ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অলস বসে বস্ত্রকল

শাহনেওয়াজ খান
🕐 ৩:৩০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৪, ২০২০

করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বৈশাখী ব্যবসা হারিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর ১০ দিন পর পহেলা বৈশাখ। বাতিল হয়েছে পয়লা বৈশাখের সব অনুষ্ঠান। দোকান, মার্কেট সব বন্ধ। করোনা মোকাবিলায় সাধারণ ছুটি বেড়েছে। দেশীয় বস্ত্রকলে কাজ নেই। মিলগুলো অলস বসে আছে।

বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) জানায়, পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনে দেশের বস্ত্র কারখানায় উৎপাদন ব্যস্ততা থাকে। এবার করোনা ভাইরাস এসে পড়ায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উৎপাদন বন্ধ। আগে উৎপাদিত যে সুতা ও কাপড় গুদামে রয়েছে সেগুলোর বিক্রি না থাকায় আর্থিক সংকটে পড়েছে মিলগুলো।

কাঁচামাল আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। কর্মীদের বেতন-ভাতা, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধে সমস্যায় পড়ে গেছেন মিলের মালিকেরা। বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। এদের রুটিরুজি এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। দেশিয় বাণিজ্য সংস্কৃতির অংশ হিসেবে এই শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ মাস হলো বৈশাখ।

বাণিজ্য গতিধারায় বৈশাখে হালখাতা বস্ত্রখাতে অর্থনৈতিক স্রোত সৃষ্টি করে। বকেয়া অর্থ পরিশোধ ও ব্যবসায়িক সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার হয়। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাসের কারণে এ উৎসব হচ্ছে না। ফলে সাধারণ ব্যবসায়িক গতিধারায় যে অর্থনৈতিক ¯্রােত, তাতে ভাটা পড়বে।

মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বাণিজ্য ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বস্ত্রকারখানার মালিকরা। শ্রমিকের মজুরি, বকেয়া পরিশোধ, নতুন পুঁজি গঠন, স্থবির হয়ে পড়া ব্যবসায় নতুন করে গতি সঞ্চার ইত্যাদি অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এই পরিস্থিতিতে বস্ত্রশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, সুতা ও কাপড়ের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার, মেয়াদি ঋণের সুদ ছয় মাসের জন্য মওকুফ; সুদ, আগামী ছয় মাসের গ্যাস ও বিদ্যুতের বিলে ভ্যাট ও সারচার্জ মওকুফ করে বিল ১২ মাসে সমান কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ, রাসায়নিক ও কাঁচামাল আমদানিতে অন্তত ছয় মাসের শুল্ক ছাড় প্রয়োজন।

তিনি বলেন, দেশিয় বস্ত্র কারখানার সক্ষমতার কারণে সুতা এবং কাপড়ের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হয় না। বিটিএমএ সদস্য ৪৫০টি স্পিনিং মিলের মধ্যে প্রায় ২৫০টি মিল দেশিয় চাহিদা পুরণে কাজ করে। আর ৮৫০টি উইভিং মিলের মধ্যে প্রায় ৫০০টি মিল দেশিয় প্রয়োজন মেটায়। এই মিলগুলো উৎপাদনের সঙ্গে সহায়ক হিসেবে যুক্ত আছে প্রায় ২০০ ডায়িং ও ফিনিশিং কারখানা। অভ্যন্তরীণ চাহিদার কথা স্মরণ রেখে এই কারখানাগুলোকে গতিশীল রাখা অত্যন্ত জরুরি। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রণোদনা বা সহায়তা না পেলে বেশিরভাগ মিল চিরতরে বসে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মিল মালিকরা।

বিটিএমএ জানায়, ব্যবসা বন্ধ কিন্তু শ্রমিকদের মার্চ মাসের মজুরি সময়মতো পরিশোধ করতে হচ্ছে। এই সঙ্কটে মজুরি যথাযথ পরিশোধ করা না হলে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। আর শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হলে ছুটির পর উৎপাদনে প্রভাব পড়বে।

এদিকে ব্যাংঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কার্যত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সে ধারণাও করা যাচ্ছে না। এই সংকট কাটিয়ে উঠায় সরকারি সহযোগিতার বিকল্প নেই।

 
Electronic Paper