ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যয় হোক নিজেকে সুরক্ষার

সম্পাদকীয়
🕐 ৬:৪৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৫, ২০২০

স্বাধীনতাহীনতায় মানুষ হয়ত বাঁচতে পারে, তার মন এতে সায় দেয় না। মানুষের অন্তর্গত বোধে থাকে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা। হাজার বছরের বাঙালি জনজীবন নানা ধরনের শাসক ও ঔপনিবেশিক গোষ্ঠীর অধীনে ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার বহাল রাখার দাবিতে প্রাণ দেন অনেকেই। ভাষা সৈনিকদের এ রক্ত আন্দোলন-সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে আরো। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের উন্মেষ ঘটে। বাঙালি জাতির যে কোনো ন্যায্য অধিকারের প্রশ্নে তিনি অটল থাকেন। শুরু করেন প্রতিবাদ-সংগ্রাম। পশ্চিম পাকিস্তান শুরু থেকেই পূর্ববঙ্গকে নানাভাবে বঞ্চিত করে আসছে। শেষপর্যন্ত যখন উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হল- ফুঁসে ওঠে বাঙালি। পুঞ্জীভূত ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা।

বঙ্গবন্ধু নানাভাবে এসব আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। হয়ে ওঠেন নিপীড়িত বাংলা জনপদের মানুষের অলিখিত প্রতিনিধি। সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে গড়িমসি শুরু করে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা। আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে তারা। এমন উন্মাতাল সময়ে আসে ৭ মার্চ, ১৯৭১। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ইতিহাসের সেরা ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বস্তুত এটাই স্বাধীনতার পরোক্ষ ঘোষণা। নেতার ভাষণ শোনার জন্য সমবেত হন লাখো জনতা। যার যা কিছু আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু, মুক্তিকামী জনতার উদ্দেশে। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু দিকনির্দেশনা দেন। জাতি পায় দিশা। কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সীমাহীন লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শিকার মুক্তিকামী মানুষ।

৭ মার্চের অবিস্মরণীয় ভাষণের পর আসে ২৫ মার্চের কালরাত। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের ইন্ধনে সেনাসদস্যরা রাতের অন্ধকারে শুরু করে ‘অপারেশন সার্চলাইট’। বর্বর এ আক্রমণে প্রাণ হারান অসংখ্য মানুষ। গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। তিনি পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি থাকলেও মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ত্রিশ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অবশেষে আসে কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর সময়ের হিসাবে নয় মাস হলেও জাতীয় জীবনে এটা শুধু ‘নির্দিষ্ট সময়ে’ আবদ্ধ থাকেনি। অশ্রু, রক্ত, শোক, স্বজন হারানোর বেদনা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এ সময়ে। মুক্তিযুদ্ধের এ ব্যাপ্তি যেন এক মহাকাব্য। পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি বঙ্গবন্ধু ছিলেন এ মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় চরিত্রে।

এ বছর এমন এক সময়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হতে যাচ্ছে যখন সারা বিশ্ব এক ক্রান্তি অতিক্রম করছে। করোনা ভাইরাসে জেরবার পৃথিবী। অনেক দেশেই চলছে এ মহামারি। বাংলাদেশও এ সমস্যা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ইতোমধ্যে যাতায়াতসহ সবকিছুই স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রাণ সংশয়ে ভুগতে হচ্ছে মানুষকে। কী হবে, কী হতে যাচ্ছে জানে না কেউই! এ অবস্থায় সবারই উচিত- সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারলেই সুরক্ষিত রাখা যাবে আরেকজনকে। মুক্ত থাকবে অন্যরা। সবাই নিজ নিজ নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট থাকলেই করোনা মোকাবেলা সহজ হবে। স্বাধীনতা দিবসে সবার শপথ হোক নিজেকে ও অন্যকে সুরক্ষিত রাখার। সচেতনতা ও সরকারি বিধি-বিধান মেনে চলার মাধ্যমে সহজেই তা সম্ভব।

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper