ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দিনাজপুরের বিরল

জুট মিলে পুলিশের গুলিতে নিহত ১

দিনাজপুর প্রতিনিধি
🕐 ১০:২৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০২০

দিনাজপুরের বিরলে রুপালী বাংলা জুট মিলে বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনকারী শ্রমিকের উপর পুলিশের গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক পান দোকানি নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় ৩ শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পুলিশের লাঠিচার্জে ১৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

গুলিবিদ্ধদের দুই জনকে বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং এক জনকে দিনাজপুরে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১১শ’ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এদিকে এই ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গতকাল বৃস্পতিবার দুপুরে সুরত আলীর লাশ ময়না তদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর এবং পরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।  বিরল থানার ওসি শেখ নাসিম হাবিব জানান, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ভাংচুর ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ১০/১২ জনের নাম দিয়ে অজ্ঞাত আরও এক হাজার থেকে ১১শ’ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন বিরল থানার এসআই আব্দুল কাদের। তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কোন মামলা দায়ের হয়নি বা কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। একটি ইউডি মামলা দায়ের করে নিহতের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছিলো।

এদিকে ওই ঘটনায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ সদস্য বিশিষ্ট পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রধান করা হয়েছে ডিএসবি’র

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সচিন চাকমাকে। বাকী দু’জন সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) হাফিজুল ইসলাম ও জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি এটিএম গোলাম রসুল। আর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলাম ও সদস্য  বিরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিনাত রহমান। দু’টি কমিটিই আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে শ্রমিকদের ওপর পুলিশের এই গুলির ঘটনা ঘটে। নিহত পান দোকানদারের নাম সুরত আলী (৪০)। তিনি বিরল পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের হুসনা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন শ্রমিক রাজ কুমার, রায়হান ও ইব্রাহীম। এদের মধ্যে রাজ কুমারকে দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে এবং রায়হান ও ইব্রাহীমকে বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, মিলের মালিক বিরল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ। করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মিল বন্ধ হয়ে যাবে- এমন খবরে গতকাল বিকেলে শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় মিল কর্তৃপক্ষ পুরো বকেয়া বেতন দিতে গড়িমসি শুরু করে। শ্রমিকদের কারো ৪ সপ্তাহের কারো ৩ সপ্তাহের বেতন বকেয়া রয়েছে। মিল কর্তৃপক্ষ ৫ দিনের বেতন দিতে চায় আর শ্রমিকরা মিল বন্ধের আগে পুরো বকেয়া বেতন চায়। এ নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে মালিক পক্ষ কোন বেতন দিবেন না বলে জানালে শ্রমিকরা রাত ৮ টার দিকে ভাংচুর শুরু করে। মালিক পক্ষ পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে।

উত্তেজনার এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সুরত আলী ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুলিবিদ্ধ হয় আরো ৩ জন। পুলিশের লাঠিচার্জে ১৫ শ্রমিক আহত হয়।

বিরল থানার ওসি শেখ নাসিম হাবিব একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

 
Electronic Paper