ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পোশাক কারখানা খুলছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক 
🕐 ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৪, ২০২০

করোনা ভাইরাসে শ্রমিকদের সুরক্ষায় গত ২৭ মার্চ থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত বন্ধ ছিল দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো। অবশেষে আজ রোববার থেকে আবারও চালু হচ্ছে এসব কারখানা। তবে কাজ নেইÑএমন কারখানা চাইলে বন্ধ রাখতে পারবেন মালিকরা। এর আগে বাংলাদেশ পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও নিট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এসব কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এদিকে কারখানা বন্ধ হলে গ্রামে চলে যাওয়া অনেক শ্রমিক ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। রাস্তায় যানবাহন না থাকায় তাদের অনেকেই হেঁটে ঢাকার পথে রওনা হতে দেখা গেছে। ময়মনসিংহ থেকেও হেঁটে হেঁটে ঢাকার পথে আসতে দেখা গেছে কয়েকশ শ্রমিককে।

এদিকে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেছেন, যেসব কারখানায় স্বাস্থ্যসেবার জন্য পিপিই, মাস্ক তৈরি করছে তাদের কারখানা চলমান আছে। আমরা কারখানা বন্ধের আহ্বান জানয়েছিলাম। কারখানা চালু করতে অবশ্যই আইইডিসিআর কর্তৃক জারি করা স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নির্দেশিকা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। মালিকরা প্রয়োজনবোধে কারখানা চালু করতে পারবে তবে, কারখানা প্রবেশের আগে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শ্রমিকের তাপমাত্রা বাধ্যতামূলক পরীক্ষা করতে হবে। কোনো শ্রমিকের করোনো পাওয়া গেলে তাকে কোয়ারান্টিনে রাখতে হবে এবং ওষুধ মালিককে বহন করতে হবে।

বিজিএমইএ জানায়, করোনা ভাইরাসের কারণে ৩ এপ্রিল সকাল ১০টা পর্যন্ত এক হাজার ৯২টি কারখানায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। এসব কারখানার মোট ২০ লাখ ১৬ হাজাট শ্রমিকের কর্মসংস্থান রয়েছে।

এদিকে নিট কারখানাগুলো গত ২৮ মার্চ) থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে বিকেএমইএ। এ বিষয়ে বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান এ তথ্য জানান, শ্রমিকদের সুরক্ষায় কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছিলাম। হয়তো বেশি দিনের কাজ নেই, আবার তাদের বেতন দেওয়ার বিষয় আছে। এ অবস্থায় রোববার থেকে কারখানা খুলবে তবে, কাজ নেই এমন কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন। তবে সেটা শ্রমিক মেরে যেনো না হয়, শ্রমিকের পাওনা দিতে হবে।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পোশাক শ্রমিকদের ঢল : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কর্মমুখী মানুষ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ পাড়ি দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পায়ে হেঁটে, ভ্যান-ট্রলি এবং পিকআপ ভ্যানে করে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন পোশাক শ্রমিকরা। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে এমন চিত্র দেখা যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে। সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন বাসট্যান্ডে ঢাকামুখী যাত্রীরা কেউ হেঁটে যাচ্ছেন।

আবার যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা ভালো তারা ভ্যান বা পিকআপে করে ছুটে চলছেন ঢাকার দিকে। পাটুরিয়া ঘাট থেকে ঢাকার নবীনগরের ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা আর সেখানে এক স্টপেজ থেকে অন্য স্টপেজে যাওয়ার জন্য ভাড়া গুনতে হচ্ছে একশ টাকা তবুও অতিরিক্ত টাকা দিয়েই যাচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা। আশুলিয়ার পোশাক কারখানার শ্রমিক আনোয়ার মিয়া বলেন, কারখানা খুলে গেছে তাই যাচ্ছি। আজ কারখানায় উপস্থিত না হতে পারলে যে কয়দিন ছুটি পাইছি সে কয়দিন অনুপস্থিত দেখাবে কর্তৃপক্ষ। যার কারণে অতিরিক্ত টাকা দিয়েই কারখানায় যাচ্ছি। সমর নামে আরো এক পোশাক শ্রমিক বলেন, আমি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করি, পাটুরিয়া ঘাট থেকে নবীনগরের যে ভাড়া তার চেয়ে পাঁচ সাত গুণ ভাড়া চাচ্ছে পিক-আপ ভ্যানের চালকরা, আমার কাছে এত টাকা নাই তাই বাধ্য হয়েই হেঁটে যাচ্ছি।

মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মানিকগঞ্জের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আঞ্চলিক গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া কাটা গাড়িও বন্ধ আছে এবং এ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ পাড়ি দিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন।

ময়মনসিংহ থেকে হেঁটে ঢাকার পথে কয়েকশ শ্রমিক : দেশে গণপরিবহন বন্ধের মধ্যে গতকাল শনিবার কিছু গার্মেন্টস কারখানা খোলার কথা থাকায় ময়মনসিংহ থেকে হেঁটে ১১২ কিলোমিটার দূরের ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন হাজারো শ্রমিক। গত শুক্রবার সকাল থেকে ময়মনসিংহ ব্রিজের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হাজারো গার্মেন্টস শ্রমিককে ঢাকার দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যে ট্রেন-বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নিজের দুটি পা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাননি তারা-তার উপর ভরসা করেই পাড়ি দিতে নেমেছেন দীর্ঘপথ। করোনা ভাইরাসের ভয়ের চাইতে গার্মেন্টসের চাকরি হারানোর ভয় বেশি। তাই এ ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে বলছেন তারা।

ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, যানবাহন বন্ধ থাকায় আমাদের এবং শ্রমিকদের ক্ষতি হলেও আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যানবাহন বন্ধ রেখেছি। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত যানবাহন বন্ধ থাকবে।

ময়মনসিংহ ব্রিজের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় শ্রমিকদের কয়েকজনের সঙ্গে। গাজীপুরের স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসে কাজ করেন বুলবুল আহমেদ। এ পোশাক কর্মী বলেন, ৪ এপ্রিল থেকে গার্মেন্টস খোলা হবে। যদি (শনিবার) গার্মেন্টে পৌঁছাতে না পারি তাহলে চাকরি থাকবে না। অনেকটা বাধ্য হয়েই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছি।

 
Electronic Paper