ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভাষা বিভ্রাট কাহারে কয়

আলম তালুকদার
🕐 ৩:২৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৩, ২০২০

রম্য পাতার পাঠকরা কঠিনের জন্য মানসিকভাবে তৈরি না-ও থাকতে পারেন। তাই বলছিলাম কী, পৃথিবীতে আসলে সাড়ে চার হাজার ভাষা নেই! আছে মাত্র তিনটি ভাষা! একটি হল- যার যার মাতৃভাষা, আরেকটি আন্তর্জাতিক ভাষা, আরেকটি হল- গিয়ে তেলেগু ভাষা। এ তেলেগু পড়েই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবেন না। এ তেলেগুর মানে হল তেল মারার মানে তোয়াজের, মোসাহেবির ভাষা। তো আপাতত এ তিনটা জানা থাকলেই কামফতে!

ভাষা বিভ্রাট কমবেশি পৃখিবীর সব ভাষাতেই হয়। প্রমিত ভাষায় কথা সবাই বলতে পারেন না। আর আঞ্চলিক ভাষার যে স্বাদ তা আবার প্রমিত ভাষায় পাওয়া কঠিন। প্রমথ চৌধুরী বলে গেছেন, ‘বাংলাভাষা আহত হয়েছে সিলেটে, আর নিহত হয়েছে চট্টগ্রামে’। সত্যি বলছি আমি নিজের কানে কিন্তু শুনিনি। আমাদের জটিলতা, সুবিধা অসুবিধা হল- ইংরেজি আর বাংলার মধ্যে। ইংরেজি উচ্চারণে বিউটি বাট হয় কিন্তু পিউটি পাট হয় না! বাংলায় লিখতে হয় পদ্মা উচ্চারণ হয় পদ্যা! এমন অনেক ভজঘট আছে। একটি শব্দ এদিক ওদিক হলেই সর্বনাশ! যেমন- ‘লোকটি ছেলেমেয়ে নিয়ে শুয়ে আছে’। কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যখন লেখা বা বলা হয়, ‘লোকটি মেয়েছেলে নিয়ে শুয়ে আছে’, তখন অর্থ পাল্টে যায়! উচ্চারণ বিভ্রাট হলে আরো বিভ্রাট!

পুলিশের এক বড় কর্তা সাংবাদিকদের বললেন, ‘থানা বাড়াবাড়িতে চলছে’। সাংবাদিকরা শুনে থমকে গেলেন। বাড়াবাড়ি চললে থামান। না তিনি আবারও বললেন, আরে ভাই বুঝলেন না, থানা বাড়াবাড়িতে চলছে। তাতে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। শেষে বোঝা গেল আসলে ভাড়া বাড়িতে থানার কার্যক্রম চলছে!
এরকটা জোকস আইছে।

‘ওকে মারলে কেন?’
‘স্যার, আমি তো কাউকে মারিনি!’
‘আগে বলো ওকে মারলে কেন? কেন ওকে মারলে?’
শেষে উদ্ধার হলো, উঁকি মারলে কেন? হা হা হা। আচ্ছা আরেকটা। পাঁচতলা দালানের নিচতালায় কিছু ব্যাচেলর থাকে। উপর তলায় অনেকে পরিবার নিয়ে থাকে। চারতলার একভাবী বারান্দায় শাড়ি শুকানোর জন্য লম্বা করে নিচের দিকে শাড়ি ঝুলিয়ে দিয়েছে। নিচতলার এক দার্শনিক টাইপের ব্যাচেলর তার আন্ডারওয়্যার ক্লিপ দিয়ে আটকিয়ে শুকানোর ব্যবস্থা করেছে। তো মহিলা শাড়ি তুলতে গিয়ে বুঝলেন, নিচে কোথাও শাড়ি আটকে গেছে। তো তিনি একটু জোরে বারান্দা থেকে বলতে থাকেন, ‘ভাই, আপনার জাঙ্গিয়া খোলেন।’
নিচ থেকে বলতে থাকে, ‘আপনার শাড়ি একটু তোলেন!’ কী বুঝলেন?
ইশারাও একটা ভাষা। কাশি বা হাঁচিও একটা ভাষা। কাউকে রাগানোর জন্য কারো মুদ্রাদোষের পুনরাবৃত্তিও একটা অঘটনের ভাষা হতে পারে। চোখের চাউনিও একটা ভাষা বটে। আঙুলের ইশারা বা সংখ্যাও একটা ভাষা। উচ্চারণ বিভ্রাট সবচেয়ে বড় বিভ্রাট। পানি হয় হানি। রাত হয়ে যায় রাইত। তবে ভাষা অনেকটা প্রবাহমান নদীর মতো। একই শব্দ এলাকা ভেদে অর্থ পাল্টেও যায়। বাংলা ভাষার উচ্চারণ ঠিকমতো না হলে অর্থও পাল্টে যায়। যেমন ঢাকা। এক ছেলে এক মেয়েকে জিজ্ঞেস করছে, আপনার কোন জেলা? সে জবাবে বলল, ঢাকা। ছেলেটি বলল, ও ঢাকা? আফসোস আপনার ঢাকা জায়গাটা দেখাই হলো না! আবার বিষ্টি পড়ে আর সে পড়ে একই অর্থ নয়। এক ছেলে বিষ্টি পড়িতেছে ইংরেজি করেছে, দি রেইন ইজ রিডিং! তো ভাষা মানুষকে প্রকাশ করে, বিকাশ করে, হিসাবনিকাশও করে। ভাষার কাঁচামাল হলো শব্দ। ‘শব্দ ছাড়া হয় না কিছু শব্দ হলো গুণ/ শব্দে জায়গায় ভালোবাসা শব্দেই করে খুন’! এই রে আরেকটা আসিয়া গেল যে। আচ্ছা, খালাশ করে দিই।

এক রাজা তার প্রধান উজিরকে বলেছেন, ‘বাজার থেকে অতি উত্তম গোশত আনা হোক।’ তিনি গরু ছাগলের জিব্বা এনে রাজার সামনে হাজির করলেন। রাজা দেখে বললেন, ‘কীভাবে ইহা উত্তম?’ উজির জবাবে বললেন, ‘ইহা দ্বারাই মানুষ অতি উত্তম কথা, মিষ্টি কথা, ভালোবাসার কথা কহিয়া থাকে হুজুর।’ ‘আচ্ছা। তাহা হইলে, খারাপ গোশত আনা হোক।’ উজির এবারেও ঐ জিব্বা হাজির করলেন। রাজা দেখে বললেন, ‘ইহা কী?’
উজির বললেন, ‘ইহাই খারাপ গোশত।’
‘কীভাবে?’

‘হুজুর, ইহা দ্বারাই মানুষ খারাপ শব্দ উচ্চারণ করে, কাউকে রাগিয়ে দেয়, উত্তেজিত করে। ঝগড়া বিবাদ কলহ করে থাকে। কাজেই ইহা খারাপ গোশত!’ প্রিয় পাঠক, এবার বোঝেন ভালো মন্দ অস্ত্র বা বন্দুক মানুষের ভেতরেই। কে কীভাবে ব্যবহার করবে সেটা তার ওপর নির্ভর করে থাকে।

প্রমিত ভাষায় কথা বলা, প্রমিত উচ্চারণে কথা বলা একটা নিরন্তর অনুশীলন। সবাই পারে না। তবে তাই বলে আশাও দেওয়া যাবে না বাদ। চিরকাল থেকে যাবে ভাষা বিভ্রাট ফাঁদ! সবার গগনে উঠুক চাঁদ। সবাইকে ধন্যবাদ।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper