ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জাতির পিতা শেখ মুজিব

খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২০

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। জনসাধারণের কাছে তিনি শেখ মুজিব এবং শেখ সাহেব হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন।

 

১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’উপাধি দেওয়া হয়। তিনি বাঙালি জাতির হৃদয়ে স্থান করে নেন বঙ্গবন্ধু হিসেবে। তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

পাকিস্তান রাষ্ট্র ভেঙে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যাচার-নিপীড়ন, মৃত্যুঝুঁকি এবং দীর্ঘকাল রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাভোগসহ নানারকম শারীরিক মানসিক-নির্যাতন সহ্য করেছেন। তিনি ২৮ বছর বয়সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালির ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করেন, যা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সফল পরিণতি লাভ করে।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। জন্মলগ্নে দলের নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। পরে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে ‘আওয়ামী লীগ’নামে ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ বাঙালি জাতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ অর্জন তার মূলে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব।

পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালির ন্যায্য দাবি আদায়ের নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক ধাঁচের রাষ্ট্রযন্ত্রের দুঃশাসন, শোষণ ও জাতি নিপীড়নের নিগূঢ় থেকে বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামে এই দল ধারাবাহিকভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে।

`৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের আন্দোলন, যৌথ নির্বাচন ব্যবস্থা, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, আইয়ুবের এক দশকের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬২ ও ৬৪-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ঐতিহাসিক ছয়দফা আন্দোলন, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়, ১৯৭১ সালে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’খ্যাত কালজয়ী ভাষণ ও পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন এবং ২৬ মার্চ কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় এবং শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি করা হয়।

তাঁর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এ সরকারের অধীনেই গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী এবং শুরু হয় পাকসেনাদের প্রতিহত করার পালা।

দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর, ৩০ লাখ বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে আসে বিজয়। ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দান যেখান থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেখানেই বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামের নতুন একটি দেশ।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি ও স্বপ্নের স্বাধীন দেশে। স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনককে বরণ করতে লাখো মানুষের ঢল নামে বিমানবন্দরে। দেশে ফিরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে রাষ্ট্রপতির ধানমন্ডির বাসভবন ঘিরে ফেলে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার এবং তাঁর ব্যক্তিগত কর্মচারীদের হত্যা করে। কেবল তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেই সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। সদ্য স্বাধীন জাতির জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতি নেমে আসে এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডে, তৈরি হয় রাজনৈতিক শূন্যতা, ব্যাহত হয় গণতান্ত্রিক উন্নয়নের ধারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখনো আওয়ামী লীগের আদর্শগত প্রতীক হয়ে আছেন। ২০০৪ সালে বিবিসি বাংলার এক জরিপে মুজিব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে বিবেচিত হন।

বলা যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধিকার চেতনা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রেরণার প্রধানতম ব্যক্তি।

জন্ম

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোনের নাম ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের।

পারিবারিক জীবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যাদ্বয় হলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পুত্রদের নাম শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ কামাল ১৯৭১-এ মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যুদ্ধের একজন সমন্বয়ক ছিলেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধকালীন কমিশন লাভ করেন। শেখ জামাল গ্রেট ব্রিটেনের রয়েল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টে প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনড অফিসার পদে যোগ দেন। ছোট মেয়ে শেখ রেহানা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছেন। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল মাত্র ১০ বছর বয়সে ’৭৫ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

শিক্ষা

১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন যখন তার বয়স সাত বছর। নয় বছর বয়সে তথা ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেননি। কারণ তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল এবং এ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।

ছয় দফা আন্দোলন

১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘৬ দফা দাবি’ পেশ করেন। ছয় দফার মধ্যে ছিলÑ শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা, মুদ্রা বা অর্থ-সমন্ধীয় ক্ষমতা, রাজস্ব কর বা শুল্ক সমন্ধীয় ক্ষমতা, বৈদেশিক বাণিজ্য-বিষয়ক ক্ষমতা, আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতাসম্পর্কিত বিষয়সমূহের প্রকৃতি ও ধরন নিয়ে আলোচনা।

পারিবারিক জীবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যাদ্বয় হলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পুত্রদের নাম শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ কামাল ১৯৭১-এ মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যুদ্ধের একজন সমন্বয়ক ছিলেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধকালীন কমিশন লাভ করেন। শেখ জামাল গ্রেট ব্রিটেনের রয়েল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টে প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনড অফিসার পদে যোগ দেন। ছোট মেয়ে শেখ রেহানা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছেন। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল মাত্র ১০ বছর বয়সে ’৭৫ নির্মম হত্যাণ্ডের শিকার হন।

বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর এই বাড়িটি সামরিক কর্তৃপক্ষের অধীনে ছিল। ১০ জুন ১৯৮১ সালে বাড়িটি বুঝে নেওয়ার পর দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ঘোষণা করেছিলেন ঐতিহাসিক এই বাড়িটি হবে জনগণের। ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’হিসেবে শুভ উদ্বোধন করা হয়। ৩২ নম্বরের বাড়ি ও টুঙ্গিপাড়ার বাড়ি দেখাশোনা করার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। ট্রাস্টের অধীনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ছাড়াও শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজ পরিচালিত হয়।

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper