যেখানে দুর্ভোগের শেষ নেই
কক্সবাজার প্রতিনিধি
🕐 ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
নেই উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, খালের এপার থেকে ওপারে যাওয়ার জন্য নেই সেতুও। আর সেজন্য কেউ মারা গেলে মরদেহবাহী খাটিয়া মাথায় নিয়ে সাঁতার কেটে খাল পার হয়ে দাফন করতে হয় লাশ। এভাবে চলছে তাদের প্রত্যহিক জীবন। ফলে এ গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বলছিলাম কক্সবাজার রামু উপজেলার গর্জানিয়া ইউনিয়ন ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ‘থোয়াংগেরকাটা শিয়াপাড়া’ গ্রামের কথা। সীমান্তবর্তী গ্রাম হওয়ায় সেখানে এখনো পর্যন্ত উন্নয়নের হাওয়া লাগেনি। যার ফলে উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে অবহেলিত হচ্ছে সেই গ্রামের বাসিন্দারা।
সম্প্রতি স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধার মরদেহবাহী খাটিয়া মাথায় নিয়ে খালে সাঁতার কেটে দাফন করতে নিয়ে যাওয়ার একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি মরদেহবাহী খাটিয়া নিয়ে খাল পার হচ্ছেন মানুষ। এই চিত্রটি অন্য সবার কাছে আলাদা মনে হলেও ‘থোয়াংগেরকাটা শিয়াপাড়া’ গ্রামের মানুষের নিত্য দিনের চিত্র এটি।
জানা যায়, শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় মারা যান মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ মুজারো। পরদিন শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পারিবারিক কবরস্থানসংলগ্ন মসজিদ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদ মাঠে মরদেহ আনতে খাটিয়া মাথায় সাঁতার কেটে খাল পার হতে হয় স্বজনদের।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, বান্দরবানের সীমান্তবর্তী ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় গ্রামটি অবহেলিত। দীর্ঘদিন এলাকাবাসী এখানে সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও তা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেননি জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এখানে দুই পারের হাজার হাজার মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের কারণে পানিভর্তি থাকে খাল। ফলে বর্ষা ও শুষ্ক উভয় মৌসুমে মরদেহ নেয়া এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ে গ্রামবাসী।
গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আবদুল জব্বার বলেন, মোজাফ্ফর আহমদের পুরো পরিবারের শিয়াপাড়ার গর্জনিয়ায় আদিবাস হলেও তিনি বাইশারী সীমানার নারিশবুনিয়া অংশে আবাসন গড়েছেন। সেখানে মারা গেলেও বাপ-দাদা ও স্বজনদের সঙ্গে সমাহিত করতে তাকে গর্জনিয়ায় আনা হয়। মরদেহ আনতে এলাকার হরিণখাইয়া নামক খাল পার হতে গিয়ে বিপাকে পড়েন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। কারণ খালের ওপর স্থানীয়দের উদ্যোগে তৈরি করা সাঁকো থাকলেও মরদেহ নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। বাধ্য হয়ে খালের পানিতে সাঁতরে খাটিয়া মাথায় মরদেহ পার করতে হয়।
আবদুল জব্বার মেম্বার বলেন, দীর্ঘদিন যোগাযোগের পর কয়েক মাস আগে রামু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের একজন প্রকৌশলী এ স্থান পরিদর্শন করেন। এরপরও কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
রামু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসউদ রানা সায়েম বলেন, হরিণখাইয়া খালের স্থানটি দুই মাস আগে দেখতে গেছি। কিন্তু ওখানে সংযোগ সড়ক নেই। ফলে বিধি অনুযায়ী সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে খালের দু’পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে সেতু নির্মাণ সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে গর্জনিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। খুদেবার্তা পাঠিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলেও কোনো উত্তর দেননি চেয়ারম্যান নজরুল।
একইভাবে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি কক্সবাজার-৩ আসনের এমপি সাইমুম সরোয়ার কমল।