ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অনাথ কাব্যগ্রন্থ

সোহেল দ্বিরেফ
🕐 ১:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০

বইমেলা এলেই যেন আরিফের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা শুরু হয়! কয়েক বছর থেকে তাকে দেখছি বইমেলা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে। ঘোরাঘুরি করতে করতে কয়েকজন কবি, লেখক ও প্রকাশকের সঙ্গে পরিচয়ও হয়েছে। তাদের সঙ্গে থাকতে থাকতে নিজেকেও ও-রকম শ্রেণির কিছু একটা মনে করে। লেখালেখি করতে তাকে উৎসাহ দেয় বন্ধু রাহি।

গত বছরেও কথায় কথায় এক আড্ডায় রাহি তাকে বলেছিল, ‘তুই কবিতা লেখার চেষ্টা কর। তোর চেহারার মধ্যে একটা কবি কবি ভাব আছে। তাছাড়া অনেকের সঙ্গেই পরিচয় আছে। চেষ্টা করে দেখ। বই বের হবে তখন আমরা কিনব। তোকে প্রমোট করে ফেসবুকে পোস্ট করব।’
‘ওটা আমারও স্বপ্ন। কিন্তু লেখালেখি বললেই তো হয় না। সাধনা দরকার।’

‘বুদ্ধি আছে। সাধনার দরকার নেই। তোকে প্রেম করতে হবে। ছ্যাঁকা খেতে পারলেই তুই কবি! এবার আমার এক বন্ধুর কবিতার বই বের হয়েছে! প্রথমে সেও চেষ্টা করেছিল কবি হওয়ার জন্যে। অবশেষে প্রেম করে ছ্যাঁকা কবি হয়েছে!’

‘লেখার ভাবটা আসে না যে!’

‘তোর কি মন চায় না সেই দিন দেখতে যেদিন শত শত পাঠক তোর অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্যে লাইন দেবে, ছবি তুলতে চাইবে...।’

কয়েকমাস পেরিয়ে যায়। আরিফ এখনও প্রেম করার জন্যে মেয়ে বাগাতে পারল না। মাথায় একটাই চিন্তা, যেহেতু এপ্রিল মাস চলছে তাহলে তিন-চার মাস প্রেম করে তারপর দুই মাসের মতো দেবদাস হয়ে থাকতে হবে। তাহলে আস্তে আস্তে লেখা বেরিয়ে আসবে। আর ওসব লেখা একসঙ্গে করেই কবিতার বই বের করবে।

অবশেষে ছোটভাই মোস্তফার মাধ্যমে একটা প্রেমিকা জুটিয়ে ফেলল। মেয়ের নাম রানু। পড়ে ইডেন কলেজে। বয়সে আরিফের চেয়ে দু’বছরের ছোট। প্রেম শুরু হওয়ার আগেই যেন ভেঙে গেল! কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করার পর অজানা কারণে মেয়েটি তাকে ত্যাগ করে। মানসিকভাবে সে খুব কষ্ট পায়। তবুও ভেতর থেকে লেখা আসে না। কী মুশকিল!

সবার সঙ্গেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। একাকিত্বের দিনগুলোতে তার একমাত্র সঙ্গী খাতা-কলম! বহু চেষ্টা করে কিছু কবিতা লিখেছে। নিজের লেখা যতবারই পড়ছে ততবারই যেন মুগ্ধ হচ্ছে! তারপর লেখাগুলো বন্ধুদের দেখাল। তারাও তাকে অভয় দিয়ে বলে, অনেক ভালো হয়েছে। বই করতে সমস্যা নেই। শুনে আরিফের বুকটা যেন আনন্দে আটখানা হয়ে গেল! একপর্যায়ে তার বন্ধু রাহি বলে, ‘বইমেলাতে বই বের করতে হবে। তোকে আর রোখে কে! কবি বন্ধু আমার!’ বইমেলার দিনকাল ঘনিয়ে আসছে। টাকা ম্যানেজ করে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করা দরকার।

এদিক-সেদিক করে টাকা ম্যানেজ করে চুক্তিও করে ফেলেছে। বন্ধু মহলের সবাই এখন তাকে কবি বলে ডাকে। কেউ নাম ধরে ডাকে না। সে নিজেও ভাবে- বইটা সত্যিই হিট হচ্ছে!

বইমেলার দ্বিতীয় সপ্তাহে এল তার বই। নাম রেখেছে ‘কী পেলে আমায় কাঁদিয়ে’। প্রথম বই বলে কথা, হলুদ পাঞ্জাবি পরে সে এখন প্রতিদিন মেলায় যায়। রাত করে ফেরে। যে বন্ধুগুলো খুব উৎসাহ দিয়েছিল তারা কেউ পাশে নেই! ব্যস্ততা দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে!

আরিফ সকালে খুব আশা নিয়ে বের হয়, রাতে শুকনো মুখ নিয়ে হলে ফেরে। পরিচিতরা জিজ্ঞেস করে, ‘কি রে কবি, বই কেমন চলছে?’
আরিফ কোন উত্তর দিতে পারে না। আজ মেলার ২৭তম দিন। এখনো এক কপি বই বিক্রি হয়নি! কেউ এসে বইটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলে ভাবতে থাকে- এবার হয়ত ক্রেতা পাওয়া গেল! আমিও অটোগ্রাফ দেব, ছবি তুলব।

আরিফের পাশেই লেখকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন অটোগ্রাফ এবং ফটোগ্রাফ নিয়ে! মেলা শেষ তবুও তার মুহূর্তটা এল না। একটা অটোগ্রাফ বা একটা ফটোগ্রাফ কিছুই না! প্রকাশক সমুদয় বই বুঝিয়ে দিলে সেগুলো নিয়ে ফিরে আসার সময় তার চোখ জোড়া থেকে উপচে পানি পড়তে থাকে। মনে মনে ভাবে- দুষ্ট বন্ধুদের কথা শুনে আর কখনো কবি হতে চাইব না!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper