ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নাদিয়া, আমি ও আমাদের দিনরাত্রি

ইমন চৌধরী
🕐 ১:৫৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০২০

‘এই নিয়ে তিনবার!’ দাঁতে দাঁত চেপে বলল নাদিয়া।

‘কী তিনবার?’ অবাক হয়ে জানতে চাইলাম আমি।

‘একদম চালাকি করবা না বলে দিলাম। দেখে তো মনে হয় ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানো না। কেন যে আমার কপালেই এমন একটা মানুষ জুটল!’ নাদিয়া হাহাকার করে ওঠে।

আমি বোকার মতো ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। এদিক-ওদিক তাকিয়ে ওর হাতটা ধরার চেষ্টা করি। অমনি বিদ্যুৎ গতিতে হাতটা ছাড়িয়ে নিল নাদিয়া।

‘কী করছ! মার্কেটের লোকজন দেখছে তো!’ আমি গলা নামিয়ে নাদিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করি।

কিন্তু নাদিয়া কি আমার চেয়ে কম বোঝে! নাদিয়ারই বা দোষ কী! বউরা স্বামীদের চেয়ে বেশি বুঝবে এটাই জগতের নিয়ম। সুতরাং নাদিয়া যদি আমার চেয়ে সবকিছু একটু বেশি বোঝে তবে ওকে দোষ দেওয়া যায় না।

নাদিয়া চিৎকার করে বলল, ‘দেখুক, মার্কেটের সব লোক দেখুক আমার জামাই একটা...!’

‘থামলে যে! কী বলতে চাও বলে ফেল। নয়তো কথা পেটের ভেতর কেবল ফুলতে থাকবে। তোমার অসুবিধা হবে। কোনো কারণে আমার বউটার অসুবিধা হোক এটা আমি কিছুতেই মানতে পারব না।’

‘ঢঙ করবা না একদম! অসহ্য লাগে!’

‘আচ্ছা যাও, ঢঙ করব না। এখন বলো তো তিনবার কী?’

‘ন্যাকা! কিছুই যেন বুঝতে পারে না! মার্কেটে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে এ পর্যন্ত তিনজন মেয়ের দিকে তাকিয়েছ। আমি সব দেখেছি। মেয়ে মানুষ দেখলে চোখের পলক যেন পড়তে চায় না।’

‘কী মুশকিল! মার্কেটে এলে কত মানুষই তো চোখের সামনে পড়ে। আমি কি চোখ বন্ধ করে হাঁটব!’

‘চোখ বন্ধ করে হাঁটতে তো বলিনি। চোখ সামলে হাঁটা যায় না? ওই মেয়ে তিনটা কি আমার চেয়ে বেশি সুন্দরী!’

কোথায় যেন পড়েছিলাম, সংসারে শান্তি বজায় রাখতে কখনও কখনও মিথ্যা কথা বলা যেতে পারে। নাদিয়া সুন্দরী। কিন্তু সত্যি বলতে কি, যে তিন তরুণীকে এরমধ্যে চোরাচোখে খানিকটা মুগ্ধ নয়নে দেখেছি তারা তিনজনই নাদিয়ার চেয়ে খানিকটা বেশিই সুন্দরী। কিন্তু সে কথা নাদিয়ার কাছে বলতে গেলে জনসম্মুখে নাদিয়া আমার যে গতি করবে তার চেয়ে বড় দুর্গতি জগতে আর কিছু হতে পারে না।

আমি কোনো রকমে বললাম, ‘আরে ধুর! কীসের সঙ্গে কী! তোমার সঙ্গে আর কারও তুলনা চলে! তুমি তো তুমিই! জাস্ট ওয়ান পিস!’

নাদিয়া কী বুঝল জানি না, কিন্তু উত্তাল সমুদ্র খানিকটা যে শান্ত হয়েছে সেটা আমি ঠিকই বুঝলাম। বললাম, ‘চলো, আগাই’। বলতে বলতে মার্কেটে আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় ঠেলে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম। চোখ জোড়া এমনভাবে রাখলাম যাতে কোনোভাবেই চোখের সামনে কোনো তরুণীর ছায়াও না পড়ে।

নাদিয়াকে নিয়ে একটা শাড়ির দোকানে ঢুকতেই সে আমার ডান হাত খপ করে ধরে ফেলল। আমি সঙ্গে সঙ্গে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পড়লাম, ‘কী ব্যাপার, শাড়ি কিনবে না?’

নাদিয়া এবার আমার হাত ধরে টানতে টানতে বলল, ‘এ দোকানে শাড়ি কিনব না।’

‘কেন?’

‘কেন আবার কী! মেয়ে দেখলে মাথা ঠিক থাকে না, না?’

‘আবার কী হলো?’

‘ন্যাকা সাজবে না একদম! বেছে বেছে যে দোকানে সেলস গার্ল আছে সে দোকানটাই তোমার চোখে পড়ল! একগাদা মেয়ে দোকানের ভেতর! এ দোকানেই কেন ঢুকতে হবে তোমাকে!’ বলতে বলতে নাদিয়া আমাকে টেনে-হিঁচড়ে ওই দোকানের সামনে থেকে সরিয়ে আনে।

তারপর বেছে বেছে এমন এক শাড়ির দোকানে ঢুকল যে দোকানে কোনো সেলস গার্ল নেই। সবাই সেলসম্যান! একবার মনে হলো বলি, তোমার নিজেরই তো সমস্যা আছে। বেছে বেছে সেলসম্যান আছে এমন দোকানেই ঢুকলে!

কিন্তু বউদের সে কথা বলা যায় না। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক মার্কেটে ঘুরে যখন বের হতে যাবো এমন সময় আমি হঠাৎ প্রকৃতির ডাক অনুভব করলাম। অগত্যা বউকে নিয়ে চললাম মার্কেটের ওয়াশরুমের দিকে। ওয়াশরুমের কয়েক গজ সামনে বউকে দাঁড় করিয়ে রেখে আমি পা বাড়ালাম প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে। ওয়াশরুমের দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দিতেই দেখি ভেতরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক তরুণী মুখে মেকাপ করছে। ভয়ে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো। এত দেখি লেডিস টয়লেট! টুপ করে আমি দরজা টেনে বেরিয়ে পড়ি আবার।

লেডিস এবং জেন্টস টয়লেটের দরজা দুটি ছিল পাশাপাশি। একটু তাড়া থাকায় ভুল করে আমি লেডিস টয়লেটে ঢুকে পড়েছিলাম। লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে উঠল। এ অবস্থায় আমি নাদিয়ার মুখোমুখি হব কী করে! নাদিয়া কি বিশ্বাস করবে আমাকে! আমি প্রকৃতির ডাকের কথাও বেমালুম ভুলে গেলাম। দাঁড়িয়ে রইলাম লেডিস এবং জেন্টস টয়লেটের মাঝামাঝি!

পেছন ফিরে দেখি নাদিয়া বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি নিশ্চিত, নাদিয়া ধরেই নিয়েছে আমি ইচ্ছে করেই লেডিস টয়লেটে ঢোকার চেষ্টা করেছি! আমার চরিত্র ঠিক নেই! কিন্তু আমি যে নির্দোষ কীভাবে বোঝাবো তাকে! কীভাবে! কীভাবে! কীভাবে!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper