ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পাঠকের চিঠি

বাংলিশে গর্বিত বাঙালি!

লতিফা আক্তার চুমকি
🕐 ৯:৫১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০

ভাষা সম্পর্কে বলতে গেলে বিশ্বের যেকোনো দেশ বা জাতির প্রথমে মনে পড়বে বাঙালির কথা, বাংলাদেশের কথা। ইতিহাসে প্রথম ভাষার জন্য রক্ত দেওয়া জাতির কথা। চলছে ভাষার মাস। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য প্রাণ দেয় বাঙালিরা। সেদিন মাতৃভাষাকে অর্জন করার জন্য রক্ত দিয়েছিল বাঙালিরা, পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতাকে পায়ে দলে অর্জিত হয়েছিল আমাদের মুখের ভাষা, মায়ের শেখানো ভাষা। এ ভাষা আন্দোলন থেকেই শুরু হয় বাঙালির মুক্তির চেতনা, স্বাধীনতার চেতনা।

বাঙালি শব্দটাকে লিখে দেওয়া হয় সেদিন রক্ত দিয়ে বিশ^বাসীর দরবারে। জাতি হিসেবে আমাদের সর্বোচ্চ পাওয়া জাতিসংঘ কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা। ভাষা নিয়ে এ প্রাপ্তি আমাদের গর্বিত করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্মানের সঙ্গে পালন করে প্রতিটা দেশ। প্রশ্ন আসে মনে, আজকের বর্তমান বাঙালি হিসেবে আমরা কি সত্যি গর্বের দাবিদার! শিক্ষাক্ষেত্রে তাকালে দেখতে পাই, ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলা মাধ্যমের স্কুলে আর পড়তে চায়না, এমনকি বাবা-মাও সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়াতেই আগ্রহী। অনেক সময় তো এটাও দেখা যায়, সন্তানের ইচ্ছার বাইরে তাদের জোর করে ভর্তি করা হয় ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে। আবার বাবা-মা তার সন্তান যে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়াচ্ছেন, তুলনামূলক বেশি টাকা খরচ করে এ কথা বলতে ও প্রকাশ করতে খুবই গর্ববোধ করেন। 

আমাদের সমাজে সবার মধ্যে প্রচলিত একটা ধারণা যে বাংলার থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করাটা বেশি সম্মানের, আর তাই তাদের মনে হয় বাংলা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করে সে কী করবে? পক্ষান্তরে ইংরেজিতে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা ব্যক্তির দিকে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি একটু উন্নত থাকে। দেশে চাকরিপ্রার্থীদের ইংরেজির ওপর স্নাতকোত্তর বা আলাদা দক্ষতা থাকলে তাকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ব্যক্তির থেকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আরেকটা বিষয় মহামারী আকার ধারণ করেছে- আমরা সাধারণত কথা বলার সময়, একটা বাক্যে ১০টা শব্দ ব্যবহার করলে তার মধ্যে ৭টি শব্দ ইংরেজি থাকে! বন্ধুমহলে, চাকরির ক্ষেত্রে এমন ইংরেজি বাংলা মিশিয়ে বলাটা যেন এখন সম্মানের হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর যারা এমন বাংলা, ইংরেজি শব্দ একসঙ্গে ব্যবহার করে কথা বলতে না পারে তাদের অশিক্ষিত, ক্ষ্যাত, গাঁইয়া বলে সম্বোধন করা হয়। আবার দেখা যায়, অনেকে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পর সে যদি ইংরেজিতে কথা না বলে বা বলতে না পারে তখন তাকে বলা হয় ‘এতদিন পড়াশোনা করে কী শিখলে’।

প্রশ্ন তো চলেই আসে, শিক্ষিত হওয়ার প্রধান শর্ত কি তাহলে এখন ইংরেজি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন। আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি শেখার গুরুত্ব অবশ্যই আছে, কিন্তু বাঙালির জন্য কখনোই শিক্ষিত হওয়ার বা সম্মান বেশি পাওয়া, এবং চাকরি ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাওয়ার হাতিয়ার ইংরেজি ভাষা জানা হতে পারে না। চারপাশে এখন এমন মানুষের অভাব দেখা দিচ্ছে, যারা সঠিকভাবে বাংলা ভাষা সম্পর্কে জানে না, শুদ্ধভাবে বাংলায় কথা বলতে পারে না, এমনকি তাদের ব্যবহৃত ইংরেজি শব্দের সঠিক বাংলা অর্থ জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবে না! অথচ গুটিকয়েক ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে বাংলা ভাষার সৌন্দর্য নষ্ট করছে। যদি এমনই চলতে থাকে ভাষার অপব্যবহার তাহলে ভবিষ্যৎ বাংলা ভাষার জন্য হুমকি হবে। বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার ও চর্চা করতে হবে আর এ অপভাষা ও অপসংস্কৃতি থেকে এখনই বের হয়ে আসতে হবে।

প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ ভাষা সম্পর্কে, সম্মানের সঙ্গে চর্চা করতে হবে বাংলা ভাষাকে। বাচ্চাদের ইংরেজিতে কথা বলা না শিখিয়ে আগে শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলানো শেখানো উচিত। তাদের গড়তে হবে আদর্শ বাঙালি হিসেবে।

লতিফা আক্তার চুমকি, বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper