এমন ছুটি চাই না
রাকিবুল হাসান
🕐 ৭:৪৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২০
ক্যাম্পাস বন্ধ। ঘোরাঘুরি, খেলাধুলায় মানা। বাড়ি থেকে বের হওয়া বারণ। তবে এই ছুটিতে আমি কি করবো? সারাদিন বাড়িতে এক মুঠোফোন। গান, নাটক, মুভি আর ভাল লাগছে না। সব কিছুতেই বারণ, নিজেকে বন্দি লাগছে।
১৬ মার্চ ছুটির বিজ্ঞপ্তির অপেক্ষায় ছিলাম। বাড়িতে যাবো, বাড়িতে গিয়ে সব খেয়ে ফেলবো। প্রচুর ঘুমাবো। বেশ কয়েকদিন বিশ্রাম করবো। ক্লাস-পরিক্ষার কোনো প্যারা থাকবে না। বাড়িতে গিয়ে এটা কিনবো, ওটা নিবো। কত্ত কিছুই ভেবেছিলাম।
তবে আজ খুব ছন্নছাড়া মনে হচ্ছে। বন্দি লাগছে নিজেকে। মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে কবে ছুটি পাবো? সেই অপেক্ষায় দিন পার করছি এখন...
ফাঁকা মাঠ পড়ে আছে। কেউ খেলতে আসে না। কেউ আসে না করোনার ভয়ে, কেউ পুলিশ বা সেনাবাহিনীর ভয়ে। বন্ধুরা বাহিরে বের হয় না। ঘোরাঘুরি করারও উপায় নেই। ক্যাম্পাস বন্ধে নিয়মিত পড়াশোনা করো বাসায়।
প্রত্যেকদিন কষ্ট করে হলেও ঘুম থেকে জাগি বেলা গড়িয়ে দুপুর হওয়ার পর। ওঠে খেয়ে বাহিরে যাই একবার। আবার বাড়িতে চলে আসি।
অহেতুক বাহিরে থাকা নিষেধ। বন্ধুরা সময় কাটাও বাড়িতে। করোনা ভাইরাস শঙ্কায় সুস্থ ও নিরাপদ থাকার জন্য আমরা বাড়িতে থাকছি। এতে আমরা নিরাপদ থাকছি ঠিকই তবে অনেকটা সময় হারিয়ে ফেলছি। করোনায় বাঁচতে চার দেয়ালে আটকে থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে অল্প বয়সীদের।
আমরা জানি, একজন মানুষ টানা ২১ দিন ধরে, কোনো কাজ করলে, তাতে সে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আমরা এভাবে ঘরে বসে থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। অলসতা ভর করছে আমাদের দেহে ও মনে। চার দেয়ালের মধ্যে একাকী অলস সময় কাটানোও এক সময় ভাল লাগবে।
তখন করোনার ছুটি হয়ে যাবে। তবে ছুটি পাবো না আমরা এই অলসতা থেকে।
এই তো! কিছু দিন আগের কথা।
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার জন্য পরপর তিনটি এলার্ম দিতে হতো। একটু দেরি হলেই হয় অ্যাটেন্ডেন্স মিস। নইলে বকা খাও টিচারের।
সকালে খাবার খাওয়ার ফুসরত নেই। সকালের খাবার খেতে খেতে দুপুর দুটো।
ক্লাস শেষে ঘরে ফিরতে বিকাল। ঘরে ফিরে বিশ্রাম করার সুযোগ নেই বললেই চলে। টিউশনি করাতে হবে দুইটা। রাত আটটা নয়টায় ক্লান্ত দেহ নিয়ে ঘরে ফেরা হয়। বিশ্রাম নিয়ে আবার পড়তে বসা, অ্যাসাইনমেন্ট করো, এই শিট পড়ো, কাল পরিক্ষা, পরশু মিডটার্ম। পড়তে পড়তে রাত ২টা বেজে যায়। এর মধ্যেই রাতে খাওয়া শেষ।
এভাবেই দিনের পর দিন কেটে যায়। এই মাসের প্রথমে বেশ শরীর খারাপ করেছিল। জ্বরে বিছানা থেকেই ওঠতে পারছিলাম না। ক্লাসেও যেতে পারিনি। টানা তিন দিন পর বিছানা থেকে ওঠে ছিলাম। তারপর আর ক্লাস করতে ইচ্ছে করছিল না। ভাবতাম যদি কয়েক দিনের ছুটি পেতাম বাড়িতে ঘুরে আসতাম। কিন্তু ছুটি নেই, সামনের সপ্তাহ থেকে টানা মিডটার্ম পরিক্ষা। বাসায় যাওয়ার উপায় নেই।
দুদিন না যেতেই বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটলো। আমাদের দেশে তখন আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় চার পাঁচ জন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হল।
তখন খুশিতে ব্যাকুল হয়ে গেলাম। তবে আমার স্টুডেন্ট দুইটা এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
বাড়ি আসলাম। প্রথম দুইদিন প্রচুর খেলাম, ঘুমালাম। অনেক আনন্দ লাগছিল। অনেক দিন পর একটু ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পেয়েছি। তবে, এখন এই অলস বন্দী চার দেয়াল থেকে মুক্তি পেতে চাই। এই ছুটি চাই না।
ব্যস্ততার ক্যাম্পাসেই ফিরে যেতে চাই। আগামীকাল যেন ঘুম ভেঙ্গে শুনি, করোনা থেকে গোটা বিশ্বের মানুষ মুক্তি পেয়েছে। সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে।