সুনসান নিরবতার রাজধানী ঢাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩২ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০২০
করোনা ভাইরাস রোধে সরকারের নেওয়া কঠোর পদক্ষেপের ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজধানীর জনজীবনে। রাজধানীর সুপরিসর রাজপথ থেকে শুরু মহল্লার ছোট অলিগলি ঘুরলে দেখা যাবে এমন এক ঢাকা যার দেখা মেলে শুধু ঈদে ও ছুটিতে। তবে সে সময় মানুষের মনে যে স্বস্তি থাকে এখন তার জায়গা দখল করে নিয়েছে অস্বস্তি, ভয় আর অজানা আতঙ্ক। সেই ভয় হচ্ছে করোনা ভাইরাস।
রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ছিল শুনশান নিরবতা। অভিজাত শপিং মল থেকে শুরু করে গলির বড় মুদির দোকানের বেশির ভাগই বন্ধ। মহল্লার পর মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি ২০টি দোকানের মধ্যে একটি দোকানও খোলা নেই। কাঁচাবাজারগুলো খোলা থাকলেও সেখানে বেশিরভাগ দোকানই বন্ধ, মাছের ব্যবসায়ীরাও বসেছেন কম, যারাও এসেছেন তাদের ডালায় মাছ ছিল খুবই কম। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, মুগদা, বাসাবো, রামপুরা এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও খোঁজ-খবর নিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে ও তথ্য পাওয়া গেছে। যারা মাছ নিয়ে বসেছেন তারা মোটামুটি দাম পেলেই বিক্রি করেও দিচ্ছেন। ক্রেতারাও কোনরকমে বাজার থেকে বের হতে পারলেই যেন বাঁচেন। পুরান ঢাকার ধোলাইখালের ফুটপাত ঢেকে থাকে লোহালক্কড়ে। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বদলে গেছে সবকিছু। সারি সারি সব দোকানপাট বন্ধ। মার্কেটে মার্কেটে তালা ঝুলছে। দু’একটি দোকানের সামনে জটলা করে দাড়িয়েছিলেন ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। তাদের আলোচনার প্রধান বিষয় করোনা ভাইরাস।
একজন ব্যবসায়ী জানালেন, প্রশাসনের নির্দেশে তারা দোকান বন্ধ রেখেছেন। তিনি বলেন, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাতে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, তবে জীবন সবার আগে, বেঁচে থাকলে সব ক্ষতিই কাটিয়ে ওঠা যাবে। একজন কর্মচারী বললেন, যদি দু’তিন দিনের বিষয় হতো তাহলে কোন কথা ছিল না, কিন্তু লম্বা সময় ধরে বন্ধ থাকবে, ফলে তাদের সমস্যায় পড়তে হবে। কাজের মধ্যে থাকলে দিনের চা-নাস্তার খরচটা দোকানের মালিকই চালিয়ে নেন কিন্তু এখন তো তা পাওয়া যাবে না।
যাত্রাবাড়ি, ধলপুর, সায়েদাবাদ, করাতিটোলা, টিকাটুলি, মানিকনগর. গোলাপবাগ, মুগদাপাড়া কমলাপুর, বাসাবো এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় অল্পসংখ্যক রিকসা ছিল, অধিকাংশ রিকসাচালকের মুখেই আছে মাস্ক। একাধিক রিকসাচালক বললেন, বাধ্য হয়ে তারা রাস্তায় নেমেছেন কিন্তু কোন যাত্রী নেই, তাই বসেই থাকতে হচ্ছে তাদের। দু’একজন রিকসাওয়ালা বললেন, সরকারের সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে, তবে তাদেরকে যদি সরকারিভাবে কিছু সহায়তা দেওয়া যেত তাহলে খুবই ভাল হত।
বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, ছোট ছোট বাক্সের মধ্যে রেখে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নানা পণ্য বিক্রি করছেন অনেকে। এরা সবাই খ-কালীন ব্যবসায়ী বা অন্য সময় কাপড়চোপর বা অন্য জিনিসপত্র বিক্রি করলেও এখন মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস বিক্রি করছেন। একজন বিক্রেতা বললেন, মানুষই নাই কিনবে কে? তারপরও টুকটাক বিক্রি হচ্ছে তাই দিনের একটা সময় তিনি কিছু বিক্রির চেষ্টা করবেন যাতে দিনের খরচটা উঠে আসে। তবে তিনি জানালেন, গত দু’সপ্তাহে তার বেশ বেচাকেনা হয়েছে।
রাজধানীতে চলাফেরা করা এসব মানুষের মনে ভয়ের পাশাপাশি বিশ^াস আছে, আল্লাহর রহমতে এ অবস্থা শিগগিরই কেটে যাবে, লাখো মানুষের পদচারণায় আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে প্রিয় ঢাকা।