ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অনিশ্চয়তায় রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষ

তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ৯:৫৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২০

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ১০ দিনের ছুটির তৃতীয় দিনেই রাজধানীতে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বিশেষ করে রিকশাচালক, ফুটপাতের চায়ের দোকানি, ফলমূলের দোকানিসহ ছোটখাট কোম্পানির কর্মচারীদের মধ্যে হা হুতাশ শুরু হয়েছে। একদিকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক অন্যদিকে সংসার চালানোর চিন্তা। রাজধানীর আদাবর এলাকার এমন মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অনিশ্চিত দিন নিয়ে তাদের হতাশার কথা।

শনিবার রাজধানীর আদাবর থানার শেখেরটেক ৬ নম্বর নামা এলাকায় সরেজমিন গিয়ে কয়েকজন নিম্নআয়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মনে করেন, করোনা রোধে সরকারের পদক্ষেপ ঠিক থাকলেও সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষের সমস্যাগুলো নিয়ে হয়ত সেভাবে ভাবেননি তারা। অনেকে বলেন, দিন চালানোর পাশাপাশি বড় সমস্যা হয়ে আসছে ঘরভাড়া। সরকার এ ব্যাপারে একটা ঘোষণা দিলে আর বাড়িওয়ালারা যদি সদয় হয়ে তা মেনে নিতেন তাহলে সংকট অনেকটাই কেটে যেত।

আদাবর শেখেরটেক ৬ নম্বরে বড়ার আবু সাঈদ নামে ব্যক্তি একটি সিমেন্ট কোম্পানিতে সুপারভাইজার হিসাবে কর্মরত তিনি গতকাল দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, বাস্তবতার নিরিখে সরকার দ্রুত একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সাধারণ মানুষের বিষয় মাথায় নেওয়া খুব দরকার। তিনি বলেন, এই শহরে অনেক মানুষ দিন আনে দিন খায় তাদের খোঁজ নেবে কে?

এছাড়াও করোনা আতঙ্ক পুলিশ প্রশাসনসহ সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। খেটেখাওয়া মানুষগুলো রাস্তায় নামার সুযোগ নেই। আর রাস্তায় নেমেই কি হবে। কোন মানুষ নামছেন না। কাকে বহন করবেন? রিকশার চাকা ঘুরছে না, এ কারণে চুলায় হাড়ি ওঠানো বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

শেখেরটেক ৬ নম্বর রোডে কথা হয় আবু তালেব নামে এক রিকশা চালকের সঙ্গে। তিনি দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, সরকার করোনা ভাইরাস রোধে খুব সুন্দর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্ত আমাদের মতো গরিব মানুষ কি ভাবে সংসার চালাবে সে বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার দরকার ছিল।

আদাবর ১৪ নম্বর রোডের বাসিন্দা উজ্জল মজুমদার বলেন, আমি ছোট একটি কোম্পানিতে কাজ করি। কয়েকদিন আগেই আমার কোম্পানি ছুটি ঘোষণা করেছে। মালিকরা দায়সারাভাবে বেতনের কিছু দিয়ে বিদায় দিয়েছে। অবশ্য করোনা রোধে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসাও করেছেন তিনি।

রাস্তায় পাতিলে করে মাথায় নিয়ে মাছ বিক্রি করছেন আবদুল্লাহ। বাস করেন আদাবর মনসুরাবাদ এলাকায়। ৫ সদস্যের সংসার জমানো কোন টাকা নেই। প্রতিদিনের রোজগারে তার দিন চলে।

তিনি বললেন, পেটের তাগিদে ভোরবেলা পায়ে হেটে কাওয়ানবাজার এক মহাজনের কাছে কয়েকটি ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছি। মহল্লায় বিক্রি করছি। কয়েকটি বিক্রি হয়েছে। ঘর থেকে মানুষ বের হয় না। তার পরেও কিছু বিক্রি হয়েছে। ভয়ে ভয়ে বিক্রি করি কখন আর্মি কিংবা পুলিশের গাড়ি আসে। রাস্তায় ফেরি করেন শাকসবজি বিক্রেতা তালহা।

তিনি বললেন, সুযোগ বুঝে মহাজনের কাছে কয়েক ধরনের শাকসবজি নিয়ে ফেরি করছি। বিক্রি হচ্ছে। আল্লাহর রহমতে আজ যা বিক্রি করেছি, বাজারের পয়সা হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, সরকার মানুষের ভালোর জন্য সাধারণ ছুটি এবং করোনা বিস্তার রোধে মানুষকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সরকার সাধারণ মানুষের কাছে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

তবে শহরে মানুষ নেই, যারা আছেন তারাও ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সব মিলিয়ে আগামীকালটা কেমন যাবে তা জানি না। তিনিও জানালেন, ঘরভাড়া নিয়েই তার মতো অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছেন।

 
Electronic Paper