ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঢাকা সিটিতে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়ছে

তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ৯:৫০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২০

রাজধানীতে এখন মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যদিকে কিউলেক্স মশার উপদ্রব এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ রয়েছে। নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। আতঙ্ক থেকে নগরবাসীকে ফিরাতে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগ।

আতঙ্ক দূর করতে সংস্থাগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। সংস্থার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও মনে করছেন, এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র অবস্থা। কোনটি ছেড়ে কোনটির পেছনে ছুটবে তা নিয়ে দিশেহারা

ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন। সূত্র মতে, স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে সারা বছর কোনো না কোনো কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকতে হচ্ছে। এতে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব থাকা কর্মচারী মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠছেন। কাজ করতে গিয়ে তাদের ভিতরেও একঘেয়ামি দেখা যায়। ফলে সিটি করপোরেশন শতচেষ্টা শর্তেও মশার উপদ্রব কমানো সম্ভব হচ্ছে না।

জানা যায়, সাধারণত এপ্রিল-জুন মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। এ সময়ে কয়েক দিনের টানা গরমের পর স্বস্তির বৃষ্টি হলেও আশঙ্কাজনকহারে বাড়বে এডিস মশার প্রকোপ। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এডিস মশার বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক এমন আবহাওয়া। আর জমে থাকা পানিতে এডিস মশার জন্ম হয়। এবার অবশ্য ঢাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও মেট্রোরেলের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলমান। এ জন্য সঠিক প্রস্তুতি না নিলে আগামী এক মাসের ভিতর ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিতে পারে।

ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে মশার উপদ্রব বাড়ছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফয়সাল খোলা কাগজকে বলেন, শীত চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মশার উপদ্রব বেড়েছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সামনে বর্ষাকালে মশা আরও বেড়ে যাবে আমার ধারণা।

উত্তর সিটি করপোরেশনের আদাবর এলাকার বাসিন্দা আবদুল বারেক একই কথা বলেন। তিনি বলেন, এবার অনেক মশার উপদ্রব। দিনের বেলা ঘরে কোনো রকম থাকা গেলেও বিকালের পর থেকে মশার উৎপাতে বসে থাকাই মুশকিল হয়ে যায়। সিটি করপোরেশন থেকে মাঝে মধ্যে যে ওষুধ ছিটানো হয় তাতে মশা মরে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাসার মশা বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, ঢাকাকে মোট ছয়টা ভাগে ভাগ করে মশার ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত গবেষণায় ঢাকায় কিউলেক্স মশা এবং এডিস মশা দুটোই পেয়েছি। রাজধানীতে এডিস মশার যে ঘনত্বের মাত্রা। তা গত বছরের তুলনায় বেশি।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেঙ্গু রোগীর যে হিসাব পাওয়া যাচ্ছে, সে হিসাবেও দেখা যাচ্ছে, গত বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। যেহেতু গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে মশার ঘনত্ব এবং ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি, তাই একজন গবেষক হিসেবে ধারণা করছি, এ বছর যদি দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, চলতি বছরে এ পর্যন্ত সারা দেশে ২৬০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। তবে, এবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমবে। কারণ সিটি করপোরেশন আগেভাগেই ঢাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাচ্ছ। জনগণও আগের তুলনায় সচেতন হয়েছে।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন নার্স বলেন, আমরা এখনো ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছি। তবে সংখ্যায় কম। আগে যেখানে আমরা প্রতিদিন ৩০ জন নতুন রোগী হাসপাতালে আসতো এখন সেই পরিমাণে না পেলেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অনেকেই নতুনভাবে ভর্তি হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগটাকে আসলে এখন আর কোনো নির্দিষ্ট মাসে সীমাবদ্ধ করে রাখার উপায় নেই। কারণ এডিস মশা কিন্তু বংশবিস্তার এখন প্রায় পুরো বছরই। আর তাই রোগীর সংখ্যা কমে এলেও একেবারেই শঙ্কা কমে গেছে বলা যায় না। আর এই শঙ্কার কথা মাথাতে নিয়েই বছরব্যাপী সচেতনতা কর্মসূচি চালু রাখতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদ বলেন, গত বছর রাজধানীতে এডিস মশার উপদ্রব বাড়ায় চলতি বছরে মশক নিধনকর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাজ করেছে। এরপরও কিউলেক্স মশার উপদ্রব্য দেখা যাচ্ছে, তবে এডিস মশার উপদ্রব্য গত বছরের তুলনায় কম থাকবে। কারণ এখন যেসব এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন যেন পানি জমে না থাকে। মেট্রোরেলের কাজ যারা করছেন তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, এডিস ও কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এডিস মশা বংশবিস্তার ধ্বংস করছে মশক নিধনকর্মীরা। প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধনকর্মী নিয়মিত কাজ করছেন। এ জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক পদযাত্রা ও পথসভা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মশককর্মীদের বেগবান করতে ২শ ফগার মেশিন, ২৩৮টি পালস ফগমেশিন, ১৫০টি হার্টসন হস্তচালিত মেশিন, ৩৪০টি প্লাস্টিক হস্তচালিত মেশিন, ২টি ভেহিকল মাউন্টিং ফগার মেশিন, ১০টি মটরসাইকেল ফগার ও হস্তচালিত মেশিন, ২০টি মিস্ট ব্লোয়ার, পাওয়ার স্প্রে মেশিন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

 

 
Electronic Paper