ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কিডনি রোগীদের করণীয়

ডা. ফজলে এলাহী খাঁন
🕐 ১:৩৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৬, ২০২০

বিশ্বব্যাপী এখন চরম আতঙ্কের নাম কোভিড-১৯। যা করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত। বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে প্রাধান্য বিস্তার করেছে এই ভাইরাস। এশিয়ার বিভিন্ন অংশ এবং এর বাইরেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনা। সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করে আপনি ভাইরাসটির সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকি অনেক অংশেই কমিয়ে আনতে পারেন।

কতটা ভয়ংকর এই ভাইরাস?
শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অসুস্থতার মত এই ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা এবং জ্বরসহ হালকা লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিছু মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অর্গান বিপর্যয়ের মত ঘটনাও ঘটতে পারে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ মারাত্মক হয়। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে বয়স্ক ও আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ কিডনি। যাকে বাংলায় বলে বৃক্ক। পিঠের নিচের দিকে মেরুদ-ের দুই পাশে একটি করে দুটি শিম বিচির আকৃতির অঙ্গটিই কিডনি বা বৃক্ক, যার আকৃতি ৮ থেকে ১২ সেন্টিমিটারের মতো। প্রতিটি কিডনির ভেতরে রয়েছে লাখ লাখ কোষ , যা নেফ্রন নামে পরিচিত। এই নেফ্রনগুলো শরীরের রক্ত ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বিপাকীয় আবর্জনাগুলো বের করে দেয়, তাই কিডনিকে আমাদের শরীরের পরিশুদ্ধির অঙ্গ বলা চলে।
করোনা ভাইরাসে কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীরা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু ঘটার আশঙ্কাও বেশি।

কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্কতাসমূহ
* নিয়মিত ভালোভাবে হাত ধোয়া।
* হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা।
* মাস্ক ব্যবহার করে নিজের ও অন্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
* যতটুকু সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলা।
* সিরাম ক্রিয়েটিন-ইলেট্রলাইটসসহ কিডনি রোগের নিয়মিত চেকআপ করা।
* ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
* পশু-পাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
* চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ সেবন না করা।
* ঠা-া বা ফ্লু আক্রান্ত সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
* ডায়ালাইসিস গ্রহণকারী রোগীদের নিয়মিত শিডিউল অনুযায়ী ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহণ করা।
* সাধারণ সর্দি-কাশি বা জ্বর হলে বিচলিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা।
* রোগীদের নির্ধারিত খাদ্যতালিকা মেনে চলা।
* কোনো সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
তাছাড়া সব সময়ের মত ভয়াবহ কিডনি বিকল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে কয়েকটি পদ্ধতি মেনে চলা আবশ্যক।

কিডনি সুরক্ষায় করণীয়
* কায়িক পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যায়াম করা।
* উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
* স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
* পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা।
* ধূমপাণ থেকে বিরত থাকা।
* নিয়মিত কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা।
কিডনি রোগীদের খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবেÑ দৈনন্দিন পরিচালনার জন্য খাদ্যতালিকা বা রুটিন অনুযায়ী খাবার খেতে হবে। যে সব খাবার খাবেনÑ সবজি, লাউ, চিচিঙ্গা, করলা, বিচি ছাড়া শসা, সজনা, ডাটা শাক, লাল শাক, কচুশাক , জিঙা, পেঁপে, হেলেঞ্চা শাক ইত্যাদি।
সে সব সবজি খাবেন না (রক্তে পটাশিয়াম বেশি থাকলে) : ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, কচু, মুলা, পুঁইশাক, ঢেঁড়স, গাজর, কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচি, মুলাশাক ইত্যাদি। প্রাণিজ আমিষ, যেমনÑ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি। সীমিত পরিমাণে খাবেন। ডাব, কলা, আঙ্গুর তো একেবারেই খাবেন না। কেননা, এতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। কিডনি রোগীদের রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। কিডনি রোগীদের রক্ত পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়তে থাকে- পেঁপে, নাসপাতি ইত্যাদি। রোগীর খাদ্যতালিকায় প্রোটিন রাখতে হবে রোগের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে। যেমনÑ রোগীর রক্তের ক্রিয়েটিনিন, শরীরের ওজন, ডায়ালাইসিস করেন কিনা, করলেও সপ্তাহে কয়টা করেন তার ওপর নির্ভর করে প্রোটিনের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।

ডা. ফজলে এলাহী খাঁন : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (কিডনি বিভাগ)
আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী

 
Electronic Paper