ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বগুড়া-১ আসনে উপনির্বাচন

নৌকার প্রার্থী সাহাদারা মান্নান, চূড়ান্ত হয়নি ধানের শীষ

তোফাজ্জল হোসেন, বগুড়া
🕐 ১০:০৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০

যমুনা ও বাঙালি নদী তীরবর্তী সারিয়াকান্দি এবং সোনাতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-১ আসনের উপ-নির্বাচন আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের তিনবারের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। অনেক জল্পনা-কল্পনার পর গত শনিবার আওয়ামী লীগের প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের সহধর্মিণী, সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য সাহাদারা মান্নানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে বিএনপির প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়ার এ আসনে এবার কে হচ্ছেন ধানের শীষ প্রার্থী, তা নিয়ে চলছে বিভিন্ন মহলে আলোচনা। মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে পাঁচজনের নাম শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করেছেন মনোনয়ন পাওয়ার জন্য।

বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার থেকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও সংগ্রহ করছেন দলীয় মনোনয়ন ফরম। পরবর্তী সময়ে মনোনয়ন বোর্ড ওই আসনের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে। এ আসনটির উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা হলেন-বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, সোনাতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. শাহ মো. শাহজাহান আলী, জিয়া শিশুকিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক শিশুবিষয়ক সম্পাদক মোশারফ হোসেন চৌধুরী, সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান প্রমুখ।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা এবং ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ও গোসাইবাড়ি ইউনিয়ন নিয়ে ৩৬ বগুড়া-১ আসন গঠিত। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৬৯ জন। এরমধ্যে সারিয়াকান্দি উপজেলায় এক লাখ ৭১ হাজার ৫৫১ জন ও সোনাতলা উপজেলায় এক লাখ ৪৬ হাজার ১৮ জন।

এ আসনে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ডা. হাবিবুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে ১৯৯১ সালে ছিলেন জামায়াতের মো. শাহাবুদ্দিন, ১৯৯৬ সালে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আবদুল মান্নান। ২০০১ সালের নির্বাচনে এক লাখ ৯৬ হাজার ৯৮৯ প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার ৩৮২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম। বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৭৪ হাজার ৬২২টি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রাপ্ত দুই লাখ ৫০ হাজার ১৪৪ ভোটের মধ্যে এক লাখ ২৭ হাজার ভোট পেয়ে নৌকার বিজয় ঘরে তুলে বিএনপির দুর্গে আঘাত হানেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মান্নান।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা মো. শোকরানা পান এক লাখ ২১ হাজার ৯৬৫ ভোট। ওই নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবদুল মান্নান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নৌকার বিজয় ঘরে তোলেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মোট প্রদত্ত ২ লাখ ৮৯ হাজার ১০৫ ভোটের মধ্যে নৌকার প্রার্থী আব্দুল মান্নান ২ লাখ ৬৮ হাজার ৭৬৮ ভোট পেয়ে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে কাজী রফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ১৬ হাজার ৬১৩ ভোট।

সাবেক এমপি কাজী রফিকুল ইসলাম জানান, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর এলাকার নদীভাঙন রোধ ও এলাকার সার্বিক উন্নয়নে তিনি ব্যাপক কাজ করেছেন। এই উপনির্বাচনে দল যাকে যোগ্য মনে করবে, তিনিই মনোনয়ন পাবেন। তিনি বলেন, মনোনয়ন পেলে এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করব।

জেলা বিএনপি নেতা এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির বলেন, ছাত্রদল থেকে বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। মামলায় জর্জরিত বিএনপির নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে দলকে শক্তিশালী ও এগিয়ে নিতে কাজ করছেন তিনি। দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন, এখনো আছেন এবং আগামী দিনেও থাকবেন। তিনি নিজেরসহ দলের অনেক নেতাকর্মীর মামলা পরিচালনা করছেন। তার বিশ্বাস, এবার তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি নির্বাচিত হবেন।

ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডা. শাহ মো. শাহজাহান আলী জানান, এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে রয়েছেন তিনি। বগুড়ায় তার ক্লিনিকে এবং এলাকায় গিয়ে গরিব দুস্থ মানুষের ফ্রি চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আশাবাদী এবার দলের মনোনয়ন পাবেন এবং নির্বাচিত হলে এলাকার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার উন্নয়ন এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে।

এদিকে সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. মতিউর রহমান মতি জানান, ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান নদীভাঙন দুই উপজেলার সার্বিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান মারা যাওয়ায় তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন এবং বিগত দিনের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এলাকার জনগণ এই উপনির্বাচনেও বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের সহধর্মিণী সাহাদারা মান্নানকে নির্বাচিত করবেন।

গত ১৮ জানুয়ারি বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দবদল মান্নান ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

এদিকে সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৯ মার্চ এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ ১ মার্চ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মার্চ, প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ৯ মার্চ এবং ভোটগ্রহণ করা হবে ২৯ মার্চ।

 
Electronic Paper