
সাঈদ চৌধুরী
🕐 ১:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৬, ২০২০
তেজগাঁওয়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল হতে শুরু করলে একটি পক্ষ বাধা দিয়ে বন্ধ করে দিল নির্মাণকাজ। হাসপাতাল হতে দেবে না। শোনা যাচ্ছে করোনায় মৃত্যুর পর কবর দিতে দেওয়া হবে না এ কারণেও মানববন্ধন হচ্ছে, তীব্র জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হতে চেয়ে বিভিন্ন হটলাইনে ফোন দিয়ে, এ্যাম্বুলেন্স চেয়েও পাওয়া যায়নি একজন মানুষের ক্ষেত্রে!
সর্দি জ্বরেও অনেকে চিকিৎসা পাচ্ছে না! অথচ সবাই আমরা এদেশেরই নাগরিক। একজন মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন পাশের মানুষটির কষ্ট কেউ দেখেনি বা অনুভব করেনি এমন মানুষ আছে পৃথিবীতে, খুব আশ্চর্য মনে হয়। আমরা বিপদ দেখে এমন ভড়কে যাচ্ছি এখন কেউ কি সামান্য নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবে আমি রোগাক্রান্ত হব না!
এদিকে আবার দেখুন কোথাও কোথাও আইনের প্রয়োগের অবস্থা! এসিল্যান্ড দুই বৃদ্ধকে দাঁড় করে রাখলেন কান ধরে মাস্ক না পরার ‘অপরাধে’। সেটির আবার ছবি তোলাও হল! কোথাও কোথাও পুলিশ মানুষকে পেটাল মাস্ক পরার জন্য! কঠোরতার দরকার আছে কিন্তু তাই বলে সব জায়গায় গিয়েই লাঠির ভয় দেখানোর যৌক্তিকতাও কিন্তু নেই। সবাই পেটের দায়েই বাইরে বের হতে চায়। যারা এমনিতে বাইরে বের হয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দায়িত্ব হলেও মানবাধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় যেন আসে না অনেক ক্ষেত্রেই!
অসুস্থ হতে পারে যে কেউ যেকোনো সময়। দেশের ক্ষমতাধর মানুষ যদি এসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন সব সেবা চেয়েও না পেলে তিনি যে কষ্ট পাবেন তার চেয়েও কোনো অংশে কম কষ্ট কি পেয়েছেন যে মানুষটি মারা গেল তার স্ত্রী! আজিজ গ্রুপের হাসপাতাল তৈরি করতে দেওয়া হল না এর পেছনের কোনো কারণ কি আপনার-আমার জানা আছে সে হাসপাতালে কি কোনো সাধারণ মানুষ গিয়ে চিকিৎসা দিত নাকি ডাক্তাররাই সেখানে থাকতেন? কী ভয় মানুষের মধ্যে ঢুকেছে!
অথচ দিন শেষে এরাই বিনা কারণে চা স্টলে বসে সময় কাটায়! কবরে লাশ নামাতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন কথাটির অর্থ কী একবার আমরা সবাই অনুভব করছি বিপদকালে পৃথিবীর সকল প্রাণী যখন কাছাকাছি থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তখন আমরা এ কোন নীতিতে চলছি? সামান্য সর্দি জ্বর আর গলা ব্যথা হয়েছে একটি মেয়ের তার স্বামী তাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। তার মানে স্বামী চাইছে সে একা বেঁচে থাকতে! কী আশ্চর্য, আমাদের আদর্শিক পরিবর্তন! সবাই মৃত্যুভয়ে মরেই গিয়েছি! আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, যারা আজ শুধু ভয়টুকু পুঁজি করে বেঁচে আছে তারা করোনায় আক্রান্ত না হলেও মরে গিয়েছে আরও অনেক আগেই! বেঁচে থাকার যে সংজ্ঞাগুলো রয়েছে এবং মানুষ যেভাবে এ পর্যন্ত এসেছে তার অভিধানে ভয় ব্যাপারটি ছিল না। যারা সাহসী এবং কাজ করতে জানে তারাই বাঁচে এবং বাঁচায়!
যেখানে হাসপাতাল হওয়ার কথা ছিল সেখানে বাধা কেন দেওয়া হল তার কারণ বের করা প্রয়োজন। কেউ রাতে চিকিৎসা সেবা চেয়ে পাবে না এটা মর্মান্তিক একটা ঘটনা বলা যায়! যারা সেবা খাতে রয়েছেন আমার জানামতে কোনো গ্রাম্য ডাক্তারও তার রোগীকে ফিরিয়ে দেন না তবে এমন অভিযোগগুলো কেন ভারী হচ্ছে?
রাষ্ট্রের কর্ণধারদের কাছে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা আশা করছি। সব ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন নিয়ে যাওয়ার যে বিষয়টি সে ব্যাপারেও বলছিÑ নীতি নির্ধারণে যারা কাজ করেন তারা যদি সবাই মিলে কাজ করেন তবে এ সমস্ত বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন হয় না! আশা করি, সবাই চিকিৎসা সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের অন্ধকার কেটে যাবে।
করোনা ভাইরাসও বেশি দিন থাকবে না। তবে যারা আজ কবর দিতে ভয় পাচ্ছেন তারা জেনে রাখবেন আপনাদের মধ্যে যে ভাইরাস ঢুকেছে তার নাম আজীবন বেঁচে থাকার কৌশল শেখা! আজীবন বেঁচে থাকার কৌশলে সবচেয়ে বিপজ্জনক চিন্তা হল আমি যেকোনো সময় মরে যেতে পারি! আপনাকে একটি কথাই প্রতিদিন হত্যা করে সে কথাটি হল আপনি অনেক বেশি বাঁচতে চান যেকোন মূল্যে! হ্যাঁ আপনাকে বাঁচতে হবে এবং তা হল সবাইকে নিয়ে, একটি নিয়মের মধ্যে, মানুষের কল্যাণ চিন্তায়!
কেউ যাতে চিকিৎসার অভাব বোধ না করে, কেউ যাতে এমন চিন্তা না করে যে যাদের রোগ হয়েছে তাদের ফেলে দিতে হবে, কেউ যাতে এমন না ভাবে যে এখানে হাসপাতাল হলেই সব রোগ বুঝি এখানেই ছড়িয়ে পড়বে! আইনের প্রয়োগটিও যেন হয় খুব স্পষ্টভাবেই।
সরকারের উচিত এ বিষয়গুলো সু¯পষ্ট তদন্তে আনা যখন খুব বেশি বিপদে থাকে দেশ তখন এক হয়ে কাজ করলেই কেবল জয় আসে আর এভাবে আলাদা হলে আমরা সবাই নিঃশেষ হব এসময়! আশা করি, আমাদের মানুষগুলো দেশকে ভালোবাসতে থাকবে, তারা মানুষের কল্যাণের চিন্তা করবে এবং ভালো কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে সরকার ও উদ্যোক্তাদের সহায়তা করবে।
সাঈদ চৌধুরী : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও রসায়ানবিদ
শ্রীপুর, গাজীপুর