সোনা ঝরা সোনাঝুরি
খান মো. শাহনেওয়াজ
🕐 ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০
কাষ্ঠল ও পোক্ত কাণ্ড হওয়া সত্ত্বেও অপরকে আশ্রয় করে লতিয়ে বেড়ে উঠে তাক লাগিয়ে দেয় সোনাঝুরি। তাই বাগানি ও বৃক্ষপ্রেমীদের মন ভরাতে আর বাড়ির আঙিনা ও ভবনের সৌন্দর্য বাড়াতে সোনাঝুরি ফুলের জুড়ি নেই। একে কমলা সুন্দরী ফুলও বলা হয়।
এটি মূলত লতা গাছ ও নাম সোনাঝুরি লতা। বহু শাখাযুক্ত, বহুপত্রী ও গাঢ় সবুজ। ফুল ফোটার প্রথমদিকে হয় হালকা কমলা রঙ এবং ধীরে ধীরে গাঢ় ও উজ্জ্বল লালচে-কমলা রঙ ধারণ করে। উজ্জ্বল অথচ কোমল ও মিষ্টি রঙ সহজেই নজর কেড়ে নেয়, চোখ জুড়িয়ে দেয়, অসাধারণ আবেদন তৈরি করে।
সোনাঝুরি ফুল তিন ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। থোকা ধরে ফোটে। ঝুলন্ত মঞ্জরির ফুল নল আকৃতির। একটি থোকায় সাধারণত ১৫ থেকে ২০টি ফুল থাকে। পরাগধানী ছোট টিউবের মতো এবং ফুল থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। ফুলের থোকা বেশির ভাগ আনত হয়ে ঝুলে থাকে। ঝাঁকড়া গাছ থোকা থোকা ফুলে ছেয়ে যায়। আমাদের দেশে শীতের শুরুতে ফুল আসে এবং বর্ষাকাল পর্যন্ত ফোটে।
গাছ অত্যন্ত দর্শনীয় হওয়ায় এবং ফুলের আকৃতি ও রঙ অত্যন্ত মনোরম হওয়ায় সোনাঝুরি লতা বাড়ির আঙিনা ও ভবনের সীমানা দেয়ালে সহজেই স্থান করে নেয়। রাজধানী ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকায় চোখের সামনেই মেলে এই গাছ। বিশেষ করে ধানমন্ডি এলাকায় পুরনো অনেক বাড়িতে আছে সোনাঝুরি লতা। রমনা গ্রিনে, মিরপুর চিড়িয়াখানা এবং তার পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেনে সোনাঝুরির দেখা পাওয়া যায়। বিভিন্ন শহরে দৃষ্টিনন্দন ভবনকে আরও দৃষ্টিনন্দন করে রেখেছে এই গাছ। এমনকি গ্রামেও ধনাঢ্যদের বাড়িতে আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে শোভা পায় সোনাঝুরি লতা।
এই লতার গোড়ার দিকে কাণ্ডের ব্যাস দেড় ইঞ্চি বা তারও বেশি হয়ে থাকে। কাণ্ড কাঠ কাঠ অর্থাৎ কাষ্ঠল এবং নমনীয়। পরাশ্রয়ী হয়ে লতিয়ে ওঠে ও অনেক বড় হয় এবং ৭৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। বাড়ির বেড়া, সীমানা প্রাচীর, অন্য কোনো গাছ বা ভবনের দেয়ালকে অবলম্বন করে এই গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে।
সোনাঝুরি লতার ইংরেজি নাম ফ্লেম ভাইন। বৈজ্ঞানিক নাম পাইরোস্টেজিয়া ভেনুসতা। সোনাঝুরি লতা সূর্যালোকে এমনকি ছায়াযুক্ত স্থানেও বেড়ে ওঠে। পরিচর্যার প্রয়োজন তেমন পড়ে না, বাঁচে বহু বছর। এ কারণে বাগানের শোভাবর্ধনকারী গাছ হিসেবে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়। নার্সারিগুলোতে কমলা সুন্দরী নামে এর চারা বিক্রি হয়।