ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাড়ির আঙিনায় চিত্রা হরিণ

পলাশ দত্ত, আগৈলঝাড়া, বরিশাল
🕐 ১১:২০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার গ্রামের বাসিন্দা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জেমস মৃদুল হালদার। উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার উত্তরে রাজিহার গ্রামে গড়ে তুলেছেন বিভাগের একমাত্র চিত্রা হরিণের খামার। লাজুক স্বভাবের অথচ চঞ্চল প্রকৃতির এ হরিণের দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানো দেখতে প্রতিদিনই এ খামারে ভিড় করছে মানুষ। তবে বাণিজ্যিকভাবে হরিণ পালনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন এই খামারি।

২০১০ সালে রাজিহার ইউনিয়নের রাজিহার গ্রামে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আলো শিখার পরিচালক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শামুয়েল হালদারের ছেলে জেমস মৃদুল হালদার শখের বশে ব্যক্তিপর্যায়ে দুটি চিত্রা হরিণ পালন শুরু করেন। শুরুতে তিনি একটি পুরুষ ও একটি মাদী চিত্রা হরিণ রাজশাহী থেকে কিনে আনেন। পরিবহন খরচসহ ওই দুটির দাম পড়েছিলো এক লাখ টাকা। এর কিছুদিন পর হরিণ বাচ্চা প্রসব করে এবং বছরে বছরে হরিণের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ব্যক্তি পর্যায়ে হরিণ পালার শখ গিয়ে ঠেকে খামারিতে। সেই খামারে গত ১০ বছরে কখনো ১৬ কখনো ২২ কিংবা কখনো এর চেয়েও বেশি হরিণ বিচরণ করেছে একসঙ্গে। বর্তমানে তার খামারে ১৬টি হরিণ রয়েছে।

জেমস মৃদুল হালদার বলেন, চিত্রা হরিণ পোষা সংক্রান্ত নীতিমালা ২০০৯ অনুমোদনের পর শখের বশে তার হরিণ পালার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। মাদী হরিণটি কয়েক মাস পরই দুটি বাচ্চা প্রসব করলে ভাল লাগা বেড়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে ব্যক্তি পর্যায় থেকে খামারি পর্যায়ে চলে যায়। ১০টির বেশি হয়ে যায় হরিণের সংখ্যা। বর্তমানে খামারে ১৬টি হরিণ রয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে ২৬টি হরিণ ছিল খামারে। আটটি দান করা হয়েছে এবং দুটি মারা গেছে।

রোগ বালাইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, হরিণের তেমন কোনো রোগ নেই, তাই পালনটা সহজ। শুধু হরিণের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি থাকে। তার মধ্যে গাজীপুরের হরিণগুলো দুটি বাচ্চাও দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি ছাড়া চিত্রা হরিণ পানি পান করে না। এদের খাবারের তালিকায় রয়েছে গমের ভুসি, ডালের ভুসি, গুঁড়া সয়াবিন, মালঞ্চ-কলমি পাতা। এছাড়া কেওড়া ফল ও বাঁধাকপিও খেতে দিচ্ছি হরিণগুলোকে।

লালন-পালনে বিশেষ নজর রাখতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য আলাদা লোক রাখতে হয়েছে। ৪০ শতক জমির ওই খামারটিতে মাঠের বাইরে আলাদা ঘর করতে হয়েছে হরিণের জন্য। পালন করে বড় করা একটি হরিণ জবাই করে এর মাংস খাওয়াটাও মুশকিল। কারণ এক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ (বয়স্ক কিংবা অসুস্থতা) দেখিয়ে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ অধিদফতরকে অবহিত করে অনুমতি আনতে হয়।

এর বাইরে হরিণের বাচ্চা হলেও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ অধিদফতরকে অবহিত করতে হয়। প্রতিবছর একেকটি হরিণের জন্যে আগে একশ’ টাকা করে দিতে হলেও ২০১৮ সাল থেকে এক হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে সরকারকে। এছাড়া ১৫ শতাংশ ভ্যাট। নতুন লাইসেন্স করা, নবায়ন করা সবকিছু মিলিয়ে দিন দিন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

হরিণ বন্যপ্রাণি হলেও গবাদিপশুর মতো পোষ মানে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার খামারে সর্বোচ্চ সাত বছর বয়সের আর সর্বনিম্ন দুই মাস বয়সী হরিণ রয়েছে। যাদের অনেকগুলোই গৃহপালিত প্রাণির মতো কাছে আসছে, তাদের শরীরে হাত দেওয়া যাচ্ছে, আদর করা যাচ্ছে। তবে বেশি মানুষ দেখলে হরিণগুলো একটু ঘাবড়ে যায়। তাই বাধ্য হয়েই খামারের সীমানা প্রাচীরে দুটি স্তর করতে হয়েছে। তারপরও হরিণ পালন করা সহজ। যেহেতু চিত্রা হরিণ পোষ মানে, সে কারণে বিলুপ্তি ঠেকাতে গবাদিপশুর মতো এর খামারের অনুমোদন দেওয়া এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ সরকারের দেওয়া উচিত। তা না হলে যে হারে দেশে বনভূমি কমে আসছে, তাতে চিত্রা হরিণ একদিন সত্যি সত্যিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, খামারের অনুমোদনের পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া উচিত। কারণ, প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকরা হরিণের রোগ-বালাই সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। আবার একটা হরিণ ধরার জন্য গাজীপুর নয়তো ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে লোক আনতে হয়। সেক্ষেত্রে এসব সমস্যার সমাধানে অঞ্চলভিত্তিক জনবল নিয়োগ দেওয়া উচিত। সবকিছু মিলিয়ে হরিণ যাতে সবাই পালন করতে পারে সেজন্য নীতিমালা শিথিল করা, ট্যাক্স কমানো এবং লাইসেন্স গণহারে দেওয়া উচিত।

 
Electronic Paper