ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

করোনার মাঝে হাম

পাহাড়ে ৯ শিশুর মৃত্যু, আক্রান্ত ১৩৬

রাঙ্গামাটি ও দীঘিনালা প্রতিনিধি
🕐 ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২০

সারাবিশ্ব যখন করোনা ভাইরাস সামলাতে ব্যস্ত তখন বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলের তিন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে হাম। ১৩ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত এ রোগে নয়টি শিশু মারা গেছে। এর মধ্যে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে সাতটি, খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় একটি এবং বান্দরবানের লামায় একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১৩৬টি শিশু। তাদের বয়স ১০ বছরের নিচে।

তবে রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা জানান, যে শিশুরা মারা গেল বাঘাইছড়ি উপজেলার বেশকিছু গ্রামে, সেগুলো আসলে যে হাম সেটা আমরা এখনও নিশ্চিত নই। আক্রান্ত শিশুদের নমুনা সংগ্রহ করে তা হাম নাকি, অন্য কোনো রোগ তা পরীক্ষা করার জন্য ঢাকাই পাঠিয়েছি। সেখান থেকে রিপোর্ট আসলে বলতে পারবো সেটা হাম কিনা।

সিভিল সার্জনের দেওয়া তথ্যমতে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের শিয়ালদহে গ্রামে হামে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল পাঁচ শিশু। তখন সাজেক ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী তিনটি গ্রাম অরুণপাড়া, নিউথাং পাড়া এবং হাইচপাড়ায় হামে আক্রান্ত হয়েছিল শতাধিক শিশু। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় মারা গেছে আরও দুই শিশু। ২৫ মার্চ গুরুতর অবস্থায় পাঁচ শিশুকে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা সুস্থ রয়েছে।

এর আগে ১৩ মার্চ বান্দরবানের লামা উপজেলা সদর ইউনিয়নের পুরাতন লাইল্যা মুরুং পাড়ায় দুতিয়া মুরুং (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। পরে একই রোগে আক্রান্ত হয় ওই এলাকার আরও বেশকিছু শিশু। সর্বশেষ ২৮ মার্চ খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার রথিচন্দ্র কারবারি পাড়ায় ধ্বনিকা ত্রিপুরা (৯) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকায় আরও অর্ধশত শিশুর মধ্যে হামের উপসর্গ রয়েছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব জিতু জানান, সাজেক ইউনিয়নের যেসব মহল্লায় হাম ছড়িয়ে পড়েছিল সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি চিকিৎসক টিম সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত শিশুরা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ করে যাবে। এখন পর্যন্ত ১৩৬টি শিশু হামে আক্রান্ত হয়েছে ইউনিয়নটিতে। তারা এখন সুস্থ হওয়ার পথে।

উন্নত চিকিৎসা এবং হামের টিকা থাকার পরও রোগটি কেন ছাড়াচ্ছে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, বাঘাইছড়ির যেখানে হাম ছড়িয়েছে বলে আমরা মনে করছি, সেটি অত্যন্ত দূর্গম এলাকা। সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আগে হামের টিকা দেওয়া হয়েছিল। সেখানে যারা বসবাস করেন তারা অনেকে এ টিকাটি নিতে চান না। আবার যারা নেন তাদেরও অনেকের কিছু টিকা কার্যকর হয় না।

কেউ টিকা নিতে না চাইলে তাদের জোর করে টিকা দেওয়া যায় না। আবার যেসব টিকা সেখানে পাঠানো হয় সেসব টিকা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে পাঠাতে হয়। যেহেতু দূর্গম জায়গা সেখানে যেসব টিকা যায় তা পাঠাতে অনেক সময় অকার্যকর হয়ে যেতে পারে তাপমাত্রার কারণে। যদি ছড়িয়ে পরা রোগটি হাম হয়ে থাকে তাহলে আমরা মনে করছি টিকাগুলো কার্যকর হচ্ছে না।

রোগটি প্রতিরোধের ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন শুনেছি হামের উপসর্গ থাকা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে তখন আমরা মেডিকেল টিম পাঠিয়েছে। সেখানে একটি অস্থায়ী মেডিকেল টিম অবস্থান করছে, তারা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত সকলে সুস্থ না হবে ততদিন তারা সেখানে থাকবে। আশার খবর গত ছয়দিনে কোনো শিশু নতুন আক্রান্তের খবর নেই সেখানে। সবাই সুস্থ হয়ে গেলে আমরা এক বছর থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত শিশুদের হামের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি রেখেছি।’

এদিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার রথীচন্দ্র কারবারি পাড়ায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে ধ্বনিতা চাকমা নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণাসে হামে আক্রান্ত হয়েছিল। কারণ তার শরীরে রোগের উপসর্গ ছিল।

 
Electronic Paper