ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে অঙ্গীকার হোক স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার

সম্পাদকীয়
🕐 ৯:৩৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২০

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত শুরু হচ্ছে আজ থেকে। ১৯২০ সালের আজকের দিনে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তখন কে ভাবতে পেরেছিল, এ খোকাই একদিন অভ্যুদয় ঘটাবে স্বাধীন-স্বনির্ভর একটি দেশের; হয়ে উঠবে মুক্তির দিশারী! বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে ১০০ শুধু একটি সংখ্যা নয়, আরও বেশি কিছু। জাতির ইতিহাসে মাইলফলক।

ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট সৃষ্টির নেপথ্যে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে তার নাম। ক্ষণজন্মা এ মহাপুরুষ কৈশোর থেকেই ছিলেন মাটি ও মানুষের কাছাকাছি। ছাত্রজীবনের নানা পর্বে স্বদেশচেতনার উন্মেষ ঘটে, গণমানুষের অধিকারের আদায়ের প্রশ্নে ছিলেন অকুতোভয়। যেজন্য পাকিস্তানি স্বৈরশাসন ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন। তাকে কারাবরণও করতে হয়েছে বারবার। জীবনের বড় একটি অংশ তার কেটেছে কারাগারে। তার শিশুপুত্র যখন বড় মেয়ের কাছে আবদার জানান ‘আপা, তোমার আব্বাকে একবার আব্বা বলে ডাকি’ বঙ্গবন্ধুর বৈশিষ্ট্য বুঝতে এরচেয়ে বড় কোনো ঘটনার প্রয়োজন পড়ে না।

মাটি ও মানুষের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে, মায়ের ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন বঙ্গবন্ধু। রাজপথ থেকে কারাগার হয়েছিল স্থায়ী ঠিকানা, দেশের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষ হয়ে উঠেছিল তার আপনজন। গণমানুষের প্রতি কতটুকু ভালোবাসা থাকলে, দুঃখিনী বর্ণমালার প্রতি কী পরিমাণ প্রেম থাকলে টুঙ্গীপাড়ার খোকা খুব সহজেই উপেক্ষা করতে পারেন পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু! এ খোকা, শেখ পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠতে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথপরিক্রমা। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে অনেকেই ভেবেছিলেন এবার বুঝি স্বস্তি ফিরবে। পাকিস্তান-হিন্দুস্তান- দেশভাগের পরও মেলেনি স্বস্তি। পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের ওপর তথা আজকের বাংলাদেশের ওপর যে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে, চাকরি-ব্যবসা থেকে শুরু করে নানাভাবেই এ দেশকে বঞ্চিত রেখেছে তাতে সহজেই বোঝা গিয়েছিল মেলেনি কাক্সিক্ষত মুক্তি। শত্রুর চেহারা পরিবর্তন হয়েছে কেবল!

ইতিহাসের নানা পথপরিক্রমায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকরা কূটকৌশল অবলম্বন করে বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা দেয়নি। নানা টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করেছে। জনগণের মনে পুঞ্জিভূত হতে থাকে ক্ষোভের আগুন। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের হঠকারিতার নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরে পক্ষান্তরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি হুকুম দিতে না পারলেও যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত দেওয়ার মধ্য দিয়েই ঘোষণার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। এ বক্তব্যের পর মার্চের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা রাতের অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে এ দেশের নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের ওপর। ২৫ মার্চ রাতের ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নেতার নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মুক্তিযোদ্ধারা। বন্দি হন বঙ্গবন্ধু। তার নির্দেশনা অনুযায়ী শত্রু মোকাবেলায় নামেন বাংলার দামাল ছেলেরা।

নয় মাস যুদ্ধ শেষে আসে কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। আনন্দ ছড়ায় স্বাধীন ভূখণ্ডের আকাশে-বাতাসে। এ আনন্দের সঙ্গে ছিল শোকও। মুক্তিযুদ্ধে শহীন হন ত্রিশ লক্ষ শহীদ, সম্ভ্রম হারান দুই লাখ মা-বোন। পরের বছর দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। বন্দি অবস্থায় চিহ্নিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাহস না পেলেও এ দেশেরই কতিপয় কুলাঙ্গার সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যা করে ১৫ আগস্টের কালরাতে। পাল্টে যায় ইতিহাসের গতিপথ, শুরু হয় উল্টোযাত্রা। সে সময়ে দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানা। একপর্যায়ে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। শক্ত হাতে ধরেন আওয়ামী লীগের হাল। ক্ষমতায় এসে জাতির পিতা হত্যা মামলা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করেন। প্রশংসিত এ উদ্যোগে ইতিহাসের দায় মুক্তি ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপথে বাংলাদেশকে ফেরান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ায় প্রয়াসী হন তার সুযোগ্য কন্যা। আজকের দিনটি জাতির ইতিহাসে, বাংলাদেশের জন্য মাহেন্দ্রক্ষণ। শপথ হোক, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশ গড়ার প্রত্যয়। সত্যিকার অর্থে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হলেই বাস্তবায়িত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper