ব্যবসা-বাণিজ্যে নৈতিকতার সংকট
সম্পাদকীয়
🕐 ৭:২৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০২০
অবশেষে করোনার হানা বাংলাদেশেও। দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, আবার প্রতিরোধে বেড়েছে সচেতনতাও। ফলে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
এ সুযোগে অসাধু ও অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন এসব পণ্য। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন জনগণ। ১০ টাকা দামের একটি মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১শ’টাকায়, কোথাও কোথাও তারচে’ ও বেশি দামে। তবে সবচে’বড় কথা হচ্ছে এসব পণ্য পাওয়াও যাচ্ছে না। ধরেই নেওয়া যায় এই না পাওয়ার বিষয়টি ব্যবসায়ীদের কারসাজিরই অংশ। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বড় অংশ প্রথাগতভাবেই ব্যবসায়িক নীতি ও নৈতিকতার ধার ধারেন না। করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক তাকে কেন্দ্র করে সেই চরিত্রের ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
অসাধু ব্যবসায়ীরা সবসময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। কোন দৈবদুর্বিপাক দেখা দিলে এরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন, উৎপাদন কম সেই অজুহাত দেখিয়ে বাড়ানো হয় পণ্যের দাম। পবিত্র রমজান মাসে এই ধরণের ব্যবসায়ী শ্রেণিটি হয়ে ওঠেন আরও বেপরোয়া। গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে দেশে পেঁয়াজ নিয়ে যে কাণ্ড হয়েছে তার পেছনেও ছিল অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম। ব্যবসায়ীদের এই দৌরাত্ম কমিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা অনুরোধ-উপরোধের পাশাপাশি চালানো হয় অভিযানও।
মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা মোকাবেলায় মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মঙ্গলবার রাজধানীতে র্যাব, ঢাকা সিটি করপোরেশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর পৃথক অভিযান পরিচালনা করে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বেশি রাখায় সাতটি দোকানিকে ছয় লাখ টাকা জরিমানা করে।
আমাদের দেশে ব্যবসায়ীদের এই মানসিকতা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। কিন্তু তা আমলে নেওয়ার কোন প্রয়োজনই বোধ করেন না ব্যবসায়ীরা। আসলে ব্যবসায়ীদের এই শ্রেণিটি মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে ব্যবসা করতেই অভ্যস্ত, তাই যখনই কোন সমস্যা দেখা দেয়, কোন পণ্যের সরবরাহ কমে যায় কিংবা চাহিদা বেড়ে যায় তখন এরা মাঠে নামে। করোনা ভাইরাসের মতো প্রাণঘাতী একটি সমস্যাকে পুঁজি করেও এরা ফায়দা হাসিল করেছে।
এদিকে পবিত্র রমজান মাস সমাগত। তাই অনেকেরই আশঙ্কা সে সময়ও হয়তো এরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এজন্য সরকারের আগেভাগেই প্রস্তুতি রাখতে হবে। টিসিবিসহ পণ্য সরবরাহের বিকল্প উৎসগুলোকে পুরোপুরি প্রস্তুত রাখতে হবে। যেসব পণ্যের চাহিদা সে সময় বাড়বে তার পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। আর দেশের মানুষকেও ধৈর্য্যশীল, সহনশীল এবং প্রয়োজনবোধে রক্ষণশীল হতে হবে। কোন পণ্যের ঘাটতি হলে তা পাওয়ার জন্য হুড়াহুড়ি করলে তাতে ক্রেতার লাভ হয় না, লাভবান হন অসাধু ব্যবসায়ী। করোনা ভাইরাসজনিত সমস্যার পাশাপাশি আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা রোধে মানুষের সচেতনতাই হতে পারে সবচে’ কার্যকরী উপায়।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228