ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রেফতার আতঙ্ক

ঘরছাড়া দুই শতাধিক পরিবার, অনাহারে শিশুরা

হাসান বাপ্পি, ঠাকুরগাঁও
🕐 ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ০২, ২০২০

সামসুল ওরফে কোপা সামশু নামে এক মাদক ব্যবসায়ী খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মধ্য পারপুগী শিববাড়ী গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। এসব পরিবারের সদস্যরা এখন ঘরছাড়া। তারা আজ এক জায়গায় তো কাল আরেক জায়গায়।

গ্রেফতারের ভয়ে জঙ্গলে লুকিয়ে দিন যাপন করছে তারা। অনাহারে রয়েছে তাদের সঙ্গে থাকা শতাধিন শিশু।

জানা যায়, গত ১০ মার্চ সামসুল ওরফে কোপা সামশু খুনের ঘটনায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও একাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন কোপা সামশুর মা জুলেখা বেওয়া।

পুলিশি আতঙ্কে থাকা ওই গ্রামের মাহমুদা, লতিফা, হোসনেয়ারাসহ আরও অনেকে জানান, সামসুল ডাকাত হত্যা মামলায় যে সাতজনের নাম উল্লেখ আছে তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাক পুলিশ। আমাদের তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু মামলায় অজ্ঞাতদের ধরতে পুরো গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার হয়রানির শিকার হচ্ছে। দিন নেই, রাত নেই এ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। এতে হয়রানি ও গ্রেফতার আতঙ্কে পুরো গ্রামের নারী-পুরুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সম্প্রতি হাসেন আলী নামে এক ভ্যানচালককে ধরে নিয়ে যাওয়ায় এ আতঙ্ক আরও বেড়েছে। এ এলাকার বেশিরভাগ লোকই দিনমজুর, হোটেল শ্রমিক, চাতাল শ্রমিক।

গাড়ির শব্দে ভয়ে পালিয়ে যাওয়া শিশু আকিব ও রুবেল জানায়, গাড়ির শব্দে আমরা ভয় পায়। মনে হয় যেন পুলিশ আসছে। আব্বা পালিয়ে গেছেন অনেক আগেই। আম্মাও খাবার দিতে পারছেন না। এখন আমরা না খেয়েই আছি।

একদিকে সরকারের নির্দেশ সবাইকে বাসায় থাকতে হবে, অন্যদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে একদিকে অমান্য করা হচ্ছে সরকারি নির্দেশ অপরদিকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এ এলাকার নারী-পুরুষ ও শিশুরা।

গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ওই এলাকায় খাবার বিতরণ করতে গেলে গাড়ির শব্দে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় সবাই। ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, আমরা যখন ওই গ্রামে খাবার দিতে যাই তখন তারা সবাই পালিয়ে যায়। শিশুদেরও দেখেছি জঙ্গলে লুকাতে। এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভীরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ কাইকে হয়রানি করছে না। ১৬৪ ধারার জবানবন্দি মোতাবেক যেসব আসামির নাম এসেছে শুধু তাদেরকেই গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এতে আতঙ্কিত বা হয়রানির কিছু নেই।

জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, আমরা ওই এলাকায় জরুরি খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করছি এবং ওই গ্রামের কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।

 
Electronic Paper