ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

সুধীর বরণ মাঝি
🕐 ১২:৩০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০

উদ্দীপক : সিনথিয়া বাবা-মায়ের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে যায়। সন্ধ্যাবেলা পূর্ণিমার আলোয় সমুদ্রের শান্তরূপ দেখে তারা মুগ্ধ হয়। কিছুক্ষণ পরে তারা লক্ষ করে, সমুদ্রের পানি ফুলে উঠেছে এবং তীরে প্রচণ্ডবেগে আছড়ে পড়ছে। বাবা তাকে ভীত হতে নিষেধ করেন এবং বলেন, সমুদ্রে এরূপ অবস্থা নিয়মিত ঘটে।

ক) জোয়ার- ভাটা কয়টি? খ) কেন্দ্রাতিগ শক্তি কী ? ব্যাখ্যা কর। গ) সমুদ্রের পানিতে ওই সময়ে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তার কারণ ব্যাখ্যা কর। ঘ) মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর সিনথিয়ার দেখা ঘটনাটির প্রভাব আছে কি? বিশ্লেষণ কর।
ক) উত্তর : জোয়ার-ভাটা ২টি ।
খ) উত্তর : পৃথিবী তার অক্ষরেখা বা মেরুদণ্ডের ওপর থেকে চারদিকে দ্রুতবেগে ঘুরছে বলে তার পৃষ্ঠ থেকে তরল জলরাশি চতুর্দিকে ছিটকে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। একেই কেন্দ্রাতিগ শক্তি বলে। পৃথিবী ও চন্দ্রের আবর্তনের জন্য ভূপৃষ্ঠের তরল ও হালকা জলরাশির ওপর কেন্দ্রাতিগ শক্তির প্রভাব অধিক হয়। এর ফলেই জলরাশি সর্বদা বাইরে নিক্ষিপ্ত হয় এবং তরল জলরাশি কঠিন ভূ-ভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়। এমনিভাবে কেন্দ্রাতিগ শক্তিও জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

গ) উত্তর : সিনথিয়া বাবা-মায়ের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে যায়। সন্ধ্যাবেলা পূর্ণিমার আলোয় সমুদ্রের শান্তরূপ দেখে তারা মুগ্ধ হয়। কিছুক্ষণ পরে তারা লক্ষ করে, সমুদ্রের পানি ফুলে উঠেছে এবং তীরে প্রচণ্ডবেগে আছড়ে পড়ছে। ওই সময়ে পানিতে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা জোয়ারের তাণ্ডব ব্যতীত অন্যকিছুই নয়। প্রাচীনকালে জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে নানা ধরনের অবাস্তব কল্পকাহিনী প্রচলিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবীর আবর্তনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ শক্তি এবং পৃথিবীর ওপর চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণে জোয়ার-ভাটা হয়। অমাবস্যা তিথিতে চন্দ্র ও সূর্য পৃথিবীর এক পাশে এবং পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবীর এক পাশে চন্দ্র ও অপর পাশে সূর্য অবস্থান করে। ফলে দুই তিথিতে চন্দ্র ও সূর্য সমসূত্রে থাকে এবং উভয়ের মিলিত আকর্ষণে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয়। আর সিনথিয়া যখন বাবা-মায়ের সঙ্গে কক্সবাজারের সমুদ্র তীরে যায় তখনো ছিল পূর্ণিমা তিথি। তাই পূর্ণিমার জোয়ারই ছিল সমুদ্রের পানিতে প্রতিক্রিয়ার কারণ।

ঘ) উত্তর : পৃথিবী তথা স্থলভাগ, পানি রাশি ও মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর জোয়ার-ভাটার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। দৈনিক দুবার জোয়ার-ভাটার ফলে নদীর আবর্জনা পরিষ্কার হয়ে পানি নির্মল হয় এবং নদীর মোহনায় পলি সঞ্চিত হয় না। ফলে নদীর মুখ বন্ধ হতে পারে না। জোয়ার-ভাটার স্রোতে নদী খাত গভীর হয়। অনেক নদীর পাশে খাল খনন করে জোয়ারের পানি আটকে জমিতে সেচ দেওয়া হয়। পৃথিবীর বহু নদীতে ভাটার স্রোতকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। যেমন- ফ্রান্সের লার‌্যান্স বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভারতের বান্ডালা বন্দরেও এরূপ একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সমুদ্রের লবণাক্ত জলকে আটকে রেখে লবণ চাষ করা হয়।

জোয়ার-ভাটায় সমুদ্রের লবণাক্ত জল দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার ফলে শীতপ্রধান দেশে নদীর পানি চলাচলের অনুকূলে থাকে। জোয়ারের সময় নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রগামী বড় বড় জাহাজ অনায়াসেই নদীতে প্রবেশ করে আবার ভাটার টানে সমুদ্রে চলে আসে। বন্দরে প্রবেশের আগে জোয়ারের অপেক্ষায় জাহাজগুলো নদীর মোহনায় নোঙর করে থাকে। জোয়ার-ভাটার ফলে জমিতে পলি সঞ্চিত হয়ে জমিকে উর্বর করে তোলে এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। জোয়ার-ভাটার ফলে মাছের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। অতএব মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর সিনথিয়ার দেখা ঘটনাটি অর্থাৎ সামুদ্রিক জোয়ারের সহায়ক প্রভাব রয়েছে।

সুধীর বরণ মাঝি
শিক্ষক হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper