ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আড্ডায় গল্পে মুক্তিযুদ্ধ

উমর ফারুক
🕐 ৭:২৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৭, ২০২০

লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গল্প শোনার আগ্রহের কমতি নেই কারো। তরুণ প্রজন্মের কাছে আগ্রহের জায়গাটা অনেক বেশি। রাবিতে অধ্যয়নরত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মদের নিয়ে এমন আড্ডায় বসেছিল রাবি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। সেই আলোচনায় উঠে আসা গল্প তুলে ধরছেন- উমর ফারুক।

৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১! তৎকালীন ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দীন এর কথামতো চাঁপাইনবাবগঞ্জ রোডে এ্যামবুস টিভি হাসপাতাল সেনাবাহিনী ক্যাম্প অপারেশন এবং নওহাটা এয়ারপোর্ট ক্যাম্প অপারেশনের দায়িত্ব পড়ে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক (বীরবিক্রম) এর ওপরে। প্রেমতলীতে জিন্নাত মাস্টারের বাড়ীতে সেনাবাহিনী ক্যাম্প করেছে। ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অপারেশনে যান তিনি।

কিছুক্ষণের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হলে সঙ্গীদের সেটা প্রতিরোধ করতে বলেন কিন্তু পরক্ষণেই গোলাগুলিতে বুকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহযোগিরা ক্ষত স্থানে গামছা ঢুকিয়ে নিরাপদ এক আদিবাসীর বাড়িতে গোপন আশ্রয় নেয়। ভেবেছিল হয়তো লাল সবুজ বাংলা হয়তো দেখতে পাবে না। কিন্তু তাদের মত বীর যোদ্ধাদের জন্য আজ আমরা স্বাধীন।

জান্নাতুন নাঈমা জানান বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ছোটবেলা থেকেই পিতার মুখে শুনেছেন রণাজ্ঞনের কথা। আড্ডায় তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার দরুণ মুক্তিযুদ্ধের রোমাঞ্চকর গল্পগুলো শোনার সুযোগ পাওয়া যেন সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য। তেমনিই একটি গল্প আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দের মুখে শুনেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১নং সেক্টরের অন্তর্গত ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার ১০নং খেড়–য়াজানী ইউনিয়নের ‘ভিটিবাড়ীতে’পাকিস্তানী মিলিটারির আতঙ্ক রেফাজ কোম্পানি সম্মুখ যুদ্ধরত ছিল।

এই কোম্পানিতে বাবাসহ প্রায় শত জনের মত সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে জয়ের সম্ভাবনার মধ্য দিয়েই হঠাৎ করে ফুলবাড়ীয়া থানা থেকে অর্থাৎ সম্মুখ শত্রুর পাশাপাশি পেছন থেকে আক্রমণ আসতে থাকে। সেই আক্রমণ এর গতিবিধি লক্ষ্য করতে গিয়ে এক র্পযায়ে  হেলমেটে এসে গুলি লাগে এবং তিনি একটুর জন্য বেঁচে যান।  এই সম্মুখ যুদ্ধটি মুক্তাগাছার ঐতিহ্যবাহী ‘ভিটিবাড়ি যুদ্ধ’ হিসেবে পরিচিত।

মুক্তিযুদ্ধকালীন পিতার রনাঙ্গণে যুদ্ধের ঘটনা সম্পর্কে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডের সম্পাদক অমর কুমার রায় বলেন- ১৯৯১ সালের জুলাই মাসের দিকে খুলনার পাইকগাছার কপিলমুনীতে নদীতে মোটরচালিত নৌকাতে-পাক সেনাবাহিনী টহল দিতো। সেখানে বর্ষার শেষদিকে বাবাসহ প্রায় ১৫-২০ জন মুক্তিযোদ্ধা আগে হতে পজিশন নিয়েছিল। যখন নৌকাতে সেনাবাহিনীরা এলো একসঙ্গে গর্জে উঠলো রাইফেল। তারপর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কয়েকজন লাফ দিল এবং পালিয়ে গেল। বাকিরা সব মারা গেল।

বীর মুক্তিযোদ্ধার নানার যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে ওমর বলেন,  ১৯৭১ সালে ৭ মার্চের পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন ১১ নং সেক্টরের অধীনে ফুলবাড়ীয়া, ভালুকা (ময়মনসিংহ) এলাকায় যুদ্ধে অংশ নেয় ইদ্রীস আলি। যখন তিনি যুদ্ধে গিয়েছিলেন তখন স্থানীয় আল বদর বাহিনী সেই এলাকায়  ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। যারা যুদ্ধে গিয়েছিল তাদের পরিবারের ওপর চালানো হতো নির্যাতন।  মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্মদের গল্পে এমনই তথ্য উঠে আসে ১৯৭১ সালের ৯ মাসের রণাঙ্গনের দিনগুলির কথা। তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার কোন বিকল্প নেই। যাতে তরুণ প্রজন্মের মনে হাজার বছর অম্লান হয়ে থাকে দেশের সূর্য সন্তানরা।

 
Electronic Paper