ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাচ্চা ভয়ঙ্কর

শিমুল শাহিন
🕐 ২:৪৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০

প্রান্ত ক্লাস থ্রিতে পড়ে। সন্ধ্যাবেলায় ওকে আমি পড়াই! ছাত্র হিসেবে বেশ মেধাবী কিন্তু হলফ করে বলতে পারি এ যাবৎকালে যত ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়েছি তাদের সবার চেয়ে দুষ্টু আর ইঁচড়েপাকা এ প্রান্তই! যতক্ষণ ওকে পড়াই, ভয়ে ভয়ে থাকি- কখন কী বলে ফাঁসিয়ে দেয়!

কিছুদিন আগের কথা। প্রান্তকে পড়াচ্ছি, ঠিক এমন সময়েই বাসার কলিং বেলটা বেজে ওঠল! প্রান্তর আম্মু মিতু ভাবি গিয়ে দরজা খুললেন। অন্য কেউ নন, প্রান্তর আব্বু অফিস থেকে ফিরেছেন।

বাসায় ঢুকেই তিনি আমার কুশল জিজ্ঞেস শেষে প্রান্তর পড়াশোনার খোঁজ নিলেন। আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ভাবিকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘প্যাকেটটা নিয়ে যাও তো!’

নিতান্তই অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রান্তর বাবার হাতে চোখ গেল! এক পলক আড়চোখে তাকিয়েছি, তাতেই দেখলাম উনার হাতে একটা মিষ্টির প্যাকেট! তাকানোটাই আমার জন্য কাল হল! ভাবি ভেতরের ঘর থেকে এসে ভাইয়ার হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেটটা নিলেন। ঘরমুখো হতেই প্রান্ত বলে উঠল, ‘আম্মু, স্যারকে মিষ্টি খেতে দিও! স্যার বারবার মিষ্টির দিকে তাকাচ্ছিলেন!’ এমন কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য হতবুদ্ধি হয়ে গেছি!

ভাবি মুচকি হেসে অন্য ঘরে চলে গেলেন। ফিরে এলেন ট্রেতে দৈনন্দিন নাস্তার সঙ্গে মিষ্টি নিয়ে! মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম, নাস্তা করলাম! পরিস্থিতি অনুকূলে এনে স্বাভাবিকভাবে আবার পড়ানো শুরু করলাম!

এমন কিছু ঘটনার জন্য প্রান্তকে পড়াতে এসে বেশ আড়ষ্ট থাকি! তবে আজ সে যে কাণ্ড ঘটিয়েছে- প্রস্তুত ছিলাম না! অতীতে সে যত বিড়ম্বনায় ফেলেছে সেগুলো এর ধারের পাশেও নেই! এ অনাহূত ঘটনা স্মরণকালের সকল ঘটনা প্রবাহকে হার মানিয়েছে! বদটা এমন বিড়ম্বনায় ফেলতে পারে তা কল্পনাও করিনি! আজ একটু দেরি করেই পড়াতে গিয়েছিলাম! পড়াতে গিয়েই টের পেলাম মিতু ভাবির ভার্সিটি পড়–য়া ছোট বোনটা প্রান্তদের বাসায় এসেছে। বেশ কয়েকবার ও সামনে দিয়ে নূপুর বাজিয়ে হেঁটেও গেল! কয়েকবার প্রান্তর কাছে এসে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে গেল- রিমোট কই, মোবাইলটা কই ইত্যাদি!

এর আগে ভাবির মুখে ওর বোনের এত রূপ-গুণের প্রশংসা শুনেছি যে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে এক পলক দেখতে ইচ্ছে করছিল বারবার! কিন্তু প্রান্ত আবার কী না কী কাহিনী ঘটায় এ ভয়ে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও একটুও মাথা তুলে মেয়েটার দিকে তাকাই নি! বরং আরও প্রান্তর বই-খাতার দিকে মুখ গুঁজে রয়েছি!

বারবার ঘড়ি দেখছি- পড়ানোর সময়টা কোনোমতে পার করে বের হতে পারলে বাঁচি! ঠিক এমন সময় মিতু ভাবি নাস্তা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন! উনি পড়ার টেবিলে নাস্তার প্লেটটা রাখতেই প্রান্ত বলে উঠল, ‘জানো আম্মু, স্যার খালামনির দিকে তাকাচ্ছিল!’

প্রান্তর কথা শুনে আমি তব্দা খেয়ে গেছি! ভাবিও ওর মুখে এমন কথা শুনে রীতিমতো হাঁ হয়ে গেছেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আমি নিজের মুখে আঙুল দিয়ে অস্ফুট স্বরে ওর দিকে ইশারা করে বললাম, ‘চুপ করো, চুপ করো!’ কিন্তু আমার নিষেধে ও থামবে কী, বরং যেন আরও উৎসাহ পেল! সে আবারও বলে উঠল, ‘আম্মু স্যার খালামনির দিকে একবার নয়, অনেকবার তাকিয়েছেন। সেদিন যেভাবে মিষ্টির দিকে তাকিয়েছিলেন- সেভাবেই!’

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper